সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
দেশের পাট চাষের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের সূচকরেখা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। দীর্ঘ সময়কালের পটভূমি বিবেচনায় নিলে এর আদল অনেকটা পুঁজিবাজারের সূচকরেখার মতোই বঙ্কিম, চড়াই-উতরাইয়ে ভরা।
একদা অভিজাত গৃহস্থের বাগানের শোভাবর্ধনকারী অতিথি হয়ে দূরদেশ থেকে এই দেশে পাটগাছ এসেছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে সেই গাছই মহার্ঘ অর্থকরী ফসল হয়ে ওঠে। এর আবাদের সূচক তখন খাড়াখাড়িভাবে উঠে যায়। তার ডাকনাম হয়ে যায় ‘সোনালি আঁশ’। কিন্তু সস্তা কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারের পর সেই সূচকে পতন নামে। সোনালি আঁশের রমরমা দিন শেষ হয়ে যায়। স্বাধীনতা–উত্তরকালে কৃষকেরা পাট চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
সম্প্রতি সারা বিশ্বের মানুষ অপচনশীল কৃত্রিম তন্তুর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় পাটের কদর বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকারি পর্যায়েও প্রণোদনামূলক নানান কর্মসূচি চালু হয়েছে। এ বছর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জন্য গত বছরের চেয়ে ৬২ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে একে বিলুপ্ত করে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেডিপিসির মাধ্যমে এরই মধ্যে অনেক বেসরকারি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। এসব উদ্যোক্তা প্রায় ২৮০ ধরনের পাটের পণ্য তৈরি, বাজারজাত ও রপ্তানি করছেন। সম্প্রতি পাট থেকে জুট পলিমার তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এটা দিয়ে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প ‘সোনালি ব্যাগ’ তৈরি করা হচ্ছে। উদ্যোগগুলোয় পাটশিল্পে আশা তৈরি হয়েছে।
এসব কারণে পাট আবাদের সূচক ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, উৎপাদন খরচ তুলতে না পারায় চাষিরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। যশোর অঞ্চলের ছয় জেলায় এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এসব জেলায় এ বছর ১ লাখ ৬১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সেখানে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকে এত উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই মুহূর্তে পাট চাষে কোনো ধরনের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না। বিনা মূল্যে চাষিদের মধ্যে সার-বীজ দেওয়ার মতো সরকারি সুযোগ-সুবিধাও নেই।
এ অবস্থায় পাট চাষের সূচকরেখা আবার ঊর্ধ্বমুখী করতে কাঁচা পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ও পাটজাত সামগ্রীর রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের প্রয়াস চালাতে হবে। যথার্থ দাম পেলে চাষিরা আবার উৎসাহিত হবেন। সোনালি আঁশ তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।