পাবনার একমাত্র নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা আর নেই

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

পাবনার সাঁথিয়ার একমাত্র নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা (৮০) আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা অবস্থায়  শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ১টা ৪৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন পরিবারের সদস্য মনিরুল ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল প্রামানিকের স্ত্রী। বীর মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা মৃত্যৃকালে ২ ছেলে, ১ মেয়েসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি ২০১৩ সাল থেকেই অসুস্থ ছিলেন। তাকে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছিল।

স্বামীর মৃতুর পর দীর্ঘ সময় ধরেই তিনি একাকি জীবনযাপন করে আসছিলেন। এর আগে তিনি কয়েক দফা গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে সাঁথিয়াসহ পাবনা হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। তবে তার শরীরের অবস্থা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছিল।

সর্বশেষ ২০০০ সালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন। ভানু নেছার নাতি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া কখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি। সরকারিভাবে উপজেলা প্রশাসন আমার দাদীর চিকিৎসা শুধুমাত্র সাঁথিয়া উপজেলা হাসপাতালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল। আমরা চিকিৎসা সেবার জন্য বড় ধরনের কোনো আর্থিক সহায়তা পায়নি। ’

তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পুরাতন এক ভাঙা চারচালা টিনের ঘরে তিনি বসবাস করে আসছিলেন।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম জামাল আহমেদ বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছার মৃত্যুর খবর আমি পেয়েছি। আজ বিকেলে ৫টার পর তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। তার নাতিকে একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরির ব্যবস্থা করেছি। সে সরকারি ঘর পায়নি তবে অল্প সময়ে সে আবাসন পাবেন।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছার মৃত্যুতে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক টুকু এমপি, সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহমেদসহ আরও অনেকে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধের সময় সাঁথিয়া এলাকায় পাকবাহিনীকে প্রতিহত করতে ভানু নেছা বাঙ্কারে বাঙ্কারে মুক্তিযোদ্ধদের অভিনব কায়দায় গোলা বারুদ ও খাবার পৌঁছে দিতেন। পাকবাহিনী ও এদেশীয় দালালদের হাত থেকে নিজেকে ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষা করতে তিনি ঝুড়ির মধ্যে গোলা বারুদ ও উপরে ঘাস অথবা গো পশুর মল ব্যবহার করতেন।

সূত্র : আমাদের সময়