পাঁড় মাতালদের সামলাতে বারে মহা আয়োজন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সচরাচর নাইট ক্লাব ও বারগুলোতে আনন্দ-ফূর্তি ও হইহুল্লোড় করতে যান আমদপ্রিয় জনতা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ছোট শহর সিটলের নাইট ক্লাব ও বারগুলোতে খদ্দেরের চাহিদামাফিক মাদক সরবরাহ করতে ভয় পাচ্ছেন কর্মীরা।

বিশেষ করে ওপিওইড নামের এক মাদক বেশি পরিমাণে গ্রহণের ফলে কেউ আগ্রাসী হয়ে ওঠার আশঙ্কায় ক্লাব ও বার কর্তৃপক্ষ মাদকটি সরবরাহ করতে ভয় পাচ্ছে। এমনকি ওপিওইড গ্রহণ করার পর কেউ মাতলামি শুরু করলে, তাকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।

জানা গেছে, ওপিওইড নামের ওই ড্রাগ ক্যান্সারের চিকিৎসায় সীমিত পরিমাণে ব্যবহার হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অসংক্রামক ব্যাধি সমন্বয়কারী চেরিয়ানা ভারগিস বলেন, বিশ্বজুড়ে ওপিওইড, মরফিনে আসক্তি মাত্রাতিরিক্ত হবার কারণ দেখিয়ে কিছু কিছু দেশে এই ব্যথানাশক ওষুধগুলো ব্যবহারে বিধি আরোপ করা হয়েছে। তার পরেও কোনো দেশের সরকার যখন ওপিওইড ব্যবহার করতে চাই, তখন এই ব্যবহারকে ঘিরে থাকে নানা হুমকি। এই ওপিওইডের ব্যবহার যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন বিপত্তি ঘটে। আর সেই জন্যই ওই দেশের সরকারকে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়।

তিনি আরো বলেন, ওপিওইড ও মরফিনের অপব্যবহার রোধে যথেষ্ট নজর রাখতে হয়। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, চিকিৎসক অথবা নার্স দ্বারা এই ব্যথানাশক ওষুধগুলো রোগীদের প্রয়োগ করা উচিত। যদি সম্ভব হয় তাহলে প্রয়োজন যাদের, কেবল তাদেরই মুখে তুলে দেওয়া উচিত ওষুধটি।

যদিও সিটলের নাইটক্লাবগুলোতে ওপিওইডের ব্যবহার ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েনি। তবে সেখানে এই ড্রাগের চাহিদা দিনের পর দিন বাড়ছে। কারণ, ওপিওইড এমন এক ধরনের ড্রাগ, যা দিনের পর দিন গ্রহণের মাত্রা বেড়েই যায়।

সিটলে যারা ফেনটানিল জাতীয় মাদক গ্রহণ করতেন, তাদের অনেকেই ওপিওইড গ্রহণ করছেন। কারণ, ফেনটানিল গ্রহণকারীরা যে ধরনের ব্যথা শরীরে অনুভব করেন, ওপিওইড গ্রহণের ফলে সেই ব্যথা চলে যায়।

গত বছর অতিমাত্রায় ফেনটানিল গ্রহণের ফলে ওয়াশিংটনের কিং কাউন্টিতে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৭ সালে ৩৩ জনের মৃত্যু হয় ওপিওইড গ্রহণের ফলে। সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হলো, ওপিওইড সেবনের পর কোনো ব্যক্তি আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারেন। যা সামলানোর ভয়ে ক্লাব-বার কর্তৃপক্ষ সেটা সরবরাহ করতে ভয় পায়।

জানা গেছে, এ ধরনের মাদক সেবনকারীদের থেকে নিরাপদ থাকার ব্যাপারে নাইট ক্লাব ও বারের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, কোনো ক্লাবে ওপিওইড সেবন করে কেউ মারা গেলে ক্লাব কর্তৃপক্ষ যেমন ফেঁসে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তেমনি ওপিওইড সেবনকারীর আগ্রাসী আচরণ থেকে বাঁচতে অন্যদেরও নিরাপদ থাকার কৌশল জানা দরকার।

কারণ, ২০১৬ সালে ওরলান্ডোর একটি নাইট ক্লাবে এক মদ্যপের গুলিতে ৪৯ জনের মৃত্যু হয় এবং আরো ৫৩ জন আহত হন। পরে ওই শহরের নাইট ক্লাবগুলোর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অন্যদিকে ২০১৪ সালে নিজের বন্ধুকে হারিয়েছেন ড্যান উইলসন। মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে তার বন্ধু নাইট ক্লাবেই মারা যায়। তিনি মনে করেন, নাইট ক্লাবের কর্মীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে ওই সময়ে কী করণীয় সেটা জানতে পারত। ফলে তার বন্ধুর অকাল মৃত্যু হতো না বলেও মনে করেন উইলসন। তিনি মনে করেন, ক্লাবের মালিক থেকে শুরু করে কর্মচারীদের, এমনকি ড্যান্সারদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।

মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবনকারীদের ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সিটল ও কাউন্টির যৌথ স্বাস্থ্য বিভাগ সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানকার ফার্মেসীতে কিছু ওষুধ পাওয়া যাবে, যেগুলো ব্যবহারের ফলে মাদকের প্রভাব কেটে যাবে। এমনকি বারগুলোতেও সেসব ওষুধ থাকছে।

সিটল মেয়রের উদ্যোগে ইতোমধ্যেই নারকন গ্রুপের নালক্সন নামক ট্যাবলেট এক লাখ ২৮ হাজার পিস বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নাইট ক্লাব ও বারের কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ অনেককেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, অতিমাত্রায় মাদক সেবনকারীদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সে ব্যাপারে।

জানা গেছে, ওপিওইড গ্রহণের পর কেউ আগ্রাসী হয়ে উঠলেই নালক্সন ট্যাবলেট খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ওপিওইডের যে প্রতিক্রিয়া, তা দ্রুত কেটে যায়।