পলান সরকার স্মরণে বাগাতিপাড়ায় একযোগে ৫৬টি স্কুলে দোয়া

বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি:

সদ্য প্রয়াত একুশে পদকপ্রাপ্ত পলান সরকার স্মরণে তাঁর জন্মস্থান নাটোরের বাগাতিপাড়ায় স্কুলে স্কুলে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১৩ হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও সাড়ে তিনশ’ শিক্ষক-কর্মচারী পলান সরকারের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। রোববার সকাল সোয়া নয়টায় বিদ্যালয়ের এসেম্বলী (সমাবেশ) শেষে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বাগাতিপাড়ায় জন্ম নেওয়া পলান সরকারের বই পড়ার আন্দোলনের গল্প তুলে ধরেন শিক্ষকরা। সেসব আলোচনায় পলান সরকারের বই পড়া আন্দোলনকে গতিশীল করতে জ্ঞানার্জনের জন্য বই পড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে এসব কর্মসূচী পালন করে বিদ্যালয়গুলো।

এদিন সকালে মূল অনুষ্ঠানটি হয় পলান সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি নেওয়া স্কুল বাগাতিপাড়া উপজেলার নূরপুর মালঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয়েই আলোকিত এই মানুষটি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আফরোজ্জামান নিপুনের সভাপতিত্বে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফাইজুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক মাহমুদা সুলতানা, পলান সরকারের ভাতিজা প্রভাষক আব্দুল হালিম, সমাজকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান মনি প্রমুখ পলান সরকারের স্মৃতি চারণ করে বক্তব্য দেন। সেখানে ওই বিদ্যালয়ে ‘পলান সরকার ভবন’ নামে একটি নতুন ভবনের নামকরণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়াও তার স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে নতুন ভবনে ‘পলান সরকার স্মৃতি পাঠাগার’ নামে একটি সংরক্ষিত কক্ষ রাখারও ঘোষণা করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আফরোজ্জামান নিপুন।

আলোচনা শেষে হাফেজ মোহাম্মদ রোকুনুজ্জামান দোয়া পরিচালনা করেন এবং ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা হাত তুলে রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা সুলতানা আক্ষেপ করে বলেন, আগামী ২০২১ সালে স্কুলের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে পলান সরকারকে প্রধান অতিথি হিসেবে রেখে তাঁকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মাননা দিতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে তা আর হয়ে উঠলো না। শিক্ষা কর্মকর্তা ফাইজুল ইসলাম বলেন, পলান সরকার বাগাতিপাড়া উপজেলায় জন্ম গ্রহন করেছেন এবং একটি স্কুলের ছাত্র ছিলেন গণমাধ্যমে এ খবর জেনে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে দোয়া ও আলোচনার জন্য বলেছেন। বই প্রেমী পলান সরকারের এ আন্দোলনের আলোয় আলোকিত হয়ে শিশু শিক্ষার্থীরাও যেন একদিন বই পড়ায় আগ্রহী হয় এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারে।

এর আগে পলান সরকারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছিলেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানুসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ।

উল্লেখ্য, একটানা ৩০ বছর ধরে নিজের টাকায় বই কিনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সবার হাতে বই পৌঁছে দিতেন পলান সরকার। সামাজিকভাবে অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘একুশে পদক’।
পলান সরকার ১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়ার নূরপুর মালঞ্চি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর মায়ের সাথে নানার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামে চলে যান। সেখানে শুক্রবার (১ মার্চ) তিনি মারা যান।

স/শা