পবা-মোহনপুরের মানুষ প্রকৃত একজন বন্ধু পেতে পারে

মোঃ মুকুল হোসেন :
গত বছরের নভেম্বর মাসে আমার একটা লেখা প্রকাশ হয়েছিলো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। ঐ লেখার প্রধান দাবি ছিলো, আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাদের যাতে মুল্যায়ন করা হয়।

বছরের পর বছর যারা কোন কিছু পাওয়ার আশা না করে রাজনীতি করে গেছেন চেতনাকে বুকে ধারণ করে, তাদের মূল্যায়ন করার দাবি রেখেছিলাম। আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে মনে হয়, যারা হৃদয়জুড়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আঁকড়ে ধরে আছে এমন আওয়ামী লীগ কর্মীরা অনেকেই উপেক্ষিত বহু বছর ধরে। এইসব মানুষগুলোকে নিয়েই আমার সেই লেখার শিরোনাম ছিলো ‘আসাদদের মূল্যায়ন করার এখনই সময়’।

আমার জন্য খুশির খবর হলো, যে আসাদের কথা আমার লেখায় উল্লেখ করেছিলাম তার মুল্যায়ন হয়েছে। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। যতটুকু জানতে পারি, আসাদের মত আরো কিছু ত্যাগি আওয়ামীলীগ কর্মীও এবারে সস্মানিত হয়েছেন।

আসাদুজ্জামান দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর আমার মধ্যে একটা বিশ্বাস জন্মেছে যে, আওয়ামীলীগ আগামী দিনে নতুন গতিতে চলবে। নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার ভাবনা তাদের রয়েছে। নির্বাচন চলে এসেছে দুয়ারে। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ। এই দিন আসাদের মত নেতাদের সম্মানিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমার বিশ্বাস মানুষ এমন নেতাদের প্রকৃত সম্মানটাই দিবে। সুন্দর এক বাংলাদেশ গড়তে আসাদদের মত নেতাদের আমাদের খুব দরকার। আমি যতটুকু জানি, জাতীয় সংসদে আসাদ যেতে পারলে সেটা অবশ্যই এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এক বড় সুখবর।

কারণ তিনি মাটি থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিবিদ। যাকে বলে পৌড় খাওয়া নেতা। আমার বিশ^াস, আসাদুজ্জামান বিজয়ী হলে পবা-মোহনপুরের মানুষ প্রকৃত একজন বন্ধু পাবে। যার কাছে তারা নিজেদের সমস্যা তুলে ধরতে পারবেন। আমি তার সম্পর্কে যতটুকু জানি, তিনি মানুষকে যথাযথ সম্মান করতে জানেন। শ্রদ্ধা করতে জানেন। আবার শাসনও তিনি করতে পারেন। এর মানে এই নয় যে, তিনি কারো অন্যায় আবদার মানেন।

আরেকটি বড়গুন তার দেখেছি সেটা হলো, আসাদুজ্জামান শুধু আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদেরই মুল্যায়ন করেন তা নয়, আমি দেখেছি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকেও তিনি সম্মান করেন। এর পেক্ষিতে আমার যেটা মনে হয়, সাধারণ মানুষ আসাদের পক্ষে দাঁড়ালে আগামী দিনে পবা-মোহনপুর এলাকায় শান্তিপূর্ণ এক রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে উঠবে। বিদায় নিবে প্রতিহিংসার রাজনীতি। সংসদ সদস্য সম্পর্কে যত খারাপ ভাবনা তৈরী হয়েছিলো মানুষের মনে, তা হয়তো বদলে যাবে।

আজকের দিনে আমি আসাদুজ্জামানের কাছেও একটা আবেদন রাখতে চাই, আপনার যে ন্যায় পারায়নতা, মানবিকতা, বিচক্ষণতা দেখি, আদর্শ একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তি হিসেবে মানুষ আপনাকে মুল্যায়ন করে, অনুগ্রহ করে আপনি নিজেকে এই জায়গায় ধরে রাখবেন। কারণ আমি মানুষের কাছে আপনাকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা দেখেছি।

অনেককেই বলতে শুনেছি, তারা আপনাকে মডেল সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই। আপনি নির্বাচনী প্রচারে যে শ্লোগান দিয়েছেন ‘‘আমি অর্থ উপার্জনের জন্য রাজনীতি করি না, রাজনীতি করি সম্মান অর্জনের জন্য” এই শ্লোগানটি মানুষের মনে ধরেছে। মানুষ বিশ^াস করে, এমন কথা বলার সাহস আপনার মত নেতারাই পারে।

