পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ যে মেলায়

                                                                                                                   ফাইল ছবি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

বগুড়ার গাবতলীতে প্রতি বছর পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা শেষে বৃহস্পতিবার ‘বউ মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ এলাকায় ইছামতি নদীর তীরে এ মেলা বসে।

মেলার ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই নারী। ফলে বিভিন্ন বয়সের নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় ঘুরে ঘুরে প্রসাধনীসহ তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনেন। তবে বউ মেলায় পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।

৩০তম মেলায় প্রচুর নারীর সমাগম ঘটে। সকালের দিকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাতে কিছুটা সময় মেলার ছন্দপতন ঘটেছিল।

আয়োজকরা জানান, গত ৩শ বছরের মতো মাঘের শেষ বুধবার পোড়াদহ এলাকায় একদিনের সন্ন্যাসী ও জামাই মেলার আয়োজন করা হয়। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ও নির্দেশ উপেক্ষা করে মহাসমারোহে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা চলে। মেলার প্রধান আকর্ষণ বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা বন্ধ থাকায় জনগণ কিছুটা হলেও হতাশ হন।

তারপরও গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় হরেক প্রজাতির বড় বড় মাছ কেনাবেচা হয়েছে। বিক্রি হয়েছে কয়েক টন মিষ্টান্ন, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের খাবার, কুল বরই, গরু, ছাগল ও মহিষের গোশত। মেলায় আগতরা প্লেট ভরে মিষ্টি, ফুচকা, চটপটি, গরুর পায়ার নেহেরীসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা প্রাঙ্গণে বসে ‘বউ মেলা’। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বাড়িতে আসা আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় বিভিন্ন বয়সের নারীরা দোকানগুলোতে ভিড় করেন।

নারীদের পাদচারণায় মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠে। তারা নারী দোকানিদের কাছে সংসারের নানা তৈজসপত্র, নিজেদের প্রসাধনী, গার্মেন্টস সামগ্রী, চুড়ি, ফিতা, দুল, ক্লিপ, আলতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনেন। এছাড়া তারা সঙ্গে আনা সন্তানদের জন্যও খেলনা ও খাদ্য সামগ্রী কেনাকাটা করেছেন।

গাবতলীর মহিষাবান গ্রামের গৃহবধূ শ্রাবণী আকতার বানু জানান, গত ১৫ বছর আগে বগুড়া শহরে বিয়ে হয়েছে। প্রতি বছরই মেলার আগে স্বামী, সন্তান, শাশুড়ি, ননদ ও অন্যদের নিয়ে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসেন। তিনি গত বুধবার স্বামীর সাথে সন্ন্যাসী মেলায় এসে মিষ্টি, মাছ, আচার, কুলসহ বিভিন্ন পণ্য কিনেছেন।

বৃহস্পতিবার ‘বউ মেলা’য় এসেছেন নিজের, মেয়ের, বোনের ও ননদের জন্য কিছু কিনতে। তিনি চুড়ি, ফিতা, মাথার ব্যান্ড, নেইলপলিস, লিপস্টিক ও মেয়ের খেলনা কিনেছেন। তিনি আরও জানান, এ মেলায় দোকানিরা নারী হওয়ায় তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারেন।

হাতিবান্ধী গ্রামের হাজী শাহজাহান আলীর মেয়ে বগুড়া কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আকতার তিন বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে ‘বউমেলা’য় এসেছেন। তিনি জানান, মেলার কারণে শহর থেকে তিন বান্ধবীকে দাওয়াত করে নিয়ে এসেছেন। তারা মেলায় ঘোরাঘুরি শেষে নিজেদের জন্য কিছু প্রসাধন সামগ্রী কিনবেন।

রঞ্জনা খাতুন (৪৮) নামে এক দোকানি জানান, তার বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলায়। গত ৩০ বছর ধরে তিনি ‘সন্ন্যাসী’ ও ‘বউ মেলা’য় কসমেটিক্সের দোকান দিয়ে থাকেন। সঙ্গে তার বৃদ্ধ স্বামী হারুনার রশিদও এসেছেন। তিনি জানান, দুই দিনের মেলায় অন্তত ৫০ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি করেন।

‘বউ মেলা’ আয়োজক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জানান, এবারের ৩০তম মেলায় প্রায় ২০০ দোকান বসেছে। দোকানগুলোতে নারীদের সব প্রসাধনী, তৈজসপত্র, বাচ্চাদের খেলনা ও ঘর সাজানোর সামগ্রী বিক্রি হয়েছে। মেলায় পুরুষদের প্রবেশাধিকার না থাকায় নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করে থাকেন। তবে এবার কিছু দোকানে নারী বিক্রেতার সঙ্গে তাদের স্বামীরা সহযোগিতা করেছেন। তাই কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সন্ধ্যার দিকে মেলা শেষ হয়ে যায়।

সূত্র:যুগান্তর