পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন, শিকার পদ্ধতি পাল্টে ফেলল সিংহ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

ক্ষুদ্র তবে আক্রমণাত্মক প্রজাতির পিঁপড়ার কারণে পরোক্ষভাবে শিকার পদ্ধতি পাল্টে ফেলতে বাধ্য হয়েছে বনের রাজা সিংহ। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গবেষণার বরাতে আমেরিকান সায়েন্স সাময়িকীতে ২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, এক ধরনের খুদে আক্রমনাত্মক পিঁপড়ার কারণে কেনিয়ার সাভানায় নিজেদের শিকার পদ্ধতি বদলে ফেলেছে পশুরাজ, চিরাচরিত শিকার পদ্ধতি বা স্বভাবে বড় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয় সেই পিঁপড়ার তুলনায় এক হাজার গুণ বিশালাকার সিংহ। সাধারণত সিংহ শিকারের জন্য জেব্রাকে তাড়া করলে জেব্রার ধরাশায়ী হওয়া অবশ্যম্ভাবী এবং এতে তাতে বাধা দেওয়ার কেউ থাকে না। তবে গবেষকরা দেখেছেন, অতি ক্ষুদ্র প্রাণী পিঁপড়ার পরোক্ষ বাধায় পণ্ড হচ্ছে সিংহের জেব্রা শিকার। বনের রাজা বাধ্য হচ্ছেন বিকল্প শিকারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার সাভানা অঞ্চলের তৃণভূমিতে এক প্রজাতির পিঁপড়ার আর্বিভাবে সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে সেখানকার বাস্তুসংস্থান। সেখানকার কাঁটাযুক্ত একাশিয়া জাতের হুসলিং থর্ন ট্রি গাছে বাস করে এক ধরনের পিঁপড়া, যাদের একাশিয়া পিঁপড়া বলা হয়। একাশিয়া পিঁপড়া হাতি বা অন্য কোনো তৃণভোজী প্রাণী থেকে রক্ষা করে একাশিয়া গাছকে।

এই পিঁপড়া আরও ভয়ংকর আক্রমণাত্মক প্রজাতির পিঁপড়ার আক্রমণে বিলীন হয়ে যায়। ফলে এই অঞ্চলের একাশিয়া গাছ খেয়ে সাবাড় করে ফেলে হাতি। পাল্টে যায় তৃণভূমির চেহারা। এতেই সমস্যায় পড়ে যায় সিংহ। এসব গাছের আড়াল কাজে লাগিয়ে জেব্রা শিকার করত সিংহ। এখন বিশালাকার সমতল ভূমিতে লুকানো জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না সিংহ। এতে করে দূর থেকে সিংহকে দেখে পালিয়ে যেতে থাকে জেব্রা। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে আরও কঠিন এবং বিপজ্জনক শিকারের দিকে যেতে বাধ্য হচ্ছে এই অঞ্চলের সিংহরা। নতুন শিকারের নাম মহিষ, যা শিকার করতে কয়েকটি সিংহের যৌথ প্রচেষ্টা লাগে।

এ বিষয়ে পরিবেশ ও প্রাণীবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনালের বাস্তুসংস্থান বিজ্ঞানী মেরেডিথ পামার বলেন, প্রতিটি বাস্তুসংস্থান কতটা জটিল হতে পারে তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ উঠে এসেছে এই গবেষণাপত্র। বাস্তুসংস্থানের একটি উপাদান সরিয়ে নিলে প্রকৃতি সব প্রাণীকুলের ওপর যে প্রভাব পড়ে সেটাই উঠে এসেছে এই গবেষণায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব আফ্রিকার হাজার হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে আছে হুসলিং থর্ন ট্রি নামের একটি গাছ। স্থানীয় পিঁপড়াদের (অ্যাকাশিয়া অ্যান্টস) খাদ্য সরবরাহ করে এই গাছ। বিনিময়ে তৃণভোজী প্রাণীদের হাত থেকে গাছকে রক্ষা করে এসব পিঁপড়া। আফ্রিকান বুশ হাতির নাকের ছিদ্র দিয়ে শরীরের ভেতরে ঢুকে পড়ে এই অ্যাকাশিয়া পিঁপড়া।

সম্প্রতি পাল্টে যায় সেই চিত্র। এই পিঁপড়ার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। ২০০০ সালের শুরুর দিকে আরও হিংস্র প্রজাতির বড় মাথার পিঁপড়ার (বৈজ্ঞানিক নাম ফেইডোল মেগাসেফালা) আনাগোনা দেখা যায় অঞ্চলটিতে। ধারণা করা হয়, ভারত মহাসাগরের কোনো দ্বীপ থেকেই কেনিয়ায় আগমন ঘটে এই প্রজাতির পিঁপড়ার। পিঁপড়াগুলো একাশিয়া গাছের পিঁপড়াদের আক্রমণ করে এবং এদের ডিম ও বাচ্চা খেয়ে ফেলে। এতে হাতির কাছে একশিয়া বা বাবলা গাছ হয়ে পড়ে অরক্ষিত।