পারিশ্রমিক না নিলে ডাক্তার সাহেব কী খেয়ে বেঁচে আছেন?

দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় তার দেওয়া একটি বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তবে বিনা পারিশ্রমিকে ১ হাজারেরও বেশি কিডনি প্রতিস্থাপন করা নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসায় ভাসছেন বিপরীতে বিভিন্ন নেটিজেনরা এ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। তাদের কৌতুহল-পারিশ্রমিক না নিলে ডাক্তার সাহেব কী খেয়ে বেঁচে আছেন?

তাদের এ প্রশ্নের জবাবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের মেডিকেলের সিনিয়র ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ঢাকা মেডিকেলের কে ৩৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি।

বৃহস্পতিবার সকালে দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, কোনো পারিশ্রমিক না নিলে ডাক্তার সাহেব কী খেয়ে বেঁচে আছেন? মনে রাখতে হবে, সে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেছে। আয়ের উৎস তার আছে। তবে এই খাত থেকেও সে চাইলে প্রচুর আয় করতে পারতো। মহান আল্লাহ তার (অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের) আখেরাতের পুরস্কারের আশা পূর্ণ করুন।

অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি বলেন, এ বছর চিকিৎসায় স্বাধীনতা পদক পেয়েছে ডা. কামরুল ইসলাম। ঢাকা মেডিকেলে সে আমাদের পাঁচ ব্যাচ জুনিয়র। অর্থাৎ আমরা যখন ফাইনাল পরীক্ষার্থী,তখন তারা ঢাকা মেডিকেলে ঢোকে। তারপর ১৯৯০ সনে এম বি বি এস পাস করার পর ৯৫ সনে এফসিপিএস, ২০০০ এএমএস ও ২০০৩ এ এফআরসিএস শেষ করে সে। তারপর জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউটে সহকারী অধ্যাপক থাকাকালে সে ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেয়।

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করে সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজ শ্যামলীতে।এ পর্যন্ত হাজারের উপর কিডনি সংযোজন করেছে সে। নিজের ফি না নেয়ায় তার প্রতিষ্ঠানে কিডনি সংযোজনের খরচ দাঁড়িয়েছে কমবেশি দু লাখ টাকা যা বিদেশে করতে গেলে ন্যূনতম ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাবে। এ সবের পর তার এ পুরস্কার পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু দেখলাম, সে মন্তব্য করেছে, দুনিয়ার এ পুরস্কারপ্রাপ্তিতে তার ভয় হয়, দুনিয়ায় সব পেয়ে গেলে আখেরাতের পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হয় কিনা। খুবই বিনয়াবনত চিন্তাভাবনা। কিন্তু এখানে অন্য কিছু বিষয় আছে।

এতো বড় কাজগুলো সে করেছে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে। নিজস্ব উদ্যোগে। টাকার লোভে যে করেনি, বোঝাই যাচ্ছে, বিনা পারিশ্রমিকে অপারেশন করার মাধ্যমে। এ কাজ তো সরকারি খাতে তৈরি অবকাঠামোতে করতে পারতো। কেন পারেনি,এটিই কোটি টাকার প্রশ্ন।

’একজন সহকারী অধ্যাপক জানেন না, কবে অধ্যাপক হতে পারবেন। অনেক সময় বসার জায়গাও পান না। সারাক্ষণ বদলি আতঙ্কে থাকেন। অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, এমনকি নিজ ইউনিট প্রধান থেকেও ভালো ব্যবহার বা কাজের স্বাধীনতা পান না। মহাপরিচালকের দফতর, মন্ত্রণালয় সর্বত্র অসহযোগিতা পেতে পেতে একসময় তার প্রাণশক্তি শেষ হয়ে যায়। এই অন্ধ চক্র থেকে বের হতে পারলে অনেকেই হয়তো কামরুলের মতো বা তার কাছাকাছি পারফরম্যান্স দেখাতে পারতো।’

একজন পরোপকারী ও নির্লোভ চিকিৎসক 

অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম তার বন্ধুদের কাছে একজন ভরসার প্রতীক হিসেবে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার গ্রহণের কারণেও তিনি তার ঘনিষ্টদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।

অফিসার্স ক্লাবে ঢাকা মেডিকেলের কে-৪০ ব্যাচের এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমাদের ব্যাচের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে কখনও আমাদের আগে টাকা দিতে হয় না। অনুষ্ঠান শেষে টাকা তোলা হয়। আর টাকা যদি শর্ট পড়ে তখনও কিন্তু আমাদের চিন্তা করতে হয় না-কারণ কামরুল আছে। ওই সব টাকা দেয়।

১১তম বিসিএস অফিসার্স ফোরামের সভাপতি যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ১১তম বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে কামরুলের নামে একটি সরকারি প্লট বরাদ্দ হয়েছে। আমি ওই ব্যাচের  সভাপতি হিসেবে তাকে বললাম, দোস্ত, তোমার প্লটটি কোথায় আছে তা দেখে যাও। কিন্তু কামরুল কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি, সে  উত্তর দিল-বন্ধু আমি তো সাড়ে তিন হাত জায়গা (আখেরাত) নিয়ে চিন্তায় আছি।

 

সূত্রঃ যুগান্তর