‘পিস কমিটির’ তালিকায় রাজশাহীর এমপি আয়েনের বাবার নাম!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাবলুর রহমানের লেখা ‘একাত্তরে মোহনপুর’ নামক বইয়ে ‘মহিষকান্ডি গ্রামে পিস কমিটির তালিকা’ নামক শিরোনামের লেখায় রাজশাহী-০৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিনের বাবার নাম লিপিবন্ধ আছে বলে দাবি করেছেন মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য নির্যাতনের শিকার সেই শেখ হাবিবা। এমনকি শুধু বইয়ে নয়; আমরাসহ এলাকার সবাই জানেন যে, এমপি আয়েনের বাবা হবির মণ্ডল ‘মহিষকান্ডি গ্রামে পিস কমিটির সদস্য ছিল।

এমপি আয়েনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে গত ১৯ জুলাই মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ‘নির্যাতনের শিকার’  বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে রাজশাহী নগরীর একটি রেঁস্তোরায় সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি জানান। পরে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘নওগাঁর আত্রাই অগ্রণী ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক বাবলুর রহমানের লেখা ওই বইয়ের ১৪৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মহিষকান্ডি গ্রামে পিস কমিটির তালিকা’র তিন নম্বরে এমপি আয়েনের বাবার নাম রয়েছে। এমপি নিজেও একটি গণমাধ্যমে বিষয়টি শিকারও করেছেন।

গ্রেপ্তার নাটকের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন শেখ হাবিবা বলেন, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি হিসাবে মানুষের বিভিন্ন বিপদে সহায়তার সুবাদে গত ১৯ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তার এলাকার নজরুলের মেয়ের দুই বছরের দুধের শিশুকে উদ্ধারের জন্য মোহনপুর থানায় যায় এবং সহায়তা চাই। ওসি তৌহিদুল ও এএসআই সোলায়মানের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে এএসআই সোলায়মান বাচ্চা উদ্ধারে অসম্মতি জানায় এবং বলে তোমার কাজ করতে এমপি স্যারের নিষেধ আছে। এক পর্যায়ে দুইজন মহিলা কনস্টেবল আমাকে চড়-থাপ্পড় মারে এবং ওই দিনের ডিউটি অফিসার লতিফাসহ কয়েকজন আমাকে ওসির রুম থেকে টেনে-হিঁচড়ে পাশের এসআইদের রুমে নিয়ে গিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং এমপির বিরুদ্ধে কথা না বলতে হুশিয়ারি দেয়। এরপর আমার হিজাব কেড়ে নিয়ে রাতভর থানায় আটকিয়ে রাখে। পরদিন ২০ জুলাই আনুমানিক বেলা ১১ টার দিকে এমপির সাবেক পিএস রাজাকারপুত্র একরামুল হক বিজয় এমপির ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত ডলি বেগমকে নিয়ে থানায় আসে এবং বিজয় আমার কাছে এসে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। এরপর ডলি বেগমকে বাদি করে একটি ও থানার এক এসআইকে বাদি করে আরেকটিসহ মোট দুইটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আমাকে জেলহাজতে পাঠায়।

হাবিবা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ‘গত ২৩ মার্চ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমপি হয়ে হঠাৎ ধনী শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে হাবিবা এমপি রাজাকার পুত্র, মানুষের জমি দখলকারি উল্লেখ করে বক্তব্য দেয় । ওই বক্তব্য দেওয়ার কারণে এমপির নির্দেশে তাকে পুলিশ দিয়ে এই অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। হাবিবা তাকে নির্যাতনে জড়িত এমপিসহ সকলের বিচার দাবি এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে জুডিশিয়াল তদন্ত দাবি ও প্রধানমন্ত্রীর নিকট এই ঘটনার সাংগঠনিক বিচার দাবি করেন।’ সংবাদ সম্মেলনে হাবিবার মা মিনা বেগম , স্বামী চা দোকানদার মাসুদ রানা ও তাদের এক শিশু কন্যা উপস্থিত ছিলেন।

এমপি ও তার লোকজনের অত্যাচারে এলাকায় থাকতে পারছেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে হাবিবার মা মিনা বেগম বলেন, ‘আমরা এলাকায় থাকতে পারছি না। বিভিন্ন মাধ্যমে গুম হওয়ার ভয়ভীতি আসছে। ২০১৮-১৯ সালের দিকে এমপির বড়ভাই ও ইউপি চেয়ারম্যান বাবলুর নির্দেশে হাবিবা একবার এলাকাছাড়া হয়েছিলো। বর্তমানে এমপির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না খুন ও গুম হওয়ার ভয়ে। তাই আমরা চরম আতঙ্কে আছি।’

হাবিবাকে নির্যাতনের অভিযোগ ও মামলা সম্পর্কে মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হাবিবা যেসব অভিযোগ করছেন সেগুলোর পুরোটাই মিথ্যা। এগুলো বলতে হয় তাই পুলিশ ও এমপির বিরুদ্ধে এসব বলছে।’ মামলার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘আগে হাবিবার বিরুদ্ধে দেড় লক্ষ টাকা আত্মসাতের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছিল।’

সংবাদ সম্মেলনে হাবিবার অভিযোগের ফুলঝুড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি মো. আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘ওই মেয়ে কি আমার কোনো প্রতিযোগী যে, তাকে আমি গ্রেপ্তার করাবো? তার নিকটাত্মীরা (শ্বশুড়, দেবর, ভাসুর ইত্যাদি) সবাই জানে ওই মহিলা কতটা খারাপ। আমার ওই মেয়ে সম্পর্কে বলতেই ঘৃণা লাগে। সে পুলিশ, ইউএনও সবার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করে। তার সাথে কেউ কথাই বলে না। সুতরাং তাকে হয়রানি করার প্রশ্নই আসে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা শান্তি কমিটির সদস্য হলে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলাম কীভাবে? আমার তো শিবির করার কথা ছিলো।’

জি/আর