পুঠিয়ায় ভুল অপারেশনে মৃত প্রসুতি মায়ের জীবনের মুল্য ১ লাখ টাকা

পুঠিয়া প্রতিনিধিঃ

রাজশাহীর পুঠিয়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ডাক্তারের ভুল অপারেশনে বিউটি খাতুন (২০) নামের এক প্রসুতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নবজাতকটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে কোথাও অভিযোগ না করার শর্তে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিমাংশা করেছেন।

গত রোববার উপজেলা সদরে অবস্থিত জনসেবা ক্লিনিক নামের বেসরকারী হাসপাতালে এঘটনা ঘটে। মৃত বিউটি খাতুন (২০) উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের সেলিম রেজার স্ত্রী। পরেরদিন গত সোমবার সকালে মৃত বিউটি খাতুনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই ধোপাপাড়া গ্রামে তার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

এঘটনার পর ক্লিনিক মালিক বুলবুল আহম্মেদ দাবী করেন, অপারেশন করেছেন ডাক্তার ফয়সাল শাহনেওয়াজ।

তবে ডাক্তার ফয়সাল শাহনেওয়াজ বলেন, অপারেশন তিনি করেননি এমনকি বুলবুল আহম্মেদকে তিনি চেনেনও না।

নিহতের স্বামী সেলিম রেজা জানান, প্রসব ব্যথা উঠলে গত রোববার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১২ টার দিকে জনসেবা ক্লিনিকে বিউটি খাতুনকে ভর্তি করে। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অপারেশন শেষে একটি কন্যা শিশু বের করে আনার পর হঠাৎ একটি চিৎকারে দিয়ে ওটি তেই মারা যায় তার স্ত্রী বিউটি খাতুন। আমার স্ত্রীর কি হয়েছে জানতে চাইলে অপারেশন কারী ডাক্তার কৌশলে রুগীকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানোর কথা বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, এর একটু পরেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ নবজাতক ও মৃত প্রসুতি মাকে মাইক্রোবাসে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এঘটনায় বিক্ষুদ্ধ জনতা ওই ক্লিনিকটিকে ঘিরে রাখে পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। কোন ডাক্তার অপারেশন করেছেন প্রসুতির পরিবারের কাছে জানতে চাইলে তারা ডাক্তারের নাম বলতে পারেনি। তবে কোন পরীক্ষা নিরিক্ষা না করেই তারা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্লিনিকে কর্মরত একজন কর্মচারি জানান, অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার পর প্রসুতি বিউটি খাতুনের সিজার করার সময় ভুল করে পেটের একটি লারি কেটে যায় এর পরেই রুগির খিচুনি শুরু হয়। পরে প্রসুতি ও নবজাতককে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে প্রসুতির মৃত্যু হয়।

এদিকে ভুল অপারেশনে প্রসুতি মৃত্যুর বিষয়টি ধামা চাপা দিতে মৃতের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিমাংশা করেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

এব্যপারে ক্লিনিক মালিক বুলবুল আহম্মেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফয়সাল নামের এমবিবিএস ডাক্তার রুগির অপারেশন করেছে। উনি কোন হাসপাতালের ডাক্তার জানতে চাইলে তিনি এর কোন সঠিক জবাব না দিয়ে ফোনে এসব কথা বলা যাবেনা বলে ফোন কেটে দেন। পরে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

তবে ডাক্তার ফয়সাল শাহনেওয়াজও অপারেশন করার কথা অস্বীকার করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, শোনা মাত্র ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো কিন্তু ভিকটিমদের এব্যপারে কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। তাদের কোন সার্পোট না পাওয়ায় ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, জীবনের চেয়ে টাকা টাই যেন তাদের বেশি প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। তবে খুব শিগরী ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ইউএনও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।

স/অ