পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নতুন ভবন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: 

রাজধানীর সেগুন বাগিচায় অবস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান ভবনটি অনেক পুরনো। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ ভবনের পেছনে অবস্থিত এনেক্স ভবন ও কনস্যুলার ভবনও অনেক পুরানো। এমনকি, এ ভবন দু’টি ভূমিকম্প সহনীয়ও নয়। এ ছাড়া, বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনের বিভিন্ন কর্মকর্তার অফিস কক্ষ মানসম্পন্ন নয়। শুধু তাই নয়, এই ভবনগুলোয় আন্তর্জাতিক মানের কোনও সভাকক্ষও নেই। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের সভাকক্ষের স্বল্পতা দূর করতে একটি আধুনিক সুবিধাসম্বলিত, নান্দনিক পররাষ্ট্র ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভূমিকম্প সহনীয় নতুন ভবন নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান চত্বরে একটি বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ (১ম পর্যায়)” শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। সেগুনবাগিচায় মোট ৩ দশমিক ২৪ একর জমিতে এ ভবন নির্মিত হবে।

জানা গেছে, নতুন ভবন নির্মিত হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য আধুনিক অফিস কক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের সভাকক্ষের স্বল্পতা দূর হবে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সভাকক্ষে থাকবে আধুনিক সুবিধাসম্বলিত যন্ত্রপাতি। ভবনটি হবে নান্দনিক, যার মাধ্যমে বহিঃবিশ্বের কূটনীতিক, রাষ্ট্রীয় অতিথি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ যেমন সহজ হবে, তেমনি তাদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও বাড়বে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়যের সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার রমনায় অবস্থিত সরকারের প্রধান প্রশাসনিক দফতর বাংলাদেশ সচিবালয়ের বাইরে সেগুন বাগিচায় অবস্থিত পররাষ্ট্র ভবন। যেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করেন। বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার গুরুদায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত। বহিঃবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও ভাবমূর্তি এ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক, রাষ্ট্রদূত ও পর্যটকদের এ মন্ত্রণালয়ে আগমন ঘটে এবং দ্বিপাক্ষিক অনেক বিষয় নিয়ে সভা-সেমিনার হয়। কিন্তু এই মন্ত্রণালয়ের প্রধান ভবনটি খুবই পুরাতন (ব্রিট্রিশ আমলে নির্মিত)। এ ছাড়া, এ ভবনের পেছনে অবস্থিত এনেক্স ভবন, কনস্যুলার ভবনও পুরাতন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভূমিকম্প সহনীয়তার হিসেবে ভবনটির কাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্যাম্পাসে মোট জমির পরিমাণ ৩ দশমিক ২৪ একর। এই জমিতে ৪টি ভবনেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা আধুনিক বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সূত্র আরও জানায়, এই চারটি ভবনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন কক্ষ ও সভাকক্ষ সংকট থাকায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সভা বা সেমিনার এই মন্ত্রণালয়ে করা সম্ভব হয় না। কক্ষ সংকট থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে একটি নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। তাই গ্রহণ করা হয়েছে প্রকল্পটি। এই প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কম্পাউন্ডে ১টি ৮তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মিত হবে। পরবর্তীতে এর পাশাপাশি বিদ্যমান পুরান ভবনের স্থলে একটি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত আন্তর্জাতিক মানের ২০তলা এনার্জি অ্যাফিসিয়েন্ট গ্রিন বিল্ডিং অফিস ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।  এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কম্পাউন্ডে একটি ৮তলা ও ১টি ২০তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের জন্যে স্থাপত্য অধিদফতর কর্তৃক নকশা প্রণয়নপূর্বক প্রাথমিক অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য নেওয়া প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের কাজের সুবিধার্থে প্রথম পর্যায়ে ৮তলা ভবনটি নির্মাণের লক্ষ্যে আলোচ্য প্রকল্পটি ৬১ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হলে চলতি বছরের ১৯ জুলাই প্রকল্পটির বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বা পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কিছু সিদ্ধান্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। বর্তমানে পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আর প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, স্বাধীনতার এতো বছর পেরিয়ে গেলেও এদেশে এখনও পর্যন্ত একটি আধুনিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবন বা সে রকম একটি অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। বিদ্যমান পররাষ্ট্র ভবনের অফিস কক্ষ আন্তর্জাতিক মানের নয়। এখানে নেই কোনও আধুনিক সুবিধাসম্বলিত সভাকক্ষ। বর্হিবিশ্বে একটি নান্দনিক পররাষ্ট্র ভবন নির্মাণের খুবই প্রয়োজন ছিল। যার মাধ্যমে বহিঃবিশ্বের কূটনীতিক, রাষ্ট্রীয় অতিথি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে দেশের ভাবমূর্তি উন্নত হয়।

প্রকল্প বিবরণে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৮তলা ভিতের ওপর ৮ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে।  যার প্রতিটি ফ্লোরের মোট আয়তন হবে ৮ হাজার ৪৮ বর্গমিটার। ৩১৬ টন এসি স্থাপন করা হবে। থাকবে অগ্নি শনাক্তকরণ ও নির্বাপণ ব্যবস্থা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল  জানিয়েছেন, আধুনিক সুবিধাসম্বলিত পররাষ্ট্র ভবন এখন সময়ের দাবি। কারণ বর্তমান পররারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবনটি পুরনো। তাই বর্হিবিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এ ধরনের একটি আধুনিক ভবন নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা একনেক অনুমোদন দিয়েছে। আশা করছি, আগামী নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের মেয়াদকালের কোনও এক সময়ে এই নতুন ভবনে কাজ শুরু করতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে এই কম্পাউন্ডে ২০ তলা বিশিষ্ট আরও একটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের, যার নকশাও অনুমোদন হয়ে আছে।’