পরিবেশবান্ধব মেয়র: বিপর্যয়রোধে রাজশাহীর পুকুরগুলো সংরক্ষণ করুন

গোলাম সরোয়ার:

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ২০১২ এবং ২০২১ সালে “জাতীয় পরিবেশ পদক” অর্জন করেছে। এ ছাড়া ২০২০ সালে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে রাজশাহী অর্জন করে “Environment friendly city of the year-2020 সম্মাননা। এই অর্জনগুলো সম্ভব হয়েছে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং তাঁর পারিষদবর্গের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে। সেই কারণে তিনি পরিবেশবান্ধব মেয়র হিসেবে সমধিক পরিচিত। তারই নমুনা পাওয়া যায় রাজশাহী নগরীর “বিহারীবাবুর পুকুর” ভরাট বন্ধে তাঁর জোরালো ভূমিকা দেখে। গত ২০ জুলাই ২৪ নং ওয়ার্ডের বিহারীবাবুর পুকুরটি ভরাট বন্ধের প্রতিবাদে এলাকাবাসী মানববন্ধন শেষে সরাসরি মেয়রকে স্মারকলিপি দেন। এসময় মেয়র এলাকাবাসিকে আশ্বস্ত করে বলেন, পুকুরটি যাতে ভরাট করতে না পারে, সেজন্য দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে যাতে পুকুরটি সংরক্ষিত হয় ও সেটির নাম বিহারীবাবুর পরিবর্তে “বাংলাবাবু” করা যায় তার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাঁর এই প্রস্তাবে এলাকাবাসি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়ে পুকুরটি সংরক্ষণের আওতায় এনে সংস্কারের দাবি জানান।

কিন্তু এত কিছু অর্জনের পরেও গত ৩০ বছরে রাজশাহী মহানগরীর প্রতিবেশব্যবস্থা ধ্বংসের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এক গবেষণা ফলাফলের এই উদ্বেগজনক তথ্য সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই সময়ের মধ্যে এখানে জলাশয় (পুকুর,দিঘি,খাল,বিল ডোবা) কমেছে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। তাতে করে এখানকার মানুষ কোটি কোটি টাকার সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অষ্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়, কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়,কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা রাজশাহীসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট নগরের উপর গবেষণা করে এমন তথ্য পেয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ইকোলজিক্যাল ইনফরমেটিকস্’-এ এই গবেষণা প্রকাশিত হয় বলে ২৮ জুলাই প্রথম আলোর খবর থেকে জানা গেছে। গবেষণা দলের সদস্য ও অষ্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রথম আলো জানায়, কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থে এসব জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে, ধ্বংস করা হচ্ছে সবুজ এলাকা। এতে শহরগুলোতে দ্রুত তাপমাত্রা বাড়ছে ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।

রাজশাহী মহানগরীতে গত ৩০ বছরে পুকুর, জলাশয় অনেক কমেছে, এ খবরতো সত্য। অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পুকুর কমে যাওয়া।পুকুর ভরাটের ফলে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়। যার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও পানি নিষ্কাশন ঠিকমত হয় না।সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশবিদদের মতে, পুকুরের পানি অনেক ধরনের পরিবেশবান্ধব গাছপালা এবং জীবজন্তুর জীবনপ্রণালিতে সহায়কের ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।ভূগর্ভে পানি ঢোকার একটা প্রাকৃতিক পথ হলো পুকুর, দিঘি বা এ ধরনের জলাশয়সমূহ। এই পথ সচল থাকলে পানির স্তর একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানে থাকে, যা সকল প্রাণীকুলকে বেঁচে থাকতেও সহায়তা করে। উপরন্তু অনেক এলাকায় পুকুর ও দিঘিগুলো পানি ধরে রাখার ও সরে যাওয়ার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করে। ফলে বৃষ্টির সময় বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকামুক্ত থাকে ও নানা রকম ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়। সার্বিক বিবেচনায় পুকুর, দিঘি ভরাট হয়ে যাওয়া পরিবেশের জন্য অশনিসংকেত।

বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় জলাভূমিকে পৃথিবীর কিডনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁদের বক্তব্য মতে, জলাভূমি পৃথিবীতে জীবন টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। একইসাথে পানি সম্পদ বিশুদ্ধ ও ভূগর্ভস্থ জলাধার পুনর্ভরাট করে। তাছাড়া বন্যা ও খরার বিরুদ্ধে জলাভূমি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে।জীববৈচিত্র্য এবং কার্বনের আধার হিসেবেও জলাভূমি সহায়ক। আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জলাশয়, জলাভূমি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত আছে। নগরাঞ্চলের জলাভূমিগুলো নাগরিক জীবনের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন সবুজ প্রকৃতির পরশ জোগায়। মহানগরের ভবিষ্যত টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে জলাভূমিগুলোকে অবশ্যই সমন্বিত করা প্রয়োজন। জলাভূমি ব্যতীত আদর্শ ও নান্দনিক নগর পরিকল্পনা করা সম্ভব নয় বলে একজন নগরবিদ জানান। তিনি বলেন, একটি নগর এলাকায় ১২-১৫ ভাগ জলাশয় এলাকা থাকা দরকার। কিন্তু রাজশাহী মহানগরীতে তার চেয়ে অনেক কম জলাশয় আছে।

রাজশাহীকে এক সময় পুকুরের শহর বলা হতো। শহরের মধ্যে এতো অধিকসংখ্যক পুকুর, দিঘি, জলাশয় দেশের আর অন্য কোন শহরে ছিল না।’হেরিটেজ, রাজশাহীর’ তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৬০ সালে এই শহরে ৪ হাজার ২৩৮টি পুকুর ও জলাশয় ছিল। ১৯৮১ সালের এক জরিপে জলাশয়ের সংখ্যা পাওয়া যায়, ২ হাজার ৭১টি। হেরিটেজের উল্লেখ মতে, ২০১২ সাল পর্যন্ত একটি পরিসংখ্যানে এই শহরে ১২ কাঠার উর্ধে যে পুকুর ও জলাশয় ছিল, এগুলোর মধ্যে ২৬০টি পুকুর দিঘি বিগত ৪০ বছরের মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। ১০ কাঠা থেকে ১৫ কাঠার মধ্যে যে পুকুরগুলো ছিল। এগুলোর সংখ্যা ১ হাজারেরও উর্ধে। এগুলোও এই সময়ের মধে ভরাট হয়েছে। ২০১৯ সালের জরিপে দেখা যায়, রাজশাহীতে ১২ কাঠা বা তার বেশি আয়তনের পুকুর জলাশয় ছিল মাত্র ১২০টি। এরপর থেকে আরো বেশ কয়েকটি পুকুর প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভরাট হয়ে গেছে। কয়েকটি পুকুর কিছুটা ভরাট করে স্থানীয় এলাকাবাসীর আন্দোলনের চাপে, পেপার পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর মালিকপক্ষ ভরাট করা স্থগিত রেখেছে। আরো কয়েকটি পুকুরের মালিক নানা কৌশল অবলম্বন করে ভরাটের চেষ্টা করছে বলে প্রচার রয়েছে। এমনিতেই রাজশাহীতে জলাশয়ের প্রায় ৯৭.১৬ শতাংশ দখল ও ভরাট হয়ে গেছে এবং পানির স্তর আশংকাজনক হারে নিচে নেমে গেছে। এরপরও যদি এইভাবে নগরীর পুকুরগুলো ভরাট হতে থাকে, তবে অতি খরাপ্রবণ রাজশাহী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। সরকার দেশ রক্ষার জন্য, পরিবেশ বাঁচানোর জন্য, মানুষকে শান্তিতে বসবাস করার জন্য, জলাশয় জলাভূমি রক্ষার জন্য আইন করেছে। ভরাট বন্ধে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অফিস আদেশ রয়েছে। উপরন্তু উচ্চ আদালত ভরাট বন্ধ রাখার নির্দেশও দিয়ে রেখেছেন। তা সত্বেও সবকিছু উপেক্ষা করে, জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে একশ্রেণির অতিলোভী, অমানবিক মালিকপক্ষ ক্ষমতাসীন কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় পুকুর ভরাট করেই চলেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে অনেকে আদালত অবমাননার সামিল বলে মনে করছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এ পরিষ্কার বলা আছে,”অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট করা যাইবেনা”। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী কোন পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনভাবে ব্যবহার, ইজারা,ভাড়া বা হস্তান্তর বেআইনি। ২(চ) ধারায় মহানগর, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকায় অবস্থিত ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনে জেল, জরিমানারও বিধান আছে। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ। এছাড়া ২০০০ সালের ২২মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন মুখ্যসচিব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়,”কোন অবস্থাতেই খাল-বিল,নদী-নালা,পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না।এমনকি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে খাল-বিল,পুকুর, নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয়, জলাধার বন্ধ করা যাবেনা”।

ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার এতসব আইন থাকলেও কোনো একক সংস্থার কাছে বাস্তবায়নের ক্ষমতা না থাকায় জলাশয় ভরাট, দখল প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে আইনের বাস্তবায়ন শিথিলভাবে হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়নই হচ্ছে না। এইসব দিক ভেবে, জাতির সার্বিক মংগলের কথা চিন্তা করে মানুষের শেষ ভরসাস্থল মাননীয় হাইকোর্ট দেশের সব জলাভূমি রক্ষা,উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করার নির্দেশ দেন। ১৮ জুলাই ২০২১ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রায়ে দেশের সব জলাভূমি রক্ষায় ১১টি নির্দেশনা দেন ও একই সাথে জলাভূমিকে রাষ্ট্রের সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। জলাভূমি রক্ষা,উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় পৃথক আইন প্রণয়নও করতে বলেন আদালত। একই সঙ্গে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জলাভূমি রক্ষার ওপর প্রতি দুই মাস পর পর এক ঘন্টার ক্লাস নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।অপরদিকে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে বলা আছে,”রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন”। সাংবিধানিকভাবে জলাভূমি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের থাকা সত্বেও আইনের দুর্বল দিকগুলোর ফাঁক ফোকর গলিয়ে সুবিধাবাদীরা পুকুর ভরাট করার সুযোগ পাচ্ছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মহানগরীর ১২০টি পুকুরের মধ্যে ২২টি পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণ এবং সংস্কারের একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে অনেকদিন হলো। কিন্তু তার কোনো খবর নেই। ১০৭ ধরনের কাজের বিপরীতে “রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের” নামে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। অনেককে বলতে শোনা যায়, এত টাকা খরচ করার মত রাজশাহীতে জায়গা কোথায়। অথচ দুঃখের বিষয়, অতি গুরুত্বপূর্ণ ২২টি পুকুর সংরক্ষণ প্রকল্পটি কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্বহীনভাবে মন্থর গতিতে এগুচ্ছে। যতটুকু জানতে পেরেছি, সিটি কর্পোরেশন আইন, ২০০৯ এ ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর, দিঘি, সংক্রান্ত আইনের কিছু দুর্বল দিক রয়েছে। আইনটি আরো কঠোর করা প্রয়োজন বলে পরিবেশবিদদের অভিমত। অপরদিকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (আরডিএ) ‘রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’-এর জন্য ১৬৫টি পুকুর ও জলাশয় চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১০টি পুকুর সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য সম্ভবতঃ বছর দুয়েক হলো তারা একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এর অগ্রগতির কোনো আশাব্যঞ্জক খবর নেই। গত কয়েক বছর আগে আরডিএ নগরীর পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে প্রচারপত্র বিলি করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। প্রচার পত্র বিলির পর আরো কিছু পুকুর ভরাট হয়েছে, কিন্তু তাদের লক্ষনীয় কোন ভূমিকাই নগরবাসি দেখেনি। একই কথা পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধেও। তাদের কাছে অভিযোগ পত্র দেয়া হলেও নানা অজুহাতে তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যান। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এ পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে, এ ধরনের তথ্য আমাদের জানা নেই। পুকুর, জলাধার রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে অনেকটা সফলকাম হওয়া যাবে বলে অনেকে মনে করেন। এগুলো পর্যালোচনা করে বুঝা যায়, সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা,বিদ্যমান আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও মনিটরিংয়ের সীমাবদ্ধতা, অদূরদর্শিতার কারণে মহানগরীর অনেক পুকুর, জলাধার ধ্বংস হয়ে গেছে। সচেতন না হলে ধ্বংস আরো হবে।

