‘পদ-পদবি বাগালেই ছাগল কখনও রেসের তেজি ঘোড়া হয় না’

পদপদবি বাগালেই ছাগল কখনও রেসের তেজি ঘোড়া হয় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।

দলের নীতিনির্ধারকদের সমালোচনা করে সোমবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মারুফ কামাল বলেন, ভাঙার জন্য ব্যাকরণের দরকার নেই, দরকার শুধু শক্তি। নতুন কিছু সৃষ্টি করতে প্রয়োজন কৃৎকৌশল, দক্ষতা ও নিয়মনীতি। নতুন নির্মাণের জন্য ভাঙতে হয় পুরনো অচলায়তন।

‘আপনি যদি বিশাল স্থবির পাথুরে পর্বতটিকে ভাঙতে চান, তবে এটি কিন্তু খালি হাত বা হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা যাবে না। এটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে হবে। যারা এই ভাঙার পন্থাকে নিষ্ঠুর বলে মনে করেন এবং এতে ব্যাকরণ অনুসরণ করা হয়েছে কিনা তার সন্ধান করতে থাকেন, তারা স্থবির পর্বতগুহার বাসিন্দা নেংটি ইঁদুর। নানা সংশয়-সতর্কতার ছুতা তুলে ওরা ভাঙার উদ্যোগকেই ব্যাহত করবে। ওরা আসলে অচলায়তন ভেঙে নতুন সৃষ্টির বিরোধী।’

তিনি বলেন, এই কথাগুলো বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় রাজনীতির মূলধারার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বলা। আমি তাদের  উদ্দেশে আজকের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বলব— এর ওর দুয়ারে ধর্ণা দেওয়া, ইতিউতি দেনদরবার এবং নানান কুস্তিগিরের মন বোঝার কসরত ছেড়ে নিজের শৌর্যবীর্য পারলে আরেকবার জাহির করুন দেখি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এ প্রেস সচিব আরও বলেন, ময়দানটা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে সব ব্যাটাই নিজ নিজ স্ট্র্যাটেজি চাঙে তুলে রেখে দৌড়ে আসবে আপনার দিকে, আপনার সঙ্গেই নেগোশিয়েশনের জন্য। আরে গরজ হলো বড় বালাই। আমেরিকা যদি তালেবানগো লগে সন্ধি করতে পারে তো ঠ্যাকায় পড়লে আপনার লগেও সবাই সমঝোতা করবে। বাপ বাপ করে করবে। শক্তি ছাড়া ফুসলাইয়া মন পাইবেন না কারোরই।

তিনি বলেন, জাতীয়, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক কোনো রাজনীতিই কৃপা বা করুণা ভিক্ষার ব্যাপার নয়। এ ক্ষেত্রে আপনার শক্তি বা জনসমর্থনও একমাত্র ব্যাপার নয়। মূল ব্যাপার হলো— নিজের শক্তি ও জনপ্রিয়তার ডেমনেস্ট্রেশন। সেই ডেমনেস্ট্রেশন ভোটের বাক্সে এবং সে সুযোগ না থাকলে রাজপথে করে দেখাতে হয়।

‘সেটি দেখাতে শুরু করেন, কালই দেখবেন আপনার গুরুত্বের পারদ চড়চড় করে ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। না হলে চামচিকারাও আপনাকে লাথি মারতেই থাকবে। মিডিয়াও ট্রল করবে। আপনি অনেক জনপ্রিয় জেনেও করবে, যদি আপনি সে জনসমর্থন ডেমনেস্ট্রেট না করে খুচরা প্রোগ্রাম জারি রাখেন। মনে রাখবেন—  রাজনীতিতে শক্তিই সব না, আপনি শক্ত কিনা সেটিও একটি বড় ব্যাপার।’

মারুফ কামাল বলেন, বাংলাদেশে ক্ষমতার দল দু’তিনটার বেশি না। এর সব কটি দল কিন্তু একসঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে পারে না। রাষ্ট্রক্ষমতার ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী এই দলগুলো কোয়ালিশন করে একই সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগ করতেও পারবে না। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতায় না থেকেও এই দলগুলো বহুকাল ধরেই ছিল ‘পাওয়ার পার্টি’ হয়ে। তাদের সেই ক্ষমতা ও শক্তি রাজনৈতিক ও সামাজিক। নানান কার্যকারণে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারেননি, মানলাম; কিন্তু রাজনৈতিক ও সামাজিক সেই শক্তি, সামর্থ্য, ক্ষমতা ও গুরুত্ব কেন হারালেন?

