পঞ্চম শ্রেণি : বাংলা পাঠ প্রস্তুতি

লুৎফা বেগম, সিনিয়র শিক্ষক বিএএফ শাহীন কলেজ কুর্মিটোলা, ঢাকা

পদ্য

রৌদ্র লেখে জয় : শামসুর রাহমান

 

১।   কবিতাটির মূলভাব লেখো।

উত্তর : শামসুর রাহমান রচিত ‘রৌদ্র লেখে জয়’ কবিতায় বলা হয়েছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মারাঠা দস্যুদের মতো এ দেশের মানুষকে মেরে, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ও ধন-সম্পদ লুটতরাজের মাধ্যমে যে অত্যাচার-উত্পীড়ন চালিয়েছে, সেই দুঃসহ স্মৃতি বাঙালি জাতি কখনোই ভুলবে না। তার প্রতিবাদে বীর বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করে জয়ী হয়েছেন এবং ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বদলে ‘বাংলাদেশ’ নামের এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। পরাধীনতার গ্লানি মুছে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আলোকিত বাংলাদেশ এনে দিয়েছেন বলেই আজ এই দেশের মাটিতে আমরা পরম শান্তিতে বাস করতে পারছি।

২।   শব্দগুলোর অর্থ লেখো।

বর্গি—মারাঠা দস্যু

হানাদার—আক্রমণকারী

খাজনা—কর বা ট্যাক্স।

৩।   ঘরের ভেতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করো।

হানাদারদের, বগি, খাজনা

ক. সরকারকে খাজনা দেওয়া সকল নাগরিকের কর্তব্য।

খ. বহু পূর্বে বাংলায় বর্গি এসে হানা দিত, মানুষ মারত, ধন-সম্পদ লুট করত।

গ. হানাদারদের পরাজিত করেই মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশকে স্বাধীন করেছিল।

৪।   নিচের কথাগুলো বুঝিয়ে লেখো।

ক. বর্গি এলো খাজনা নিতে—‘খাজনা নিতে’ অর্থ লুটতরাজ করতে। বর্গিরা বাংলাদেশে এসে মানুষ মেরে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে বাঙালির ধন-সম্পদ নিয়ে পালিয়ে যেত।

খ. তাদের কথা দেশের মানুষ কখনো ভুলবে না—মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মানুষ কখনো ভুলবে না, কারণ তারাই হানাদার পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদেরকে এ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেন।

গ. মা হয়ে যায় দেশের মাটি, তার বুকেতেই থাকা—মা ও মাতৃভূমি সমান গর্বের, সমান আনন্দের। জননীহীন সন্তান যেমন দুর্ভাগা, যার মাতৃভূমি নেই, সেও তেমনি ভাগ্যহীন।

 

৫।   প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো।

ক) বর্গি কারা? তারা কী করেছিল?

উত্তর : মারাঠা দস্যুদের বর্গি বলা হয়।

বহু পূর্বে তারা বাংলাদেশে হানা দিয়ে এ দেশের মানুষকে মেরে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে বাঙালির ধন-সম্পদ নিয়ে পালিয়ে যেত।

খ) হানাদারদের কথা মানুষ কেন ভুলবে না?

উত্তর : পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে এসে মারাঠা বর্গিদের মতোই এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। এ দেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া তারা বাঙালির ওপর নানা রকম অত্যাচার করেছে। তাদের নির্মমতার কথা এ দেশের মানুষ কখনো ভুলবে না।

গ) মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মানুষ কখনো ভুলবে না কেন?

উত্তর : মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদেরকে এ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। তাই বীরযোদ্ধাদের অবদানের কথা এ দেশের মানুষ কখনো ভুলবে না।

ঘ) মুক্তিসেনারা কাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল এবং কেন?

উত্তর : মুক্তিসেনারা হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল।

কারণ হানাদার পাকিস্তানিরা মারাঠা দস্যু বা বর্গিদের মতোই এ দেশের মানুষ মেরে, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুক্তিসেনারা যুদ্ধে তাদেরকে পরাজিত করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছে।

ঙ) ‘কাল যেখানে আঁধার ছিল আজ সেখানে আলো’—কথাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : আলোচ্য অংশটুকু শামসুর রাহমান রচিত ‘রৌদ্র লেখে জয়’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

এখানে পরাধীনতার পর স্বাধীনতাপ্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে।

যখন এ দেশের নাম পূর্ব পাকিস্তান ছিল, তখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা এ দেশের মানুষের ওপর বর্গিদের মতো অত্যাচার করত। তাদের অত্যাচারের প্রতিবাদে বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদেরকে এ দেশে থেকে তাড়িয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত ও স্বাধীন করেছে। তার ফলে বহু যুগের পরাধীনতার অন্ধকার কেটে গিয়ে স্বাধীনতার আলোয় দেশ আলোকিত হয়েছে।

 

৬।   ফাঁকা ঘরে ঠিক শব্দ বসিয়ে বাক্য তৈরি করো।

আঁধার, আলো, কালো, সাদা, ভালো, মন্দ, জয়, পরাজয়, সকাল, সন্ধ্যা

ক. বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজ দলের জয় দেখে ছেলেটি আনন্দে নেচে উঠল।

খ. একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা কালো ব্যাজ পড়ে শহীদ মিনারে যাই।

গ. সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আমরা বাড়ি পৌঁছে যাব।

ঘ. আঁধার নামলে ঘন জঙ্গলের মধ্যে কিছুই দেখা যায় না।

ঙ. মন্দ ছেলের সঙ্গ ত্যাগ করাই উত্তম।

৭।   কবি পরিচিতি

নাম—শামসুর রাহমান, বাংলাদেশের একজন প্রধান কবি।

জন্ম—১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে।

পৈতৃক নিবাস—নরসিংদী জেলার পাড়াতলী গ্রামে।

পেশা—সাংবাদিকতা।

ছোটদের জন্য লেখা—‘এলাটিং বেলাটিং, ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো, স্মৃতির শহর ঢাকা।

মৃত্যু—১৭ আগস্ট ২০০৬, ঢাকা।

 

পত্র লিখন

১।   ফুটবল খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য সাময়িক ছুটি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি আবেদনপত্র লেখো।

উত্তর :

১৫ জুন ২০১৬

বরাবর

প্রধান শিক্ষক

‘ক’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ঢাকা।

 

বিষয় : ফুটবল খেলা দেখার জন্য ছুটির আবেদন।

 

জনাব,

সবিনয় নিবেদন এই যে আমরা আপনার বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজ ‘খ’ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রদের সঙ্গে ‘গ’ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রদের এক প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ খেলা আমাদের বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের ক্লাসের প্রায় সবাই খেলাটি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

 

অতএব, বিনীত প্রার্থনা এই যে তৃতীয় ঘণ্টার পর ছুটি দিয়ে খেলাটি দেখার জন্য আমাদের সুযোগ করে দেবেন।

 

বিনীত

সব শিক্ষার্থীর পক্ষে

আবদুল্লাহ

পঞ্চম শ্রেণি

রোল : ২

২।   জীবনের লক্ষ্য জানিয়ে বন্ধুকে পত্র লেখো।

উত্তর :

১৫ জুন ২০১৬

 

প্রিয় ‘ক’

আমার শুভেচ্ছা নিও। গতকালই তোমার চিঠি পেলাম। চিঠিতে তুমি আমার জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছ। সংক্ষেপে আমার লক্ষ্যের কথা জানাচ্ছি।

আমি ঠিক করেছি, ভবিষ্যতে ডাক্তার হব। আমাদের দেশে চিকিৎসার অভাবে অনেক দরিদ্র মানুষ কষ্ট পায়, অকালে প্রাণ হারায়।  তাই এ মহৎ পেশার মাধ্যমে আমি জনগণের সেবা করতে চাই। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য এখন থেকেই আমি ভালো করে পড়ছি, যাতে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারি।

আজ আর নয়। তোমার মা-বাবাকে আমার সালাম দিও। আর আমার লক্ষ্য পূরণের জন্য দোয়া কোরো।

 

ইতি

তোমার বান্ধবী

নাদিয়া

উত্তরা, ঢাকা।