পাহাড়ে সমৃদ্ধির পথ দেখাচ্ছে ‘রেডলেডি’ পেঁপে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার অদূরে পাহাড়ি পল্লী রসুলপুর। ছোটবড় টিলায় ঘেরা এই পল্লীতে পেঁপে চাষে সাফল্য পেয়েছে কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক। নিজের প্রায় ২০ একর পাহাড়ি ভূমিতে গড়ে তোলে পেঁপের বাগান।

সাধারণ দেশি জাত নয়, বিদেশি জাতের পেঁপে ‘রেডলেডি’ চাষ করে পেয়েছেন পাহাড়সমান সফলতা। এই জাতের পেঁপের চাষে ভাগ্য খুলেছে তার। শুধু নিজের ভাগ্য বদলায়নি। এতে অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ভিত্তিতে ৫-৬ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেন। মাসে বিক্রি প্রায় দেড় লাখ টাকার বেশি। চট্টগ্রামের পাইকাররা এসে বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায় পাকা পেঁপে।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে মাটিরাঙা। মাটিরাঙা থেকে মোটরসাইকেলে ৬ কিলোমিটার দূরে রসুলপুর গ্রামে ‘এসবি ফার্ম’ নামে কৃষি খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল খালেক। সারি সারি পেঁপে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন আকারের পেঁপে।

সেখানেই কথা হয় ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক মো. রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, বাগানে পেঁপে গাছের চারা রোপণের সময় সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হলেও এখন সম্পূর্ণ জৈব সারই ব্যবহার হয়ে থাকে। নিয়মিত চারজন শ্রমিকসহ বাগানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে গড়ে দশজন শ্রমিক কাজ করে। বছরদুয়েক আগে শুরু হয় ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপের আবাদ।

নিজেরাই চাষাবাদ শুরু করলেও বর্তমানে মাটিরাঙা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় বাগানের পরিচর্যা চলে। শুরুতে ৫০০ চারা রোপণ করা হলেও বর্তমানে বাগানে চারা সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। প্রতিটি চারা কেনা হয়েছে ৩৫ টাকায়।

মূলত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও ঢাকা বীজঘর থেকে সংগৃহীত বীজ থেকে উৎপাদিত ২ হাজার রেডলেডি জাতের পেঁপের চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে বাগানে সব ক’টি গাছ থেকে ফল মাড়াই চলছে।

কৃষক ও উদ্যোক্তা আবদুল খালেক মনে করেন, ‘পরিকল্পিত চাষাবাদ ও বিপণন ব্যবস্থা সহজতর করা রেডলেডি চাষাবাদে কৃষকরা আগ্রহী হবে। ইতিমধ্যে প্রতিবেশী সারোয়ার আলম ও মো. নাছির উদ্দিনসহ একাধিক কৃষক পাহাড়ি টিলায় রেডলেডি পেঁপে চাষ শুরু করেছেন।

‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে বেশ সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। পার্বত্য এলাকায় বিপণন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। বিশেষ করে সমতল অঞ্চলে বাজারজাত করা গেলে স্থানীয় কৃষক পেঁপে চাষে আগ্রহী হবে। ভবিষ্যতে এ জাতের পেঁপে চাষ বাড়ানো হবে।’

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির এ পেঁপে চারা রোপণের ৫-৬ মাসের মধ্যে ফুল আসে এবং ৭-৯ মাসের মধ্যে প্রথম ফল পাওয়া যায়। লাল-সবুজ রঙের প্রতিটি পেঁপের ওজন হয় দেড়-দুই কেজি। খেতে সুমিষ্ট এ পেঁপে সুগন্ধিযুক্ত।

স্থানীয় বাজারে পাকা পেঁপে গড়ে কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়। কাঁচা ও পাকা উভয় প্রক্রিয়াতেই বাজারজাত করা যায়। পাকা পেঁপে খুব সহজে নষ্ট হয় না বলে বাজারজাত করা সহজ। এ জাতের পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে গাছের আয়ুষ্কাল ২ বছরের বেশি।

মাটিরাঙা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘পাহাড়ের মাটির উর্বরতা ও অনুকূল আবহাওয়া রেডলেডি জাতের পেঁপে চাষের জন্য সহায়ক। শুধু ছত্রাকের আক্রমণ ছাড়া অন্য কোনো রোগ হয় না। রেডলেডি জাতের পেঁপে পাহাড়ে কৃষকের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। মাঠ পর্যায়ে এই জাতের সম্প্রসারণে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।’