পরিবর্তিত করোনাভাইরাস এবং এর মোকাবেলা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

বিগত এক বছরেরও অধিক কাল ধরে করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১১ কোটি ১৩ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ২৫ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। সম্প্রতি করোনা ভ্যাকসিন যখন আশার আলো বয়ে আনল তখনই এই ভাইরাসের  gene mutation-এর খবর পাওয়া গেল; প্রথমে যুক্তরাজ্যে, তারপর দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ব্রাজিলে। এই খবর আলোড়ন তুলেছে সংবাদমাধ্যমে, বিজ্ঞানীসমাজে এবং অনেক পশ্চিমা দেশের সরকার এরই মধ্যে এর প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে অনেকে এই  mutation-এর বিষয়ে উদাসীন থাকলেও যুক্তরাজ্যে  variant-lineage B117-এর ব্যাপক আবির্ভাব তাদের উদ্বিগ্ন করেছে। ভাইরাসের  gene-এর কোন কোন mutation উদ্বেগজনক সেটা জানতে ভাইরাসের সামগ্রিক পরিবর্তন এবং এর  gene-এর গঠন প্রকৃতি জানা প্রয়োজন। ভাইরাসের  replication-এর জন্যই  mutation-এর উৎপত্তি হয়। সাধারণত  DNA ভাইরাসের তুলনায়  RNA ভাইরাসে বেশি  mutation হয়। তবে অন্য সব  RNA ভাইরাসের মধ্যে করোনাভাইরাসে কম mutation হয়। কারণ এতে একটা enzyme আছে, যেটা  replication-এর সময়  gene-এ যে ত্রুটি হয় তা সংশোধন করে।

Mutation-এর ফলে কি পরিবর্তন হবে সেটা নির্ভর করে  natural selection-এর ওপর। ভাইরাসের যেসব mutation-এর প্রজন্ম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মানুষের প্রতিরোধক্ষমতা এড়াতে সহায়তা করে, সেসব mutation বাড়তে থাকে।

মহামারি করোনাভাইরাসে প্রথম যে  mutation পাওয়া গেছে সেটা হচ্ছে  mutation D614 এ, যেখানে  spike protein-এর ৬১৪ পজিশনে  aspartic acid, glycine-এ পরিবর্তিত হয়েছে।  বেহব অনুক্রমে পরিবর্তন এলে তাকে  variant বলা হয়। Variant ভাইরাসের সংক্রমণ ও উগ্রতা ভিন্ন হয়। করোনাভাইরাসের variant-গুলো পর্যালোচনা করে দেখতে হবে যে এগুলো কী প্রকৃতিগতভাবে হয়েছে, না এটা একটা আকস্মিক ঘটনা (chance)। যদি দেখা যায়, এটা প্রকৃতিগতভাবে হয়েছে, তাহলে দেখতে হবে কোন  mutation বারবার ঘটছে এবং এটা ভাইরাসের জীবনপ্রবাহে সহায়তা করছে কি না অর্থাৎ এই  mutation এটার সংক্রমণ এবং উগ্রতা বাড়াচ্ছে কি না?

Spike D614G mutation প্রথম আবিষ্কার হয় গত বছরের মার্চ মাসে। এটা প্রকৃতিগতভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।

Molecular biology journal  ‘Cell’-এ প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে যে এই mutant ভাইরাস অনেক দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সম্প্রতি ‘Nature’ এবং ‘Science’ জার্নালে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে যে পশুদের মধ্যেও এই  mutant ভাইরাসের সংক্রমণ অনেক দক্ষতার সঙ্গে ঘটে।

গত বছরের বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কে সরহশ (বেজির মতো দেখতে) ভধৎস-এ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। তখন এটাও দেখা যায় যে এই সংক্রমণ মানুষ থেকে  mink, mink থেকে  mink এবং  mink থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। সংক্রমিত  mink-এর করোনাভাইরাসে  Y453F mutation ধরা পড়েছে, এই  mutation রোগীর ACE2 receptor-এ বাঁধন মজবুত করে। ডেনমার্কে প্রাপ্ত একটা  variant-এর নাম  cluster 5, যেটাতে ভিন্ন তিনটা  mutation পাওয়া গেছে  spike protein-এ।

Mink-এ করোনাভাইরাসজনিত রোগের উপস্থিতি উদ্বেগজনক। কারণ পশু থেকে অন্যান্য পশুতে এবং মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

Lineage B117 mutant করোনাভাইরাস দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইংল্যান্ডে করোনা রোগীদের মধ্যে ২৮ শতাংশ এই mutant দ্বারা আক্রান্ত এবং সংক্রমণের হার ৫৬ শতাংশ বেশি দ্রুত। অধিক দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস রোধে আরো বেশি করে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যেমন—মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা।

Lineage B117-এর আটটি mutation-এর কথা জানা গেছে ভাইরাসের  spike glycoprotein-এ। যার মধ্যে রয়েছে N501Y receptor binding domain -এ,  deletion 69-70, এবং  P681H fvBivGmi  furin cleavage site-এ।

501 Y spike variant মানুষের কোষের  ACE2 receptor-এ বেশি শক্ত করে সংযুক্ত হতে পারে। বর্তমানে  N501Y mutant ভাইরাস দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

করোনাভাইরাসের  mutation-গুলো মূলত spike protein-এ, এই প্রোটিনের মাধ্যমে ভাইরাস মানুষের কোষের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং ভ্যাকসিনজনিত antibody-র টার্গেটও এই প্রোটিন। এখন উদ্বেগের বিষয় এই যে mutation-জনিত spike protein-এর পরিবর্তন ভ্যাকসিন  antibody-কে এড়িয়ে যেতে পারে। কারণ সব ভ্যাকসিনই এই  spike protein দিয়ে তৈরি করা। তবে এটা হতে পারে, ভ্যাকসিন যেহেতু সমগ্র spike protein দিয়ে তৈরি, একটি বা দুটি ক্ষুদ্র অংশের  mutation সম্ভবত এর সম্পূর্ণ প্রতিরোধক্ষমতা বিনষ্ট করতে পারবে না এবং আমরা সেটাই আশা করব।

মূলকথা হচ্ছে, ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে পারলে এর mutation-ও নিয়ন্ত্রিত হবে। তাই পৃথিবীর সব মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। এবং  hard immunity না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। এটা আপাত নৈরাশ্যজনক মনে হলেও এটা সত্য যে মানুষের জয় হবেই।

 

লেখক : সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ, সুমা বারবারটন হসপিটাল, ওহিও , যুক্তরাষ্ট্র। সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, নর্থ ইস্ট ওহিও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র। ফেলো, যুক্তরাষ্ট্র সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ সমিতি। সম্পাদনা পরিষদ সদস্য, জার্নাল  Infectious Diseases in Clinical Practice.

সূত্র: কালেরকন্ঠ