সরকারি পাটকলের ইজারা চূড়ান্ত

পাটপণ্য উৎপাদন ছাড়া যন্ত্রপাতি ব্যবহার নয়

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারি পাটকল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে আগামী ৬ জানুয়ারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় চুক্তি করতে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মান পূরণ করায় সেগুলোকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। ইজারা নেওয়া মিলের যন্ত্রপাতি পাটপণ্যের উৎপাদন ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না- এমন বেশ কিছু শর্তে বেসরকারি খাতে পাটকল ইজারা দিচ্ছে সরকার।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন ২৬টি জুট মিল ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে। বছর বছর লোকসান না টেনে লিজ দিয়ে বা ভাড়া দিয়ে মিলগুলো পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মিলগুলো কিভাবে ইজারা দেওয়া হবে সে বিষয়ে দেড় বছরে টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) চূড়ান্ত করা হয়। এরপর বিজেএমসির পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে এপ্রিলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে দেশি-বিদেশি ৫৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি দেখভাল করছেন। তিনি বলেন, পাটকল লিজ নিতে অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। কঠোর মানদণ্ড অনুসরণ করে সেগুলো

থেকে পাঁচটিকে বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, টিওআর অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তির শর্তগুলো কী হবে- সে বিষয়ে খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি হবে।

যোগ্য বিডার : সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস ইজারা পেতে যাচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক। খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস পাচ্ছে দেশি প্রতিষ্ঠান মিমো জুট লিমিটেড। এ ছাড়া নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস পাচ্ছে বে ফুটওয়্যার লিমিটেড, চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস পাচ্ছে ইউনিটেক্স কম্পোজিট এবং হাফিজ জুট মিলস পাচ্ছে সাদ মুসা গ্রুপ। ৬ জানুয়ারি সবকটি প্রতিষ্ঠান চুক্তিতে অংশ নেবে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান মর্টগেজের টাকা জমা দিয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব দেশের বাইরে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

টিওআর-এ কী আছে : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টার্মস অব রেফারেন্সে (টিওআর) বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলোর ব্যাপারে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি মিল প্রথমবার ৫ থেকে ২০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হবে। প্রথমবারের লিজের সময় লিজ গ্রহণকারীর কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে পরে সেটা আরও বাড়ানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে লিজ গ্রহণকারীকে লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। লিজ গ্রহণকারী কোনোভাবেই পাটকলের কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারবে না। লিজের মেয়াদে লিজ গ্রহণকারীর নাম পরিবর্তন করা যাবে না। মিল হস্তান্তরের আগে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিস্তারিত হিসাব করা হবে। লিজের সময়ে কোনো মানবীয় ক্ষতি হলে লিজ গ্রহণকারীকে দায় নিতে হবে। বছর শেষে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্থাৎ জমি, স্থাপনা ও মেশিনারিজের রিভিউ হিসাব দিতে হবে। যাতে সরকারি সম্পত্তি লিজগ্রহণকারী কৌশলে সরাতে না পারে। লিজ গ্রহণকারী লিজের সম্পত্তি সাব-লিজ, মর্টগেজ দিতে পারবে না। একই সঙ্গে কোনো ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ঋণ নিতে পারবে না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া লিজের জায়গায় কোনো গাছ কাটা বা বিক্রি করা যাবে না। কোনো স্থাপনার নকশা পরিবর্তন করতে হলে অনুমোদন নিতে হবে। লিজের মেয়াদ শেষে হিসাব অনুযায়ী সম্পত্তি সরকারের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে। পাটকলের পুরো জায়গা লিজগ্রহীতা পাবে না। শুধু কারখানা ও কারখানা সংলগ্ন আঙ্গিনা লিজের আওতাধীন থাকবে। লিজ সম্পত্তিতে পাটপণ্য উৎপাদন ছাড়া অন্য কোনো পণ্য উৎপাদন করা যাবে না। অন্য কোনো পণ্যের গুদাম হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে না।

লিজের ২৪ মাসের ভাড়া জামানত হিসাবে সরকারের কাছে লিজগ্রহণকারীকে নগদ জমা দিতে হবে। লিজের মেয়াদ শেষে সন্তোষজনক হস্তান্তর শেষে টাকা বিনাসুদে ফেরত দেওয়া হবে। উদ্যোক্তার প্রয়োজন অনুযায়ী নিজ দায়িত্বে মেশিনারি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করবে। কোনো কারণে পুরোনো মেশিনারিজের জায়গায় নতুন মেশিনারি কেনা হলে পুরোনো মেশিনারি সরকারকে ফেরত দিতে হবে।

চুক্তিতে উল্লেখ করা সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লিজ বাতিল হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাকে তিন মাসের ভাড়া জরিমানা হিসাবে দিতে হবে। লিজ চুক্তির লঙ্ঘন হলে সরকার তিন মাসের নোটিশে লিজ বাতিল করতে পারবে। একই সঙ্গে সরকার ও উদ্যোক্তা উভয়ে ছয় মাসের নোটিশে স্বাভাবিকভাবে লিজ চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নিতে পারবে। – যুগান্তর