২০০৭-এর সূচনা থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিযুক্ত হলেও রাজনৈতিক ও সামাজিক যে পাওয়ার হাতে ছিল, যে গুরুত্ব ছিল তা ২০১৫ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে কেন হারালেন? প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা না সব মস্ত নীতিনির্ধারক, জাঁদরেল রাজনীতিক? আপনারা না ক্ষোভ ও কুৎসা রটাতেন অরাজনৈতিক পরামর্শক এখন রাজনীতির নীতিনির্ধারণ করে! সেই অরাজনৈতিক পরামর্শকরা নিজে থেকে হাত গুটিয়ে বিষয়ভিত্তিক সীমিত গণ্ডিতে অবস্থান নেওয়ায় আপনারা নিজেরা কোত্থেকে কোথায় নেমেছেন এবং দল ও রাজনীতিকে কোথায় নামিয়েছেন একবার ভেবে দেখেছেন? কেবল দল, নেতৃত্ব কিংবা রাজনীতি নয়; আপনাদের ব্যর্থতায় দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎও আজ মহাবিপন্ন।

‘সবাই সব কিছু পারে না। রাজনৈতিক দলের একটা পদপদবি বাগিয়ে ফেলতে পারলেই ছাগল কখনো রেসের তেজি ঘোড়া হয়ে যায় না। এখন এই সন্ধিক্ষণেও রাজনীতির নামে অনেকে আত্মপ্রচার ও আত্মপ্রতিষ্ঠার ছোট ছোট দোকান খুলে বসে আছেন। ধিক্কার!’

খালেদা জিয়ার এ প্রেস সচিব আরও বলেন, আমি নিন্দা-সমালোচনা সচরাচর করি না। কিন্তু কখনো কখনো সময়ের দাবিতে কিছু শক্ত কথা বলতেই হয়। কিছু ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতেই হয়। না হলে আপনারা নিজেদের অহেতুক আত্মতুষ্টি ও ফালতু আত্মম্ভরিতা নিয়েই বসে থাকবেন। কিন্তু সময় তো কারও জন্য বসে থাকবে না।

‘তাই বলি, দয়া করে আপনারা শোধরান। সব কিছু ফের নতুন করে পর্যালোচনা করুন। কোথায় কী ভুল হয়েছে খতিয়ে দেখুন। নতুন কর্মসূচি নিন। জনঘনিষ্ঠ হোন। অ্যাপ্রোচ ও উপস্থাপন ভঙ্গিতে নতুনত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা আনুন— সৃজনশীলতার পরিচয় দিন।

আপনাদের সব কিছুতে স্থবিরতা, জড়তা, জরাগ্রস্ততা, অবসাদ ও ক্লীবতার ছাপ। রাজনীতিতে তারুণ্য ও গতিসঞ্চার করুন। সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিন। দীর্ঘকাল ধরে জনগণের সহানুভূতি ও করুণা লাভের দীনহীন প্রয়াসে মানুষ বিরক্ত। এখন বীরোচিত নায়কের ভূমিকা চায় জনগণ।’

নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে মারুফ কামাল বলেন, নিজেদের রাষ্ট্রক্ষমতার প্রবল প্রতিপক্ষ এবং যোগ্যতর ও উৎকৃষ্ট বিক্কল্প হিসেবে তুলে ধরুন। নিজেদের আধুনিক ও অগ্রসর ভাবনার মানুষ হিসেবে পরিচিত করুন। ‘চয়েস অব নিউ জেনারেশন’ হয়ে উঠুন। স্তাবকবেষ্টিত না থেকে দলকে মেধাচর্চিত উজ্জ্বল তারকা শোভিত ছায়াপথ হিসেবে বিন্যস্ত ও প্রক্ষিপ্ত করুন। তা হলেই না পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হালে পানি পাবে। দুলে উঠবে মায়াবি পর্দা।

‘আপনারাই হয়ে উঠবেন জাতীয় ঐক্যের ভরকেন্দ্র, আকর্ষণের মূলবিন্দু। আর যদি তা না পারেন, তা হলে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। জায়গা খালি থাকবে না। শূণ্যস্থান কেউ না কেউ পূরণ করবেই। নিষ্ক্রিয় ‘ঘাটের মড়া’ হয়ে জায়গা দখল করে রেখে লাভ নেই। আপনাদের কারণেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎও কিন্তু থমকে আছে।’

 

সুত্রঃ যুগান্তর