পুঠিয়ায় শ্রমিক নেতা নুরুল হত্যায় মামলা দায়ের, অন্ধকারে হত্যার রহস্য

পুঠিয়া প্রতিনিধি: রাজশাহীর পুঠিয়ায় শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামকে হত্যা করে লাশ ইটভাটায় ফেলে রাখার ঘটনায় তার মেয়ে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে ঘটনার ৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও হত্যার আসল রহস্য উদঘাটন করা এমনকি হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে শ্রমিক নেতার মৃত্যুতে উপজেলা জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যে স্বাভাবিক নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা দেখা দেয়া ছাড়াও চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নিহত নুরুল ইসলাম (৬৫) রাজশাহী জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন পুঠিয়া শাখার সদস্য ও সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জিউপাড়া ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামের মৃত কালু সরদারের ছেলে। গত ১০ জুন রাতভর নিখোঁজের পর পরেরদিন সকালে একটি ইটভাটায় তার লাশ পাওয়া যায়।
নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত (১০ জুন) মঙ্গলবার সন্ধ্যার পূর্বে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে শ্রমিক অফিস সংলগ্ন মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। এরপর তাকে অনেকে পুঠিয়া শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত চা স্টলে চা পান করতে দেখেছেন। তবে সেখান থেকে উঠে যাওয়ার পরেই তিনি নিখোঁজ হন। এসময় তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। পরের দিন সকাল ১০ টায় তার মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেলে দুপুরে শ্রমিক অফিস সংলগ্ন আশরাফের ইটভাটার দক্ষিণ পশ্চিম কর্ণারে উপুর করা অবস্থায় নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ জানায়, নিহত নুরুল ইসলামের মরদেহ উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে ১১ জুন সন্ধ্যায় পারিবারিকভাবে জানাযা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়। মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহৃ পাওয়া যায়। মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাতের চিহৃ রয়েছে। এমনকি অণ্ডকোষ পর্যন্ত থেতলানোর চিহ্ন। ধারণা করা হচ্ছে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তার অণ্ডকোষ চেঁপে ধরে এবং শরীরে ও মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেছে। আলামত হিসেবে মরদেহের পাশ থেকে নুরুল ইসলামের মোবাইল ফোন ও চশমা জব্দ করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে থানায় গত ১১ জুন মধ্যরাতে ভিকটিমের মেয়ে নিগার সুলতানা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলার এজাহারে দাবি করা হয়েছে, গত ২৪ এপ্রিল সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন পুঠিয়া শাখার ত্রিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নুরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। সে নির্বাচনে তাকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করায় তিনি সে ফলাফল বাতিল চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এনিয়ে শ্রমিক সংগঠনের বর্তমান সাধারন সম্পাদক আবদুর রহমান পটলের সঙ্গে নুরুল ইসলামের প্রকাশ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। আবদুর রহমান পটলসহ সন্দেহভাজন আরো পাঁচজনের নাম উল্লেখ্য করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
পুঠিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা আফসার আলী বলেন, কারো সাথে তার এমন কোন শত্রুতা থাকার কথা না যাতে তাকে জীবন দিতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে তিনি হত্যার আসল রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে বর্তমানে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা সবসময় ভয় নিয়ে চলাচল করছেন। সন্ধ্যার আগেই মানুষ যার যার বাসায় ফেরার চেষ্টা করছেন। তারা বলছেন, নুরুলের মত একজন ভালো মানুষ যদি এমনভাবে খুন হন, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। কেন তাকে হত্যা করা হল সে ব্যাপারে তিনি বলেন, হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।
স/শা