পুলিশের গুলিতে’ নিহত মেয়ে, ঘটনার বর্ণনা দিলেন বাবা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

কয়েকবার গুলির শব্দ, পরে দেখি মাথার খুলি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আমার মেয়ের রক্তাক্ত দেহ মাটিতে পরে আছে। পুলিশের গুলিতে ৯ মাস বয়সী শিশু সুরাইয়ার মারা যাওয়ার ভয়াবহ ঘটনা বলছিলেন বাবা বাদশাহ মিয়া।তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘১৯৬৮ সালে বন্যায় আমাদের জমি-জায়গা হারিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারি থেকে বাবা-মার সঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে আসি আমি।

এখানে বাঁচোর ইউনিয়নের মীরডাঙ্গী দীঘি পাহাড় এলাকায় অন্যের জমিতে বসবাস করছি। ঝালমুড়ি বিক্রি করে বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ভালোই চলছিল আমাদের। হঠাৎ গত ২৭ জুলাই সুরাইয়ার মৃত্যু আমার পরিবারে অন্ধকার নেমে এসেছে।’

ঘটনার ১৩ দিন পার হলেও সন্তান হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সবচেয়ে আদরের সন্তানকে হারিয়ে এখনো শোকে পাথর মা মিনারা বেগম। বাবা বাদশাহ মিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলেও মা মিনারা বেগম, দাদি জাহেদা খাতুন চাপা কান্নায় দিন কাটছে তাদের।

নিহত সুরাইয়ার মা মিনারা বেগম জানান, গত ২৭ জুলাই বিকালে ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শিশু সুরাইয়াকে কোলে নিয়ে তিনি ভোট দিতে যান। ভোট দেওয়া শেষে কেন্দ্র থেকে ৩০০ গজ দূরে ফুফু শাশুড়ির বাড়িতে স্বামীর জন্য মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

সে সময় ভোটের ফলাফলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা শুরু হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেয়েকে নিয়ে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ভোটকেন্দ্র থেকে পুলিশের পিকআপ বের হতে দেখে তিনি থেমে যান।

তিনি আরও বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে মসজিদের সামনের রাস্তায় দাঁড়ানো ছিল পিকআপটি। এ সময় গাড়ির আশেপাশে লাঠি হাতে দাঁড়ানো ছিল বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা। ভোটের ফলাফল মানি না এই দাবিতে একটি গাড়ি থামিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। এ সময় আমার কোলে থাকা অবস্থায় সুরাইয়ার মাথায় গুলি লাগে। সন্তানের রক্তাক্ত মাথা দেখে আমি বেসামাল হয়ে ছোটাছুটি করি। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে যাই।’

নিহত সুরাইয়ার বাবা বাদশাহ মিয়া বলেন, ‘লোকজনের মুখে শুনতে পারি একজন মারা গেছে। কে মারা গেছে কেউ বলতে পারছে না। তখন আমি সামনে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মাথার একটা অংশ নাই। মেয়ের এই অবস্থা দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। ঘটনার ১২ দিনেও আমার মেয়েকে কে মারল জানতে পারলাম না। প্রশাসনের লোকজন এসে এখনো বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন। ছোট্ট মেয়েকে ভোটের কারণে হারালাম, এমন ভোট আমরা চাই না। কোনো মায়ের বুক যেনো আর খালি না হয় এটাই অনুরোধ।’

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল জানান, নির্বাচনি সহিংসতায় অজ্ঞাতনামা ৮০০ জনকে আসামি করে থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনো তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই রাণীশংকৈল উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। শিশু সুরাইয়াকে নিয়ে মা মিনারা বেগম রাণীশংকৈল ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল দেখতে যান। ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র ভোটকেন্দ্রে পরাজিত ইউপি সদস্যের সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় শিশু সুরাইয়া ।

সূত্র: আমাদের সময়