শনিবার , ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

পশ্চিমবঙ্গের পটুয়াপাড়ায় নারী প্রতিমা শিল্পীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় কম কেন?

Paris
অক্টোবর ১২, ২০২৪ ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

“যখন ৮০ দশকের শেষের দিকে প্রতিমা তৈরি করা শুরু করি, লোকে অবাক হয়েছিল। বলেছিল- ও পারবে? দাদাকে শুনতে হয়েছিল- শেষপর্যন্ত বোনটাকেও এই লাইনে আনলি?” কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে যাচ্ছিলেন মৃৎশিল্পী মালা পাল। তার চোখে মুখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট।

কিছুটা থেমে বললেন, “বাবাও পছন্দ করতেন না। লুকিয়ে লুকিয়ে স্টুডিওতে আসতাম। বাবাকে হারানোর পর সব কিছু বদলে যায়। ধীরে ধীরে মা আর আমি দু’জনেই নিয়মিত আসা শুরু করি কুমোরটুলিতে।”

পশ্চিমবঙ্গের নাম করা শিল্পী মালা পাল, দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করেন।

কলকাতার পটুয়াপাড়া কুমোরটুলির যে ছোট্ট ঘরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন, সেখানে সারি সারি দুর্গা প্রতিমা রাখা।

পূর্ণাঙ্গ দৈর্ঘ্যের সাবেকি প্রতিমা ছাড়াও ‘মিনিয়েচার দুর্গা’ তৈরির শৈলী মালা পালের বৈশিষ্ট্য।

ছোট্ট ঘরে সাজানো রয়েছে বহু পুরস্কারও।

“আসলে এই পেশাটা পুরুষ প্রধান ছিল। কেউ ভাবেইনি মেয়েরা ছেলেদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিমা বানাবে, দুর্গার চোখ আঁকবে, অন্য কারিগরদের বলে দেবে কীভাবে কী করতে হয়,” কিছুটা ক্ষোভ আর অভিমান মিশিয়ে কথাগুলো বলছিলেন চায়না পাল। কলকাতার নামকরা প্রতিমা শিল্পীদের মধ্যে তিনিও একজন। তার তৈরি সাবেকি দুর্গা প্রতিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায়।

তিরিশ বছর আগেও কেউ ভাবতেই পারেননি বাবা-কাকার মতোই প্রতিমা তৈরিকে নিজের পেশা হিসাবে বেছে নেবেন চায়না পাল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলেছে। দুর্গোৎসবের আবহে চায়না পালের স্টুডিওতে ব্যস্ততা তুঙ্গে। তার তত্ত্বাবধানে কাজ করেন বহু পুরুষ কারিগর।

সুস্মিতা রুদ্র পাল অবশ্য এদের চাইতে বয়সে অনেকটা ছোট। নতুন প্রজন্মের মৃৎশিল্পীদের মধ্যে একজন তিনি। প্রতিমা তৈরি এবং বিগ্রহের চোখ আঁকার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পান তিনি।

তার কথায়, “এই পেশায় আসার কারণ হলো আমি চাইনি বংশপরম্পরায় চলে আসা কাজ থেমে যাক। আমি মনে করি, শিল্প তখনই হবে যদি শিল্পী তৈরি হয়।”

পুরুষ প্রধান এই পেশায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের এই নারীরা। যদিও এই সংখ্যাটা এখনও বেশ কম। পশ্চিমবঙ্গের পটুয়া পাড়াগুলোতে প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা নেপথ্যেই সীমাবদ্ধ।

সমাজকর্মী এবং অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ বলেন, “মূলত পুরুষরাই সামনে থাকেন। যদিও ছাঁচে ফেলে প্রতিমার মুখ তৈরি করা, রং করাসহ যাবতীয় ব্যাকস্টেজ সাপোর্টটা তারাই দিয়ে থাকেন। তথাকথিত ছোট মূর্তি যেমন লক্ষ্মীর প্রতিমাও তাদের গড়তে দেখা যায়। কিন্তু বড় প্রতিমা গড়তে বা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে স্টুডিওতে তাদের দেখা যায় না।”

