পাকিস্তানকে আর ধারে তেল দেবে না সৌদি আরব?

বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদন এবং রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব এখনো পাকিস্তানের সাথে তেল সরবরাহ চুক্তি নবায়ন করেনি। এই চুক্তির আওতায় সৌদি আরব পাকিস্তানকে বাকিতে তেল সরবরাহ করতো। চুক্তিটির মেয়াদ দুই মাস আগে শেষ হওয়ার পরে দেশটি পাকিস্তানকে আর তেল সরবরাহের অনুমতি দেয়নি।

শীর্ষস্থানীয় পাকিস্তানি দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলেছে, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে বার্ষিক ৩.২ বিলিয়ন ডলারের তেল বাকিতে দেওয়ার চুক্তিটি দুই মাস আগেই শেষ হয়ে গেছে এবং তার পুনর্নবীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত রিয়াদ মুলতবি রেখেছে।

মনে করা হচ্ছে, ইমরান খান সরকার কাশ্মীর নিয়ে বিবাদের জেরে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি) ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার জবাবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। এর ফলে রীতিমতো সংকটে পাকিস্তান সরকার।

এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবেলা করতে গিয়ে জেরবার ইমরান সরকার। করোনা সংক্রমণ সেই সংকট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তার মধ্যেই সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানকে নতুন করে চাপের মুখে ফেলবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রবল অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচতেই ২০১৮ সালে সৌদি আরবের থেকে ৬.২ লক্ষ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল পাকিস্তান। সেই ঋণে একটি শর্ত ছিল যাতে বলা হয়, ইসলামাবাদকে সৌদি আরব বছরে ৩.২ লাখ কোটি ডলার মূল্যের তেল ধারে সরবরাহ করবে। কিন্তু সেই চুক্তির মেয়াদ সম্প্রতি শেষ হয়ে গেলেও তা নবায়ন করেনি সৌদি আরব।

কিছু পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির কাশ্মীর প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য।

কিছু দিন আগেই পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ওআইসি কাশ্মীর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক যদি না-ডাকে তবে পাকিস্তান চুপ করে থাকবে না। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কাশ্মীর ইস্যুতে ইসলামিক দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বৈঠক ডাকবেন।

ওআইসি হল বিশ্বের ইসলামিক দেশগুলোর সবচেয়ে বড় সংগঠন। সদস্য দেশের সংখ্যা ৫৭। সেই সংগঠন যাতে কাশ্মীর ইস্যুতে বৈঠক ডাকে তার জন্য গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার চাপ দিয়ে চলেছে পাকিস্তান। কিন্তু ইসলামাবাদের সেই চাপে কোনো লাভই হয়নি। আর তাতেই রাগ ইমরান প্রশাসনের।

২০১৯ সালের ৫ অগস্ট জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে ভারত সরকার। নরেন্দ্র মোদি সরকার সেই সময়েই জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে দু‌’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে। তখন থেকেই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব পাকিস্তান। এই ইস্যুতে অন্যান্য ইসলামিক দেশের থেকেও ভারতের বিরুদ্ধে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালায়। কিন্তু ইমরান খান সরকারের সেই মরিয়া চেষ্টাতেও কোনও ফল পায়নি ইসলামাবাদ।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