পঁচাত্তরের পর ২১ বছর নানান ধরনের খেলা চলেছে: প্রধানমন্ত্রী

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে যে মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় এসেছিল, তারাও এ দেশে একাত্তরের মতোই গণহত্যা চালিয়েছে। আমাদের সেনা অফিসারদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং এরপরে নির্বাচনী প্রহসন, দল গঠন, দল ভাঙন। নানান ধরনের খেলা ২১টি বছর আমাদের ওপর চলেছে।’

আজ সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে আমাদের কয়েকটি প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজকের নতুন প্রজন্ম তারা ইতিহাস জানতে চায়, বুঝতে চায় এবং সেই প্রেরণা নিয়েই তারা নিজেদের জীবনকে গড়তে চায়।’

আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দেশ হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা থাকলে যে উন্নয়ন হয়, তা প্রমাণ করেছি। ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে, জয় বাংলা স্লোগান জাতীয় স্লোগান। এখনকার প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চের গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রতি জাতির ঘৃণা। এমন ঘটনা আর যেনো কখনো না হয়। দেশে কিছু মানুষ অগ্নিসন্ত্রাস করে, তাদের সুমতি হোক।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আনাচে কানাচে থাকা দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ মানুষকে খুঁজে বের করে পুরস্কার দিতে পারাটাই আমাদের স্বার্থকতা।’ যারা পুরস্কার পেলেন, তারা দেশের জন্য আরও কাজ করবেন প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর। এ সময় তিনি ফিলিস্তিনে যে হত্যা চলছে তার তীব্র নিন্দা জানান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই মাসেই তিনি জন্ম নেন। আবার এই মাসেই তিনি সেই ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। যা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এনে দিয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রমজান মাসে দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্য আমরা মানুষের মাঝে বিনা পয়সায় খাদ্য বিতরণ করছি। আমরা ইফতার পার্টি বাদ দিয়েছি, আমাদের নেতাকর্মী, প্রতিষ্ঠান সবাইকে আহ্বান করেছি, ইফতার পার্টি না করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইফতার বণ্টন করতে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১০ বিশিষ্টজনের হাতে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন—স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে কাজী আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আবু নঈম মো. নজিব উদ্দীন খাঁন (খুররম) (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. মোবারক আহমদ খান, চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ, সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুন, সমাজ বা জনসেবায় অরন্য চিরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী ও এসএম আব্রাহাম লিংকন।

পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে আসছে। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা।