পবার হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পরিষদের জমি বিক্রির অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজভি আল হাসান মঞ্জিলের বিরুদ্ধে পরিষদের জমি বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের অর্থে নিজ নামে জমি কিনে সেই জমি তিন বছর পরে আবারও বিক্রি করে দেন চেয়ারম্যান বজলে রেজভি আল মঞ্জিল। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দুর্দীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রবীন ব্যক্তি আবু তাহের লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরে রাজশাহী স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়। কিন্তু সেই তদন্ত প্রতিবেদন আর আলোর মুখ দেখেনি।
এছাড়াও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ তোছরুপসহ নানা অভিযোগ করেছেন আবু তাহের। এসব নিয়ে তদন্ত হলেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ৫ জুলাই রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের অর্থে স্থানীয় সাত্তার নামের এক ব্যক্তির নিকট থেকে ৫১ শতাংশ জমি কেনা হয়। ওই জমির ওপরেই ইউনিয়ন পরিষদ চত্তর। নিয়ম অনুযায়ী পরিষদের নামে জমি কিনতে হলে সেটি পরিষদের নামেই পক্ষে সচিব মালিক হবেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বজলে রেজভি আল হাসান মঞ্জিল তাঁর নামে জায়গাটি কেনেন। এর পর নামজারি করে ২০১০ সালের ২০১০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সেই জমির একটি অংশ থেকে ১৮ শতাংশ শরিফুল ইসলামসহ আরও কয়েকজনের কাছে বিক্রি করে দেন চেয়ারম্যান।

ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সভায় অনুমতি নিয়ে চেয়ারম্যান নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে (এক লাখ ৫ হাজার টাকা) বিক্রি করেন। অথচ ওই জমির দাম বাজার মূল্য অনুযায়ী ওই সময়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হত। জমিটি ২০০৭ সালে যখন ইউনিয়ন পরিষদের অর্থে কেনা হয়, তখন ৫১ শতাংশের দালিল মূল্য দেখানো হয় ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে ২০১০ তিন বছরে বিক্রি করতে গিয়ে অর্ধেক মূল্য দেখানো হয় দলিলে। আর বাকি টাকা নগদ নিয়ে চেয়ারম্যান আত্মসাত করেন।

চেয়ারম্যানের এমন জমি জালিয়াতির ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাহের ২০১৯ সালে দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। এর এক বছর পরে বিষয়টি তদন্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কিন্তু গত দেড় বছরেই সেই তদন্তের প্রতিবেদন বা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গ, চেয়ারম্যান বজলে রেজভি আল হাসান মঞ্জিল মাঝে পরাজিত হয়ে ৫ বছর ছিলেন না। এর পর তিনি আবারও নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন। এর পরে তিনি আবারও নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে শালিসের নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের ভবন তেকেই ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পরে চেয়ারম্যান তিনি বেশকিছুদিন এলাকা ছাড়া ছিলেন। পরবর্তিতে আবারও এলাকায় ফিরে এসেছেন।

আবু তাহের আরও অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারণে তাঁকেই উল্টো মাদকের মামলা দিয়ে ফাঁসানো চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে রক্ষা পান আবু তাহের।

আবু তাহের আরও অভিযোগ করে জানান, ‘চেয়ারম্যান ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। এসব নিয়েও আমি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে অভিযোগ করেছি। কিন্তু তদন্তে নামে তাঁর নিকট থেকে সুবিধা আদায় করেছে প্রমাসন। এছাড়াও স্থানীয় হাফিজিয়া ফুরকানিয়া মাদ্রাসার ১১৩ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ২৪ বিঘা জমি চেয়ারম্যান বজলে রেজভি আল হাসানের নেতৃত্বে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এটিও চরম অনিয়ম। ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) আবু বাক্কার সিদ্দিককে সভাপতি করে ওই মাদ্রাসার অন্তত ১০ কোটি টাকা মূল্যে জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার সভাপতি আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিচু জমি বিক্রি করা হয়েছে। তবে মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য জমি বিক্রি করা হয়েছে।’

অন্যদিকে চেয়ারম্যান বজলে রেজভি আল হাসান মঞ্জিল বলেন, ‘পরিষদের স্বার্থে জমিটি বিক্রি করা হয়। পরিষদের সাধারণ সভার সিদ্ধান্তে বিক্রি করা হয়েছে। আমি কোনো অনিয়ম করিনি। তবে দলিলে কম মূল্য লেখা হয়েছে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু প্রকল্পের বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও সেগুলো সরেজমিন তদন্ত করে কোনো অনিয়মের সত্যতা পাননি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর মাদ্রাসারা জমি বিক্রির সঙ্গেও আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।’

স/আর