আসাদুজ্জামান সম্পর্কে আমার এতটা প্রত্যাশার যথেষ্ট যুক্তি আছে। যারা আসাদুজ্জামানকে চেনেন তারা হয়তো আমার সাথে একমত হবে। আর যারা তার সম্পর্কে খুব একটা অবগত নন তাদের জন্য তাঁর সম্পর্কে খানিকটা তথ্য তুলে ধরতে চাই।
২০২১ সালের ৭ মার্চ শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান মিলনায়তনে আসাদুজ্জামান আসাদের একটি একক আলোচনা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রবেশের আগেই করতে হয়েছে রেজিষ্ট্রেশন। কোন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য শোনার জন্য এইটি প্রথম অনুষ্ঠান যেখানে রেজিষ্ট্রেশন করে মানুষ বক্তব্য শুনেছে। সেখানে তিনি একাই আলোচক ছিলেন। মঞ্চের সামনে আমিসহ হাজারো মানুষ বসা। সেদিন আসাদের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হলাম। অসাধারণ রাজনৈতিক এক ব্যক্তিত্ব।

নিজের উপর কী দারুণ আত্মবিশ্বাস। তখন তিনি দলের নেতা নন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার বক্তব্য শুনছি আর ভাবছি, সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর নেতৃত্ব থেকে যারা শিক্ষা নিয়েছেন শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উপর এমন আস্থা রাখতে পারে। আরেকটি বিষয় সেখানে দেখলাম, তার এই একক আলোচনা অনুষ্ঠানে রাজশাহী শহরের বেশ কিছু গুণি মানুষ হাজির হয়েছিলেন। তিনি সাবেক নেতা হলেও জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকেই এসেছিল হাজার হাজার আদর্শিক কর্মী। সেদিনের এই আয়োজন দেখে আসাদের ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই। পরবর্তীতে তার সম্পর্কে জানতে গিয়ে অসাধারণ নেতৃত্বের সত্যতা পাই।
এই সভাতেই আসাদ বলেন, আমার জীবনের শেষ লক্ষ্য তো আছেই। আমার মৃত্যুর পর অনেক নেতার চেয়ে আমার জাযানা যাতে বড় হয়, এই লক্ষ্যই আমার পথ চলা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। তার এই কথাগুলোর ভাবার্থ বেশ শক্ত, দৃঢ়তার সাথে দেয়া তার এই বক্তব্যগুলো শুনে আসাদ সম্পর্কে আরো আগ্রহী হই।

আবার যদি দেখি একজন নেতার মানবিবক গুণাবলি সেখানেও আসাদ অনন্য। কখনো হাসপাতালে, কখনো ক্লিনিকে, কখনো ডাক্তারের চেম্বারে নেতাকর্মীদের চিকিৎসার জন্য তার ব্যস্ততা। আবার কোন নেতাকর্মী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করলে তার লাশ প্রেরণের ব্যবস্থাও করেন তিনি। গরীব নেতাকর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, ওষুধ নিয়ে দেওয়ার কাজটি তিনি প্রায়ই করে থাকেন। অনেক অপরিচিত অসহায় মানুষকে আসাদের কাছে যান সহযোগিতার জন্য। আমি কাউকে হতাশ হয়ে হয়ে ফিরে যেতে দেখিনি।
করোনাকালীন সময় রাজশাহীতে আসাদই প্রথম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই মহামারি সময়ে কেউ খাবারের কষ্ট পেলে আমাকে ভাই মনে করে ফোন দিবেন। আমি সাধ্যমত আপনার বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিবো।’ এই কাজটি তিনি করেছেন। কখনও করোনায় আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কখনও স্যালাইন, কখনও অক্সিজেন পাঠানো-এই কাজগুলিতে তার পাশে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
সেই সময় করোনা রোগীদের জন্য তিনিও প্রথম ব্যক্তি পর্যায়ে আসাদের নেতৃত্বে সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে অক্সিজেন ব্যাংক গড়ে তুলেন। পাশাপাশি মানুষকে বিনামূল্যে অক্সিজেন পেঁৗঁছে দেন। এছাড়াও রাজশাহীর বিভিন্ন হাটে-বাজারে, গ্রামে-গঞ্জে মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা টেস্টসহ অন্যান্য টেস্ট হাসপাতালেই চালু করার জন্য দাবি করেন আসাদ। কিন্তু ঐ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের লোকবলের অভাব রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আসাদের নেতৃত্বে সাবেক ছাত্র নেতারা নিজস্ব লোকবল দিয়ে হাসপাতারে পরীক্ষা শুরুর ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল তাদের লোকবল দিয়ে শুরু করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।