সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
নরসিংদীতে পাওনা টাকার জিম্মাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সৈকতকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিবপুর থানায় মামলা একটি দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া কথিত দেনাদার সুজনের এখনও সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতে নিহতের বড় ভাই মোরশেদ আলম বাদী হয়ে ব্রাক্ষণপাড়া এলাকার রুবেল, নুরু সরদারের ছেলে শাহেদ ও দত্তপাড়া এলাকার জালাল উদ্দিনের ছেলে ইমরানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
সৈকতের পরিবার সূত্র জানায়, জিম্মাদার হওয়ার অপরাধে পাওনাদার ও সন্ত্রাসীদের হাতে তাকে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আগে পাওনা টাকার জিম্মাদার সৈকতকে উল্লেখিত মামলার আসামিরা মেরে ফেলবে বলে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছিল। মারা যাওয়ার পূর্বে সৈকত তার মা ও স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার নিশির কাছে পুরো বিষয়টি বলে যায়। নিহত সৈকতের তাপ নামে আট মাস বয়সী একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নিহত সৈকতের প্রতিবেশী সুজনের সঙ্গে রনি নামে এক ব্যক্তির টাকার লেনদেন নিয়ে বিরোধ হয়। ওই সময় নিহত সৈকত প্রতিবেশী সুজনের টাকার জিম্মাদার হয়। কিন্তু সুজন সঠিক সময় টাকা দিতে না পারায় গত শনিবার দুপুরে ইমরান, রুবেল ও শাহেদসহ ৭-৮ জন লোক সুজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। টাকার জিম্মাদার হওয়ায় তারা সৈকতকে টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে।
একপর্যায়ে তারা সৈকতকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ওই সময় রুবেলের সঙ্গে সৈকতের মোবাইলে কথোপকথনের রেকর্ডে মেরে ফেলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। ওই সময় রুবেলের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডটি সৈকত তার স্ত্রীর কাছে সংরক্ষণ করে রাখে।
সোমাবার দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষে মামলার আসামি শাহেদের ফোন পেয়ে সৈকত নিজের এলিয়ন গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে রেব হয়। এরপর থেকে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে শিবপুর উপজেলার ঢাকা-মনোহরদী আঞ্চলিক সড়কের পাশে পুরানদিয়া জামতলা এলাকা থেকে হাত বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার ব্যবহৃত গাড়িটিও রাস্তার পার্শ্ববর্তী স্থান থেকেই পুলিশ উদ্ধার করে। বর্তমানে এলিয়ন গাড়িটি শিবপুর থানা হেফাজতে রয়েছে।
নিহতের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার নিশি বলেন, রনি নামে জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে সুজনের ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। ওই ঘটনায় জিম্মাদার হয় সৈকত। সুজন টাকা না দেয়ায় রুবেল, ইমরান ও শাহেদ সৈকতকে অব্যাহতভাবে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। ঘটনার দিন শাহেদের ফোন পেয়ে সৈকত দ্রুত বেরিয়ে যায়। এরপর বাড়ি ফেরে লাশ হয়ে। জিম্মাদার হওয়ার অপরাধে পাওনাদার ও সন্ত্রাসীদের হাতে তাকে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হলো। আমি এই খুনিদের বিচার চাই।
এদিকে সৈকত হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শীলমান্দি এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। বাড়িজুড়ে চলছে কান্নার রোল। শোকে বিহ্ববল হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। নিহতের মরদেহ দেখতে শত শত লোক বাড়িতে ভিড় জমায়।
অন্যদিকে সুজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও এখনো পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি বিজয় গোস্বামী ও সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ।
মামলার বাদী মোরশেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই নিরপরাধ। একজনকে বাঁচাতে টাকার জিম্মাদার হয়েছে। তাই বলে সন্ত্রাসীরা আমার ভাইকে খুন করবে? টাকার প্রয়োজন হলে আমাদের জানাতে পারত। আমরা টাকা দিতাম। আমার ভাইটা তো বেঁচে থাকত।
নরসিংদী পুলিশ সুপার সাইফুল্লা আল মামুন বলেন, বেশকিছু বিষয়কে সামনে রেখে মামলার তদন্ত চলছে। আশা করি, সহসায় আসামি গ্রেফতারসহ মামলার অগ্রগতি আপনাদের জানানো সম্ভব হবে।