“এটা হয়তো পুরুষরা লাঙল দেবে, মেয়েরা বাকি কাজ করবে- সেই চিন্তারই প্রতিফলন যে ছেলেরাই বড় প্রতিমা তৈরি করবেন মেয়েরা নয়। আর এই ধারণাই এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে যায়। আর এই ভাবনা থেকে হয়তো পুরুষ মৃৎশিল্পীরাও তাদের ছেলেদেরই মূলত প্রতিমা গড়া শেখান।”

‘এর জন্য দায়ী সামাজিক বৈষম্য’
শিল্পী ভবতোষ পালও মনে করেন সামাজিক বৈষম্য এর অন্যতম কারণ।

এই প্রবীণ শিল্পীর কথায়, “প্রতিমা তৈরির কাজে মূলত পুরুষদেরই দেখা যায়। নারীরা বাড়িতে থেকে প্রতিমা তৈরির মাটি প্রস্তুত করেন, কাঠামোতে খড় বাঁধেন, বা ঘরে বসে টুকটাক রং করে দেন। মাটির হাঁড়ি, কলসি, প্রদীপ তৈরি তো বটেই, পট তৈরি করতে এবং আঁকতেও দেখা যায় বহু নারীকে। কিন্তু পুরুষদের মতো প্রতিমা তৈরি করতে সেভাবে তাদের দেখা যায় না।”

“এই কুমোরটুলিতে ২০০টারও বেশি ঘর আছে। নারী শিল্পী রয়েছেন তিন-চারজন। পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্রও ছবিটা আলাদা নয়। মেয়েরা মূলত নেপথ্যেই থাকেন।”

কেন এই সংখ্যা কম জিজ্ঞাসা করায় একটু আক্ষেপের সুরেই ব্যাখ্যা করলেন, “আসলে এর জন্য দায়ী সামাজিক বৈষম্য। ৪২ বছর আগে যখন বাবার হাত ধরে ঠাকুর গড়ার কাজ শুরু করেছিলাম তখনও এই কারণই ছিল। সময় বদলালেও মেয়েরা খুব একটা এই পেশাতে আসে না। এতগুলো বছরে হাতে গোনা কয়েকজন নারী শিল্পী ছাড়া আর তো কাউকে দেখলাম না।”

উত্তর কলকাতার পটুয়াপাড়ার বাসিন্দা সবিতা কর্মকার স্বামীর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রতিমা অলঙ্করণের জন্য শোলার কাজ শিখতে চাইলেও তা হয়নি।

তিনি বলেন, “বাইরে এসে বাড়ির বৌ দোকানে বসবে, ঠাকুরের অলঙ্কার বানাবে এটা ভাবতেই পারতেন না আমার স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজন। একই ভাবনা চিন্তা থেকেই প্রতিমা শিল্পীর বাড়ির মেয়েদের বা বৌদের স্টুডিওতে গিয়ে কাজ করতে দেওয়া হতো না।”

পুরুষ প্রধান পেশা
“দুর্গাপুজো সার্বজনীন হয়েছে অনেক পরে। আগে জমিদারদের বাড়িতেই মূলত দুর্গাপুজো হতো। মেয়েরা বাড়িতে মাটি তৈরি করে রাখতেন, বা অলঙ্কার বানাতেন, ছেলেরাই জমিদার বাড়িতে গিয়ে কাঠামো তৈরি আর মূর্তি গড়ার কাজটা করতেন,” বলেছেন শিল্পী ভবতোষ পাল।

ধীরে ধীরে দুর্গাপুজো সার্বজনীন হয়ে ওঠে।

চায়না পালের কথায়, “বিশালাকার প্রতিমা তৈরির কাজ মেয়েদের পক্ষে কষ্টসাধ্য বলে ভাবা হতো। লোকে ভাবতো অত উঁচুতে দাঁড়িয়ে কীভাবে মায়ের চোখ আঁকবে মেয়েরা? বৃষ্টি এলে কীভাবে দৌড়ে গিয়ে ঢাকবে মূর্তি?”