সরকার এত আইন করে দেওয়ার পরও, উপরন্তু আদালতের নির্দেশ থাকা সত্বেও জলাশয়,পুকুর, জলাভূমি কোনভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। একের পর এক ভরাট হয়েই যাচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে বুঝা যাচ্ছে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং অঙ্গীকার ছাড়া সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। এখান থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারকে মালিক পক্ষের কাছ থেকে অতি দ্রুত পুকুরগুলোকে কিনে নিয়ে সংরক্ষণ করে সংস্কার করার পাশাপাশি এই খাতের বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া অত্যাবশ্যক। এই অন্তর্বর্তী সময়ের মধ্যে অতি খরাপ্রবণ এলাকা হিসেবে রাজশাহীকে অগ্রাধিকার দিয়ে এখানকার পুকুরসমূহ রক্ষায় আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের দাবি এলাকাবাসীর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে ‘পরিবেশ সুরক্ষা” একটি। তিনি সম্প্রতি গণভবনে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের নক্সা পর্যবেক্ষণকালে “জলাধার সংরক্ষণ,পর্যাপ্ত সবুজ এলাকা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেই সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেন”।

রাজশাহী সিটি মেয়রকে দেশবাসী পরিবেশবান্ধব মেয়র হিসেবেই জানে। কিন্তু কিছু ব্যক্তিস্বার্থান্ধ অতিলোভী অসচেতন পুকুর মালিক,পরিবেশ বিনষ্টকারী ব্যক্তি এবং কিছু অসৎ, দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাঁর এই অর্জনকে ম্লান করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। রাজশাহীবাসি এইসব দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ। তাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। তাদের চাকরি আজ আছে, কাল নেই। কিন্তু নগর পিতার জন্মস্থান রাজশাহী। তিনি একজন প্রশংসনীয় জনপ্রতিনিধি। তাঁর নাড়িছেঁড়া টান, গভীর মমত্ববোধ রয়েছে রাজশাহীর প্রতি। তিনি রাজশাহীর গর্বিত সন্তান। তাঁর জন্মস্থান আজ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। এমনিতেই রাজশাহী অতি খরাপ্রবণ এলাকা। আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন।মরুময়তার পদধ্বনি শোনা যায়। তার উপর একশ্রেণির পরিবেশ অসচেতন স্বার্থান্ধ মানুষ পবিত্র সংবিধান, আদালতের নির্দেশ, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, বিভিন্ন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুকুর, দিঘি ভরাটসহ গাছপালা নিধন এবং নানা দুষণ কাজে লিপ্ত রয়েছে। বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রাজশাহীকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে তারা।পরিবেশবান্ধব নগর পিতা রাজশাহীবাসির একমাত্র ভরসাস্থল।তারা পরিবেশ ধ্বংসকারি ঐসব দুর্বৃত্তদের অপতৎপরতাকে রুখে দিয়ে ‘বাংলাবাবু’ পুকুরসহ অন্যান্য পুকুরগুলো সংরক্ষণ এবং সংস্কারের জন্য প্রেরণকৃত প্রস্তাব যাতে দ্রুত অনুমোদন পায়,তার আপ্রাণ চেষ্টা করার জন্য আহ্বান জানান।

লেখক: সাংবাদিক ও কলাম কলামিস্ট