পাকিস্তান-চীন : জোটবদ্ধ না হয়েও যে কারণে বন্ধু রাষ্ট্র

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

গত কয়েক বছরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চীন। নিজেদের পররাষ্ট্র, অর্থনৈতিক ও সামরিক নীতি প্রচারের জন্য ভারত মহাসাগর অঞ্চলে পাকিস্তানের ওপর ক্রমশ ঝুঁকছে দেশটি। পাকিস্তানের প্রতি চীনের মূল আগ্রহের কারণ শনাক্ত করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলফার সেন্টারের মিশেল বার্কলে।

তার মতে প্রথমত, ভারতের জন্য কার্যকর সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া পাকিস্তানকে হাতে রাখতে চায় চীন।

দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের ভেতরের রাস্তাকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে চায় চীন।

তৃতীয়ত, চীনে উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদী মুসলিমদের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামপন্থীদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে দেশটির সহযোগিতা চায় চীন।

মাইক্রোসফটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ স্পষ্টতই, চীন পাকিস্তানেকে একটি সমর্থক, জাতীয় স্বার্থের সহায়ক ও প্রচারক হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। সাম্প্রতিককালে এই সম্পর্কটি আরও গভীর হয়েছে এবং একটি শক্তিশালী সামরিক জোটে রূপ নিয়েছে।

এই সম্পর্কের সূত্রপাত ১৯৫১ সাল নাগাদ হলেও ১৯৬০-১৯৭০ সালের মাঝামাঝি দুই দেশের সম্পর্ক ভালো হতে শুরু করে৷ চীন-পাকিস্তান পরস্পরের স্থায়ী সহযোগী হয় ঠিক সেই সময়৷

এরপর গত পাঁচ দশকে পাকিস্তান চীনের একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে মার্কিন-চীন চুক্তি করাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিকসন এবং চীনের নেতা মাও সে তুংয়ের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টিকারী হিসেবে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া খানের ভূমিকা চীন কখনো ভোলেনি।

তখন থেকেই চীনের এক কট্টর সমর্থক হয়ে আছে পাকিস্তান। এমনকি চীনের উইঘুর মুসলিমদের প্রতি নৃশংসতার প্রসঙ্গে ইসলামিক দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি’তে  চীনবিরোধী কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি পাকিস্তান।

বিনিময়ে পাকিস্তান চীনের কাছ থেকে বেশ লাভবান হয়েছে। বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে চীনের উত্থানের  সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে পাকিস্তানের প্রভাবও বাড়তে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন সার্কে পর্যবেক্ষক হিসাবে চীনের প্রবেশকে সমর্থন করেছিল পাকিস্তান। যার প্রতিদানে শাংঘাই কেন্দ্রিক সংগঠন এসসিওতে পাকিস্তান জায়গা করে নেয়।

শি জিনপিংয়ের ফ্ল্যাগশিপ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপে এর বৈশ্বিক পদচিহ্ন বাড়ানোর সামরিক কৌশল এবং একসঙ্গে চীনা অর্থনৈতিক নীতির মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০৫০ সালে বিশ্ব পরাশক্তি হওয়ার চীনের যে মহৎ পরিকল্পনা, এতে সেরা হাতিয়ার হলো পাকিস্তান। ভূমি, ঋণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প এবং চীনা অস্ত্র ও খুচরা যন্ত্র দেওয়ার মাধ্যমে চীনের প্রতি পাকিস্তান অত্যন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান এখন সম্পূর্ণরূপে রক্ষণশীলভাবে চীনকে সমর্থন করে যাচ্ছে।

এ কারণেই পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাকিস্তান ও চীন বিশ্বের সামনে জোটবদ্ধ না হলেও স্বার্থের খাতিরে তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

সূত্র: আমাদেরসময়