পুলিশ বক্সে ফুচকার দোকানের মালামাল!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার বিট পুলিশ বক্সটিতে নিজেদের দোকানের মালপত্র রাখছেন রাস্তার ফুচকা-চটপটি ব্যবসায়ীরা। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের লেকপাড়ে গাউসুল আজম সড়কে পশ্চিম থানার বিট এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে এই বক্সটি নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, চালু হওয়ার পর কিছুদিন বক্সটিতে নিয়মিত কিছু পুলিশ সদস্যকে দেখা যেত। কিন্তু এখন আর সেখানে পুলিশের কাউকে দেখা যায় না।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিট পুলিশ বক্স মূলত বিট এলাকার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনায় পুলিশের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প। তা ছাড়া বৃষ্টি বা রোদে পুলিশ সদস্যদের আশ্রয়ের জায়গা হিসেবেও ‘বিট পুলিশ বক্স’ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, পুলিশের কাজ অবৈধ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের মাধ্যমে রাস্তা দখলমুক্ত করে জনগণের চলাচলের জন্য উপযোগী করে তোলা। অথচ রাস্তার অবৈধ দোকানিরাই কিনা উল্টা পুলিশ বক্সে তাঁদের দোকানের মালপত্র রাখছেন! তাঁদের প্রশ্ন, তাহলে ফুটপাতের দোকানিরাই কি পুলিশকে হটিয়ে বক্সটি দখলে নিয়ে নিলেন? নাকি পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুলিশ বক্সেই নিরাপদে তাঁদের জিনিসপত্র রাখছেন?

লেকপাড়ের ফুচকা বিক্রেতা মামুন মিয়া বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই বক্সটি কেউ ব্যবহার করছিলেন না। ময়লা-আবর্জনায় ভরে ছিল। আমরা সেটা পরিষ্কার করে দোকানের কিছু জিনিস রাখি।’ জিনিস রাখতে পুলিশকে কোনো টাকাও দিতে হয় না বলে তিনি জানান।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ বক্সে লেকপাড়ের সেতুতে অবৈধভাবে বসানো চটপটি ও ফুচকার একাধিক দোকানে ব্যবহৃত চেয়ার, ফোল্ডিং টেবিল, কেরোসিনের স্টোভ, পানি রাখার পাত্র ইত্যাদি জিনিস ও মালপত্র রাখা হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে এই জিনিসগুলো বাইরে এনে লেকপাড়ের সেতু ও গাউসুল আজম সড়কের দুই পাশে নিজেদের দোকান সাজান ব্যবসায়ীরা।

উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দাদের গাউসুল আজম অ্যাভিনিউর ওই অংশ দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। সেক্টরটির একাধিক বাসিন্দা জানান, সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত লেকপাড়ের সেতুর দুই দিকে এবং সড়কে উভয় পাশে ফুচকা-চটপটির ১০-১৫টি দোকান বসে। একেকটি ফুচকার দোকান রাস্তায় প্রায় ৫০টি চেয়ার বসায়। চেয়ারগুলো রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত চলে আসে।

১৩ নম্বর সেক্টরের মো. মোতাহার হোসেন বলেন, দোকানিরা রাস্তা দখল করে চেয়ার-টেবিল বসান। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর গন্তব্যে যেতে সড়কটি ব্যবহার করলে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হয়।

অভিযোগ আছে, পুলিশ কোনো পরিকল্পনা না করেই যেখানে-সেখানে এ ধরনের অস্থায়ী বক্স তৈরি করছে। শহরে এ রকম অব্যবহৃত আরও পুলিশ বক্স থাকা বিচিত্র নয়। পুলিশ বক্স শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের দেয়াল হয়ে উঠছে এবং রাস্তার দৃশ্যমানতায় বাধা সৃষ্টি করছে।

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন বলেন, বিট পুলিশ কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত পুলিশ বক্সগুলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উঠিয়ে দিচ্ছে। শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে তারা জানায়। গাউসুল আজম সড়কের বিট পুলিশ বক্সের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আমরা আর ব্যবহার করছি না।’ ওসি আরও বলেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম দেয়াল পাকা করে পুলিশ বক্স নির্মাণ করতে। কিন্তু সিটি করপোরেশন অনুমোদন দিচ্ছে না।’

 

 

প্রথম আলো