অসুবিধা কি সত্যিই হতো?

“বড় প্রতিমা তৈরি করা পরিশ্রমের কাজ, দৌড়ে গিয়ে প্রতিমার গায়ে প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা দেওয়াও সহজ নয় ঠিকই। কিন্তু আমি তো করছি,” বললেন তিনি।

প্রথমবার যখন দুর্গা প্রতিমার চোখ এঁকেছিলেন তখনও ‘অবজ্ঞার’ সম্মুখীন হতে হয়েছিল চায়না পালকে।

“প্রথমবার দুর্গার চোখ এঁকেছিলাম প্লাস্টিকের আড়ালে দাঁড়িয়ে, গভীর রাতে। মনকে শান্ত করেছিলাম তুলি ধরার আগে।”

তারপর দীর্ঘ সময় কেটেছে। পথ চলা সহজ হয়নি।

“এই পাড়ায় বায়নার ঠাকুর অন্যান্যরা যেখানে রাখে, আমাকে সেখানে রাখতে দেওয়া হতো না, কিছুটা গায়ের জোরেই। কারণ আমি মেয়ে। খুব খারাপ লাগত কিন্তু জেদও বেড়েছিল,” বলেছেন তিনি।

৯০এর দশকে এন্টালি সংঘের জন্য প্রথমবার দুর্গা প্রতিমা বানিয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে যাত্রা শুরু। কলকাতার চীনা কনস্যুলেট-জেনারেলের তরফে তাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আর্টস উইক এবং মেকোং-ল্যাঙ্ক্যাং আর্ট ফেস্টিভালে পাঠানো হয়।

কলকাতা ও শহরতলির একাধিক পুজো ছাড়াও তার তৈরি দুর্গা প্রতিমা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাতেও পাড়ি দেয়।

‘এই শিল্প বাঁচাতে হলে মেয়েদের সামিল করতে হবে’
তথাকথিত প্রথা ভেঙে পুরুষ প্রধান পেশায় পশ্চিমবঙ্গের যে দুই নারী প্রতিমা শিল্পী হিসাবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন তাদের এই পরিসরে আসার নেপথ্যেও রয়েছেন নারীরাই।

চায়না পালের মা যেমন তার সাহস যুগিয়েছেন। মালা পালকে উৎসাহ দিয়েছেন মা মায়ারানি পাল এবং দাদা গোবিন্দ পাল।

“মা কৃষ্ণনগরের মেয়ে। মৃৎশিল্পের প্রতি তার ভালোবাসা থাকলেও সেই যুগে মেয়েদের বাড়ির বাইরে এসে কাজ করা মানা ছিল। প্রতিমা বানানোর জন্য মাটি তৈরির কাজ তিনি বাড়িতে করলেও কুমোরটুলিতে প্রতিমা বানানো আর বায়নার জন্য লোকের সঙ্গে কথা বলতেন বাবা,” বলেন গোবিন্দ পাল।

তিনি জানিয়েছেন কীভাবে তার বোন ছেলেবেলায় জীব জন্তুর মূর্তি গড়ত, যা নজর এড়িয়ে যায়নি মা মায়ারানি পালের। তিনিই উৎসাহ দিতেন মেয়েকে।

বাবা দুলালচন্দ্র পালের মৃত্যুর পর ছবিটা একেবারে বদলে যায়। ইলেকট্রিক্যাল টেকনিশিয়ানের কাজ ছেড়ে বাবার স্টুডিওকে কর্মস্থল হিসাবে বেছে নেন গোবিন্দ পাল। মা, মায়ারানি পালেরও স্টুডিওতে যাতায়াত বাড়ে। ধীরে ধীরে মালা পালও যোগ দেন।

