পুঠিয়ায় চিকিৎসক সংকটে হাসপাতালের সেবা ব্যাহত: চরম ভোগান্তিতে রোগীরা

তারেক মাহমুদ:
চিকিৎসক সংকটে ভেঙ্গে পড়েছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। সরকারী নিয়ম অনুয়ায়ী ২৮ জন চিকিৎসক হাসপাতালের রোগীদের সেবা দেয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১০ জন। এর মধ্যে ৬ জন আছেন প্রেষণে গেছেন। আর ৪ জন দিচ্ছেন চিকিৎসাসেবা।

শুধু তাই নয়, নাইট গার্ড ২ জন থাকলেও একজনের ইতিমধ্যে অবসর গ্রহন করেছেন। তাই একজন নাইট গার্ড দিয়েই চলছে পুরো হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বর্হিবিভাগে ডাক্তার সঙ্কট থাকায় ইমারজেন্সিতে আসা রোগী দেখতেই সময় পার হয়ে যায়।

হাসপাতালের ইসিজি মেশিনে থকলেও অপারেটর না থাকায় রোগীদের বাইরে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে ইসিজি করাতে হয়। হাসপাতালের ডাক্তার থেকে শুরু করে রোগীদের নেই ভালো কোন বসার মতো চেয়ার টেবিল। তাই দীর্ঘ লাইনেই ইমারজেন্সিসহ সকল রোগীদের দাড়িয়েই সেবা নিতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের।

এদিকে, উপজেলার পাঁচটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রও রয়েছে চিকিৎসকের ব্যাপক সংকট। ফলে উপজেলার সীমান্তবর্তী নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, চারঘাট, দুর্গাপুর থেকে আসা হাজারো রোগীরা চিকিৎসা ব্যাবস্থা না পাওয়ার ফলে-সর্বশেষ ইমারজেন্সি অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়।

উপজেলা হাসপাতাল, সূত্রে জানা গেছে ৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য সরকারি নিয়ম অনুসারে ২৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু পুঠিয়ায় ২৮ পদের মধ্যে ১৯ পদই বর্তমানে শূন্যের কোঠায়।

এদিকে অর্থপেডিস, শিশু, মেডিসিন, নাক-কান-গলা, চর্মরোগ, চোখের ডাক্তার নেই যার ফলে বেশীরভাগ রোগী চিকিৎসা সেবা না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
মাসে দু-একদিন আসে অর্থপেডিকস হাড় বিশেষজ্ঞ, এর ফলে গুরুতরো হাড় ভাঙ্গা রোগীদের গাড়িতে করে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। মাঝে মাঝে রাস্তায় গুরুতরো অবস্থায় রোগী মারা যায়। এভাবেই চলছে ৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।

অপরদিকে,নামমাত্র একজন চিকিৎসক ও জরুরি বিভাগের একজন উপ-সহকারী চিকিৎসক দিয়ে আগত রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে সবা নিতে আসা রোগীরা। ফলে বিস্তর সংখ্যক রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমসম খেতে হচ্ছে কর্মরত চিকিৎসকদের। চিকিসৎসক সংকটের বিষয়টি নিয়েউর্ধ্বতন কর্তপক্ষক জানানো হলেও নেয়া হয় নি কোন পদক্ষেপ।

কর্মরত একাধিক চিকিৎসক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিদিন এতো পরিমানে রোগী আসে যে, রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে রীতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছে। উপজেলার এই হাসপাতালে এমনও কয়েকজন চিকিৎসক আছে যারা সপ্তাহে দু-দিনের বেশী আসেন না। আবার অনেক চিকিৎসক বছরের পর বছর আসে না তবে মাস শেষে বেতন-ভাতা নিয়ে চলে যায়। শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে সেবার এমন ব্যাঘাত ঘটছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক ভুক্তভোগী বলেন,আমার বাচ্চাটির বুকে ব্যাথা অনুভব করায় তার চিকিৎসার জন্য এসেছি। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় রামেক হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন অন্য চিকিৎসরা।

আরেক ভুক্তভোগী জানান, কয়েকদিন আগে আমার এক আত্বীয়র এ্যকসেডেন্টের পর তার গুরুতরো অবস্থায় হাড় ভাঙ্গলে কোন মতে ব্যান্ডেজ করে মাইক্রো ভাড়া করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাঈদুর হক জানান, দিন দিন এ হাসপাতাল চিকিৎসক শূন্য হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষ, সাংসদ ও উপজেলা সমন্নয় কমিটির মিটিংয়ে অনেকবার বলেছি। কিন্তু তারপরও এই বিষয়ে কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

 

স/আ