শনিবার , ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

পরীমনির অনন্য উদ্যোগ

Paris
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৬ ১০:৩৯ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ বিনোদন ডেস্ক:

রঙ্গিন পর্দায় শিল্পীদের অভিনয় দেখে দর্শক বিনোদিত হন। মনে হয়, রঙ্গিন পর্দার মতই তাদের বাস্তব জীবনও রঙ্গিন। কিন্তু ক’জন শিল্পীর বাস্তব জীবন রঙ্গিন? পর্দায় হাস্য-রসাত্মক দৃশ্যের আড়ালে অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হন। অনেকেই হয়তো এ বিষয়টি জানেন না।

 

একটা সময় চলচ্চিত্র নিয়ে শিল্পী ও কলাকুশলীরা ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তখন কাজের অভাব ছিল না। বর্তমানে চলচ্চিত্রের কাজ কম থাকায় এরা বেকার। তাই তাদের অভাবটা যেন একটু বেশিই। চলচ্চিত্র জগৎ ভালোবেসে এ অঙ্গনের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়েছেন তারা। তাই অন্য কাজ না করে সিনেমার কাজের সন্ধানে প্রতিদিন এফডিসিতে এসে বসে থাকেন।

 

কয়েকদিন আগেই পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হলো। যাদের ‘লবণ আনতে পান্তা ফুড়ায়’ তাদের কাছে পশু কোরবানি দেয়াটা শুধুই স্বপ্ন। তাদের ইচ্ছে থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তারা হাত পেতে না পারেন চাইতে, না পারেন সহ্য করতে। বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না তাদের। এদের নিয়ে এফডিসি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ না নিলেও সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি এই অবহেলিত চলচ্চিত্রশিল্পীদের জন্য বিএফডিসিতে পশু কোরবানি দিয়েছেন। নিজে উপস্থিত থেকে তাদের মধ্যে মাংস বিতরণ করেছেন।

 

এ প্রসঙ্গে পরীমনি বলেন, ‘রোজার ঈদটা ঢাকাতে করি। কোরবানির ঈদ নানু বাড়িতে। আমি জানতাম না চলচ্চিত্রের কলাকুশলীরা এভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করেন। এটা জানার পরই আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এফডিসিতে কোরবানি দিয়েছি। যারা কোরবানি দিতে পারেননি, তাদের জন্যই এই উদ্যোগ।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘এফডিসিও আমার একটা পরিবার। এ পরিবারের সঙ্গে কোরবানি করতে পেরে অনেক ভালো লেগেছে। কাজটি করে আনন্দ পেয়েছি। আশা করছি প্রতিবছরই কাজটি করবো। চলচ্চিত্রের কলাকুশলীরাও আনন্দ পেয়েছে। তাদের এমন আনন্দ আর কখনও পেতে দেখেনি।’

 

পরীমনির এমন ঈদ উদযাপনে খুশি বিএফডিসির অবহেলিত সহকারী শিল্পীরা। যারা চিরকাল ‘অতিরিক্ত’ নামেই পরিচিত। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার কোরবানির দিন পরীমনির সঙ্গে এফডিসিতে ছিলেন। তিনি পরীমনির এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘চলচ্চিত্রে দীর্ঘ একটা সময় আমি পার করেছি। অনেক শিল্পী চলচ্চিত্রে এসেছেন আবার চলেও গিয়েছেন। কিন্তু কখনও ‘এক্সট্রা’ শিল্পীদের জন্য এমন উদ্যোগ দেখিনি। এর মাধ্যমে পরীমনি একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’

 

Pori_Moni_3

 

এ প্রসঙ্গে শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ওমর সানী বলেন, ‘পরীমনির এমন উদ্যোগে আমরা ভীষণভাবে গর্বিত।  তিনি খুব ভালো একটা কাজ করেছেন। যা অনেক আগেই আমাদের করা উচিৎ ছিলো। তার এমন একটি উদ্যোগ আমাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। ’

 

বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান বলেন, ‘আমি কখনও দেখিনি কোন শিল্পী এফডিসিতে কোরবানি দিয়েছেন। পরী অনেক ভালো একটা কাজ করেছে। জানি না কারো চোখ খুলেছে কি না। তবে পরী আমার চোখ খুলে দিয়েছে।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত। আমি চেষ্টা করবো শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের জন্য এফডিসিতে কোরবানি দেয়ারর।’

 

মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে চলচ্চিত্রে সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেন বানু বেগম। বর্তমানে তার কাজের ব্যস্ততা কমে গেছে। তিনি প্রতিদিন এফডিসিতে আসেন। কোরবানি করার মত সার্মথ্য তার নেই। তিনিও পরীমনির পশু কোরবানির মাংস নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এফডিসির মানুষ। নিজেরো কোরবানি করতে পারি না। মান-ইজ্জতের কারণে কারোর বাসায় গিয়ে মাংস চাইতে পারি না। দেখা গেছে ঈদের দিন টোকাইদের কাছ থেকে দুই-এক কেজি মাংস কিনে খাই। এবার নায়িকা পরীমনি আমাদের জন্য এফডিসিতে কোরবানি দিয়েছেন। তিনি নিজ হাতে আমাদের মাংস দিয়েছেন। মনে হয়েছে আমরাই কোরবানি দিয়েছি। প্রতি বছর কোরবানির দিন বাসায় অথবা এফডিসিতে থাকি। কেউ আমাদের জন্য কোরবানি দেয় না। পরীমনি আমাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। আমাদের হাতে টাকা দিয়েছেন। তার জন্য আমি মন থেকে দোয়া করছি।’

 

শুটিং ইউনিটের দারোয়ানের কাজ করেন রেশমি। তিনি প্রায় চল্লিশ বছর চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘গরুর মাংসের দাম বেশি থাকায় সারা বছর তেমন  খাওয়া হয় না। কোরবানি এলেই গরুর মাংস খেতে পারি। প্রতি বছর কোরবানির রাতে কম দামে টোকানো মাংস কিনে খাই। এবার নায়িকা পরীমনি এফডিসিতে কোরবানি দিয়েছেন। সেখানে চার কেজির মত মাংস পেয়েছি। পরীমনির জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক।’

 

এফডিসিতে ৭০-৭৫ জন লোকের মাঝে গরুর মাংস বিতরণ করেন পরীমনি। এসময় কাজটি করতে সহযোগিতা করেছেন ম্যানেজার ও কাস্টিং ডিরেক্টর মেহেদি, পরিচালক সমিতির কর্মচারী ইমরানসহ অন্যান্যরা।

সূত্র: রাইজিংবিডি

সর্বশেষ - বিনোদন