গোবিন্দ বলেছেন, “সেই থেকে প্রতিমা গড়ছে আমাদের বাড়ির নারীরা। তবে মেয়েদের এই পরিসরে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যার অবদান অস্বীকার করা যায় না, তিনি হলেন কামাক্ষ্যা বালা পাল।”

স্বামীকে হারানোর পর তিনি সংসার চালাতে ঠাকুর গড়াকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন।

“উনি আমায় সব সময় বলতেন এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে মেয়েদের শামিল করতেই হবে। ওনার কথা মনে গেঁথে গিয়েছিল তাই বোনকেও এই পেশাতে যোগ দেওয়ার কথা বলি,” বলেন গোবিন্দ পাল।

তবে এই পথ সহজ ছিল না।

তার কথায়, “আমাকে লোকে বলত বোনকেও এই লাইনে আনলি! যেন কিছু পাপ করে ফেলেছি।”

একদিন কলকাতার একফালি স্টুডিওতে কাজ করাকালীন দিল্লি থেকে আসা কয়েকজন শিল্পীর নজরে পড়েন মালা পাল। সুযোগ পান দিল্লি গিয়ে কাজ শেখার, নিজের পারদর্শিতা দেখানোরও।

“দিল্লি থেকে ফিরে আসার পর মালাকে প্রশংসার চোখে দেখত সবাই। ওকে দেখে দু-একজন মেয়েরা কাজ শুরু করে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই বিয়ের পর মূর্তি গড়ার কাজ ছেড়ে দিয়েছে,” বলেন গোবিন্দ পাল।

‘বিয়ের শর্ত ছিল…’
বিয়ের পর একবছর প্রতিমা তৈরির কাজ বন্ধ ছিল মালা পালেরও। তবে স্বামী ভানু রুদ্র পাল যিনি নিজেও একজন শিল্পী, বাড়ির বড়দের সঙ্গে কথা বলে তাকে আবার কাজে ফিরে আসতে সাহায্য করেন।

তথাকথিত প্রথা ভেঙে পুরুষ প্রধান পেশাতেই নিজের জগৎ গড়েছেন তিনি। কুমোরটুলির স্টুডিও ভাগ করে নিয়েছেন দাদা এবং স্বামীর সঙ্গে।

স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে গর্ব চুইয়ে পড়ছিল ভানু রুদ্র পালের স্বরে। তিনি বলেন, “বিয়ের পর একবছর কাজ না করতে পারার যে দুঃখ সেটা ওকে দেখে বোঝা যেত। এখন ওর তৈরি দুর্গা অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়ায় যায়।”

ভাইজি সুস্মিতা রুদ্র পালের ক্ষেত্রে অবশ্য আর ঝুঁকি নিতে চাননি তিনি।

“অন্যান্য অনেক পেশার মতো এই পেশা থেকেও মেয়েদের সরে যাওয়ার কারণ হলো বিয়ে। তাই ভাইজির বিয়ের সময় একমাত্র শর্ত ছিল, মেয়েকে বিয়ের পর ঠাকুরের চোখ আঁকতে বাড়ি আসতে দিতে হবে,” মুচকি হেসে বলেছিলেন ভানু রুদ্র পাল।

মুক্তি পরামাণিক।
‘মেয়েরা দাম পায় না’
পঞ্চাশের কোঠায় থাকা মুক্তি পরামাণিকের সঙ্গে পটুয়া পাড়ার সম্পর্ক তিরিশ বছরেরও বেশি সময়ের। সম্প্রতি দুই ছেলের মধ্যে একজনকে হারিয়েছেন। তারপর হারিয়েছেন স্বামীকেও। এখন প্রতিমা অলঙ্করণের মধ্যে দিয়েই শান্তি খোঁজেন তিনি।

