পুঠিয়ায় যুবলীগ নেতার নামে পর্ণগ্রাফি’র মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সেই নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর পুঠিয়ার যুবলীগ নেতার সঙ্গে অশ্লীল ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় মামলা করে ভুক্তভোগী নারী অব্যাহত হুমকিরমুখে এখন হুমকির মুখে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই যুবলীগ নেতার নাম সুমনুজ্জামান সুমন। তিনি পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদিউজ্জামানের ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। সুমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের উচ্চমাণ সহকারী পদেও কর্মরত রয়েছেন। তবে ঘটনার পর থেকে সুমন পলাতক রয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

এদিকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ওই নারীর সঙ্গে সুমনের অশ্লিল ভিডিও প্রকাশের পরে লোকলজ্জার ভয়ে সনাতনধর্মবলাম্বি ভূক্তভোগী নারীকে (৩৮) তাঁর বাবাও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। ওই নারীর নিকট থেকে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আরও টাকার দাবিতে সুমন নিজেই ওই ভিডিওটি ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় ওই নারী গত ২৯ সেপ্টেম্বর পুঠিয়া থানায় পর্ণগ্রাফি আইনে একটি মামলা করেন সুমনকে একমাত্র আসামি করে। কিন্তু পুলিশ অদৃশ্য কারণে এখনো সুমনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এই সুযোগে সুমনের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য বাদীকে অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

গতকাল বুধবার ওই ভূক্তভোগী ওই নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে ওরা (সুমনসহ তাঁর বাপ-ভাই) আর বাঁচতে দিবে না দাদা। ওদের ভয়ে আমি এখন বাড়িছাড়া। বাবাও বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন ওইভিডিও প্রকাশের পর। একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতাম তারাও সেখান থেকে বের করে দিয়েছেন। এখন আমি যাবো কোথায়?’

ওই নারী বলেন, ‘ওদের ভয়ে প্রকাশ্যে ঘুরতেও পারছি না। প্রয়োজনে মানুষের বাড়িতে কাজ করে হলেও নিজের সন্তানকে নিয়ে পেটের খাবার সংগ্রহ করবো সেই উপায়ও নাই। আবার এখনো নানা জনের মোবাইলে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই ভিডিও। এই অবস্থায় আমি বাঁচবো কি করে?’

ভূক্তভোগী ওই নারী আরও জানান, প্রায় ১১ বছর আগে কুষ্টিয়ায় বিয়ে হয়েছিল তাঁর। তাঁদের সংসারে দুটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। এর মধ্যে বড় ছেলেটির বয়স ১০ বছর আর ছোটটির ৫ বছর। কিন্তু একপর্যায়ে তাঁর স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে চরম নির্যাতন শুরু করেন ওই নারীকে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তিনি স্বামীকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। স্বামীর বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলাও করেন তিনি। ওই মামলার তদবিরে গিয়ে দুই বছর আগে সুমনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পরিচয়ের পর ওই নারীকে নানাভাবে ফুসলিয়ে তাঁকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন সুমন। আর সেই দৃশ্য সুমন নিজেই তাঁর মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। এর পর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার নাম করে ওই নারীর নিকট থেকে কয়েক দফায় ৭ লাখ টাকাও নিয়েছেন সুমন। নিজের গহনা বিক্রি করে সেই টাকা সুমনের হাতে তুলে দেন তিনি। সম্প্রতি আরও দুই লাখ টাকা না দিলে ওই নারীর সঙ্গে সুমনের অশ্লিল ছবি ও ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। কিন্তু ওই নারী আর টাকা জোগাড় করতে না পারায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর সমুন নিজেই সেই ভিডিও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর পুঠিয়া থানায় একটি মামলা করেন ভূক্তভোগী ওই নারী।

এদিকে জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ বলেন, ‘সংগঠনে অপরাধীর কোনো ছাড় নেই। বিষয়টি আমরা অবগত আছি। তার বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণ হলে সংগঠন থেকে তাকে বহিস্কার করা হবে।

জানতে চাইলে সুমনের বাবা বদিউজ্জামানকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তাঁর বড় ভাই ও রাজশাহী জেলা পরিষদের সদস্য মাসুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ওই মেয়েকে হুমকি দিচ্ছি এই ধরনের কোনো প্রমাণ সে দিতে পারবে না। তবে আমার ভাই যদি অপরাধ করে থাকে, আইনে যা হবে সেটি মেনে নিব।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহরোয়ারর্দী হোসেন বলেন, ‘মামলা রেকর্ডের পরে আসামি গ্রেপ্তারের তৎপরতা চলছে। অচিরেই তিনি ধরা পড়বেন। যাঁরা হুমকি দিচ্ছেন, প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু আসামি মোবাইল পরিবর্তন করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।’

জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা সুমনকে গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলাচ্ছি। তবে মেয়েটিকে যদিও এখনো হুমকি দিয়ে থাকে, তাহলে সে অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’

স/আর