রাজশাহী সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজ

পদে উপাধ্যক্ষ, দখলে অধ্যক্ষের চেয়ার, বোর্ডে লিখিয়েছেন নাম


নিজস্ব প্রতিবেদক :
পদে তিনি একজন প্রভাষক। উপাধ্যক্ষের পদ ফাঁকা থাকায় তাকে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। চলতি দায়িত্বে উপাধ্যক্ষের পদ দেয়া হলেও তিনি সেই পদে না থেকে দখল করেছেন অধ্যক্ষের চেয়ার ও রুম। রীতিমত অধ্যক্ষের অনার বোর্ডেও লিখিয়েছেন নাম। ওনার বোর্ডে নাম লেখালেও পদবীর জায়গায় তিনি ব্যবহার করেছেন ‘উপাধ্যক্ষ চলতি দায়িত্বে’। ব্যবহার করছেন অধ্যক্ষের পদপদবী। অধ্যক্ষ হিসাবেই পারিচালনা করছেন পুরো কলেজ। আয়ন-ব্যয়ন থেকে শুরু করে সব কিছুই হচ্ছে তার হাতে।

এমনি কাণ্ড ঘটিয়েছে রাজশাহী সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজের প্রভাষক মাহাবুবুর রহমান। তিনি বাগেরহাট শারীরিক শিক্ষা কলেজের প্রভাষক ছিলেন। গত বছরের ২৫ জানুয়ারী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় (ক্রীড়া শাখা-২) থেকে তাকে বদলী করে রাজশাহী সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজে চলতি দায়িত্বে উপাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি উপাধ্যক্ষের পদপদবী বহন না করে ব্যবহার করছেন অধ্যক্ষের পদপদবী। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, রাজশাহী সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের দুটি পদই শূণ্য রয়েছে। এই অবস্থায় গত ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের (ক্রীড়া শাখা-২) সিনিয়র সহকারী সচিব মু. গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত পরিপাত্রে বাগেরহাট শারীরিক শিক্ষা কলেজের প্রভাষক মাহাবুবুর রহমানকে বদলী করে রাজশাহী সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজে উপাধ্যক্ষের চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রভাষক মাহাবুবুর রহমান মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারী রাজশাহী শারীরিক শিক্ষা কলেজে চলতি দায়িত্বে উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। তিনি কলেজে যোগদানের পর প্রথমে অধ্যক্ষের রুম দখল করেন। নাম লেখান অধ্যক্ষের ওনার বোর্ডে। অধ্যক্ষ পদে কোনো অনুমোদন না থাকলেও তিনি অধ্যক্ষের সকল সুযোগ ভোগ করছেন। রীরিমত এই কলেজের সবাই প্রভাষক মাহাবুবুর রহমানকে অধ্যক্ষ হিসাবেই জানেন ও মানেন।

এখানেই শেষ নয়, এই কলেজের অপর প্রভাষক আব্দুল আলিম। মাহাবুবুর রহমানকে চলতি দায়িত্বে উপাধ্যক্ষের পদ দেয়ার পর তিনি বসছেন অধ্যক্ষের চেয়ারে, আর উপাধ্যক্ষের চেয়ারে বসছেন প্রভাষক আব্দুল আলিম। প্রভাষক আব্দুল আলিমকে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠিপত্র দেয়া হয়নি। তারপরও তিনি প্রভাষক থেকে নিজেই প্রোমশন নিয়ে দখল করেছেন উপাধ্যক্ষের রুম। চলতি দায়িত্বের উপাধ্যক্ষ অধ্যক্ষের চেয়ারে আর উপাধ্যক্ষের চেয়ারটি দখল নিয়েছেন প্রভাষক আব্দুল আলীম। এ নিয়ে পুরো কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

কথা বলা হয়, রাজশাহী সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজের উপাধ্যক্ষের পদ পাওয়া অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় চিঠি করতে ভুল করেছে। কারণ চট্টগ্রামসহ অন্য কলেজে যাদের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা সবাই প্রভাষক। আমিও প্রভাষক, কিন্তু আমার চিঠিতে উপাধ্যক্ষ চলতি দায়িত্বে বলা হয়েছে। উপাধ্যক্ষ চলতি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অধ্যক্ষের রুম বা ওনার বোর্ডে অধ্যক্ষ লেখা যায় কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন কেনো যাবে না। কারণ আমাকে তো কলেজের আয়ন ব্যয়নের বিষয়টিও দেখতে বলা হয়েছে। তাহলে আমি অধ্যক্ষের বোর্ডে নাম লেখাতে পারবো না কেনো।

চলতি দায়িত্বে অধ্যক্ষ পদ বহন করার জন্য মন্ত্রণালয় কোনো অনুমোদন দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এমন কোনো চিঠি বা নিদের্শ দেননি। তাহলে চলতি দায়িত্বে উপাধ্যক্ষ হয়ে অধ্যক্ষের রুম ও ওনার বোর্ডে নাম লেখিয়েছেন কেনো, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্ত্রব্য করেননি। এটি বৈধ নাকি অবৈধ সেটি জানতে চাইলেও তিনি উত্তর দেন। তবে তিনি বলছেন কলেজে আগেও এমনটা হয়ে এসেছে, তাই আমি করছি। তিনি উপাধ্যক্ষের বিষয়ে বলেন, উপাধ্যক্ষের পদটি খালি রয়েছে। যার কারণে সেখানে প্রভাষক আব্দুল আলিম উপাধ্যক্ষের পদে রয়েছেন। উপাধ্যক্ষের সকল কার্যক্রমন তিনি করে আসছেন। তবে সেটি বৈধ নাকি অবৈধ্য জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি জানি না বলে মন্তব্য করেন।

এব্যাপারে ক্রীড়া পরিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) আ ন ম তরিকুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, চলতি দায়িত্বে উপাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাহাবুবুর রহমানকে। তিনি অধ্যক্ষের পদপদবী ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকি অনার বোর্ডেও তিনি নাম লেখাতে পারবেন না। যদি তিনি এমনটি করেন তাহলে অবশ্যই নিজে মনগড়াভাবে করেছেন। মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

দেখা গেছে, এই কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ২৩জন অধ্যক্ষের নাম রয়েছে। এরমধ্যে তিনজন অধ্যক্ষ ছাড়া বাকি ২০ জনই চলতি দায়িত্বে দায়িত্ব পালন করেছেন। সব শেষে অধ্যক্ষের অনার বোর্ডে যে নামটি রয়েছে সেটি প্রভাষক মাহাবুবুর রহমানের। অধ্যক্ষের অনার বোর্ডে যাদের নাম রয়েছে সবার পদবীতে চলতি দায়িত্ব বা অধ্যক্ষ লেখা আছে। অথচ মাহাবুবুর রহমানের অধ্যক্ষের পদবীরস্থানে লেখা রয়েছে উপাধ্যক্ষ চলতি দায়িত্বে।