তিনি বলেছেন, “আমার স্বামীর দোকান শ্বশুরমশাইয়ের আমল থেকে। এত বছরে মেয়েদের তেমনভাবে সামনে এসে প্রতিমা তৈরি করতে দেখিনি। দু-তিনজন ছাড়া। কেউ কাজ শুরু করলেও বিয়ের পর কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। আসলে মেয়েরা দাম পায় না।”

নতুন প্রজন্ম
দুই নারী প্রতিমা শিল্পীকে নিজের অনুপ্রেরণা করে বড় হয়েছেন সুস্মিতা রুদ্র পাল। নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে তিনি একজন।

“বাবা শয্যাশায়ী হওয়ার পর প্রথমবার পেশাগতভাবে যখন ঠাকুরের চোখ আঁকছিলাম, তখন প্যান্ডেলের পাশে ভিড় জমে গিয়েছিল। মনে মনে আনন্দ হয়েছিল শুধু এটা ভেবেই যে প্রতিমা গড়ার ক্ষেত্রে নারী শিল্পীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।”

“আসলে মেয়েদের পর্দার আড়ালে রাখার চিন্তাটা অনেক পুরনো। বাইরে বেরিয়ে এসে তারা পুরুষ প্রধান পেশাকেই তার কাজের জায়গা বানাবেন এটা ভাবতে অসুবিধা হয়,” বলেছিলেন তিনি।

তার বেড়ে ওঠা কুমোরটুলিতেই। কাকিমা মালা পাল এবং তার মা মায়ারানি পালই তার আদর্শ। “দিদা বলতেন তুই ঠাকুরের চোখ না আঁকলে আমার ঠাকুর কেউ নেবে না। কাকিমাকেও দেখতাম প্রতিমা গড়তে,” বলেছিলেন তিনি।

তবে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করা এই যুবতী প্রতিমা শিল্পী হবেন সেই সিদ্ধান্তটা সচেতনভাবে নেওয়া। তার কথায়, “বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমি প্রতিমার চোখ আঁকতে শুরু করলাম ঠিকই। কিন্তু এই পেশাতে আসার সিদ্ধান্তটা সচেতনভাবে নেওয়া যাতে নতুন প্রজন্ম শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায়।”

কিন্তু সে অর্থে নতুন প্রজন্মের নারীরা এই পেশায় এগিয়ে আসছেন কি?

এর উত্তরে ভবতোষ পাল বলেন, “অন্যান্য পেশাতে মেয়েরা এগিয়ে এলেও প্রতিমা গড়ার ক্ষেত্রে আসে না তার একাধিক কারণ আছে। এই পেশাকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে থাকা প্রচলিত ধারণা তার মধ্যে একটা। আর অন্য কারণ হলো আজকাল ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটার শিখে ডিজিটাল মাধ্যমে নানান কাজ করছে। সাবেকি কাজ নিয়ে হয়ত তাদের উৎসাহও নেই।”

সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ মনে করেন প্রতিমা গড়তে নারী শিল্পীদের উৎসাহ দেওয়ার কাজ অনেকটাই সহজ করতে পারে পটুয়াপাড়া।

“পটুয়াপাড়ার শিল্পীরাই যদি নারীদের উৎসাহ দেন, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেন তবেই এর সমাধান হতে পারে।”

তেমন ভাবনা নিয়েই স্কুল গড়েছেন মালা পাল। তার কথায়, “প্রতিমা তৈরির শিল্প যাতে শেষ না হয়ে যায় আর বিশেষত মেয়েরা যাতে এই কাজ করে, তাই আমি একটা স্কুল খুলেছি। সেখানে মেয়েদের যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকি। আমার পথ চলা সহজ ছিল না কিন্তু তাদেরটা আমি সহজ করতে চাই।”

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক