রাজশাহীতে পুকুর খননকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, নারীসহ আহত ১০

পুঠিয়া প্রতিনিধি: রাজশাহীর পুঠিয়ায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিনফসলি জমিতে পুকুর খননকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী ও ব্যবসায়ী দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুকুর খননে বাঁধা দেওয়া অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নারীসহ তিনজনের শরীরে জখমের চিহ্ন রয়েছে।

পরে গ্রামবাসী এক হয়ে পুকুর খননকারীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। এ নিয়ে গ্রামজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বেলপুকুর থানা এলাকার অন্তর্গত কামার ধাদাস গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর আহতরা বেলপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও অভিযোগ না নিয়ে তাদেরকে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

গুরুতর আহতরা হলেন, উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের কামার ধাদাস গ্রামের মো. নিজাম উদ্দিন, রিপন আলী ও মোছা. আদরী বেগম। তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আহত বাঁকীদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাদের তিন ফসলি আবাদী জমি নষ্ট করে মিজানুর রহমান মিজু নামের এক ব্যবসায়ী ওই বিলে পুকুর খনন করতে যন্ত্রাংশ নিয়ে আসেন। বিষয়টি গ্রামবাসী থানা পুলিশকে জানালেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। পরে বাধ্য হয়ে গ্রামের নারী পুরুষ সবাই পুকুর খননকাজে বাঁধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের সামনেই পুকুর খননকারীরা দেশীয় অস্ত্র হাতে গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করেন।

জানা গেছে, মিজানুর রহমান মিজু নামের ওই ব্যক্তি বেলপুকুর ইউনিয়নের কামার ধাদাস গ্রামে অবস্থিত বিলের কয়েকজন কৃষককে হাত করে প্রায় শতাধিক হেক্টর তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটার চেষ্টা করে আসছিলেন। সে উদ্দেশ্যেই তিনি গত ১০ মে রাতের আধাঁরে ওই বিলে একটি এ্যাসক্যাভেটর নামালেও সে সময় স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পুকুর কাটার কাজ শুরু করতে পারেননি। পরে গত ১২ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান এর হস্তক্ষেপে পুকুরখনন কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া ছাড়াও পুকুর খনন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশটি অকেজো করেন। ফের ওই বিলে পুকুর খননের চেষ্টা করলে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করবেন বলেও হুশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস বলেন, বিলটিতে কয়েক হাজার হেক্টর তিনফসলি জমি রয়েছে। অথচ কয়েকজন কৃষককে বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে পুকুর খনন করার চেষ্টা করছে ওরা। একই এলাকার কৃষক নিজাম উদ্দিন নিজাম জানান, এখানে পুকুর খনন করা হলে বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি নিস্কাশন ব্যাহত হবে। পানি বেঁধে থাকলে জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। এতে গ্রামের কৃষকদের ব্যাপক লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই বিলটিতে পুকুর খনন কাজে বাঁধা দিয়ে আসছি। স্থানীয়দের বাঁধার মুখে তারা এতদিন পুকুর কাটতে পারেনি। শনিবার বিকেলে তারা অস্ত্র হাতে দলবল নিয়ে পুকুর খনন কাজ করতে চাইলে স্থানীয়রা ফের তাদের বাঁধা দেন।

আহত আদরী বেগম বলেন, আমরা ঘটনার পর আহত অবস্থায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলাম কিন্তু মামলা না নিয়ে আমাদের থানা থেকে বের করে দেয় বেলপুকুর থানা পুলিশ।

এ ব্যাপারে মিজানুর রহমান মিজুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বেলপুকুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

স/শা