নৌ সেনার সেপাই থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের নায়ক

সিল্কসিটিনিউহ ডেস্ক:

ওভালে লাঞ্চ হতেই ফোনে পাওয়া গেল তাঁকে। আজাব খান। ততক্ষণে পাকিস্তানে তাঁকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। একের পর এক মিডিয়ার ফোন আসছে। টিভি-তে ইন্টারভিউয়ের জন্য অনুরোধ আসছে।

পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক। আজাব খান হচ্ছেন ফখর জমানের মেন্টর। ভারতীয় পেসার যশপ্রীত বুমরার ‘নো বল’ হয়তো ফখরের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকবে রবিবারের পর। কিন্তু তারও অনেক আগে আজাবের সঙ্গে দেখা হওয়াটা ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালের নায়কের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। সেই সময় পাক নৌসেনায় সেপাইয়ের কাজ করতেন ফখর। গরিবের সংসারে ক্রিকেট খেলা দূরে থাক, দৈনন্দিন জীবনযাপনই হয়ে উঠেছিল কঠিন। তাই বাধ্য হয়ে সেপাই হিসেবে যোগ দিতে হয়।

লাঞ্চের সময় ফখর যখন ম্যাচ জেতার মতো স্কোরে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর দলকে, আজাব পাকিস্তান থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘নৌসেনার কোচ ছিল নাজিম খান। ও-ই প্রথম আমার কাছে নিয়ে এসেছিল ফখরকে। আমি প্রথম ওকে অনূর্ধ্ব উনিশ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাচে খেলাই। সেই ম্যাচে ও বেশ ভাল খেলেছিল। সেটাই ছিল শুরু।’’ প্রথম যখন নেটে ব্যাট করতে দেখেছিলেন ফখরকে, কী মনে হয়েছিল? আজাব বললেন, ‘‘আমি খুবই প্রভাবিত হয়ে গিয়েছিলাম। একটুও অতিরঞ্জিত করে বলছি না। আমরা দেখেই বুঝেছিলাম, এক দিন এই ছেলে পাকিস্তানের হয়ে খেলবে।’’ ফখর তাঁদের কাউকে হতাশ করেননি। যদিও তাঁকে পরিশ্রম করে যেতে হয়েছে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য। নির্বাচকদের চোখে পড়তে সময় লেগেছে। যে পাকিস্তান সুপার লিগ টি-টোয়েন্টি খেলে তিনি নজরে পড়লেন, সেই টুর্নামেন্টেই প্রথম বার তাঁকে কেউ নিলামে কেনেনি।

খাইবার অঞ্চলে মারদান নামে একটি শহর থেকে এসেছেন ফখর। যেখান থেকে পাকিস্তানের মহাতারকা ইউনিস খানও এসেছেন। তবে ফখর একাধিক শহরে ঘুরেছেন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। প্রথমে নৌসেনার সেপাইয়ের কাজ থেকে তাঁকে ক্রিকেটে তুলে আনেন আজাব। তার পর  নিয়মিত হওয়ার জন্য তাঁকে লাহৌর থেকে করাচি দৌড়ে বেড়াতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর আসল উত্থান ঘটে আজাব তাঁকে করাচির পাকিস্তান ক্রিকেট ক্লাবে নিয়ে আসার পরে। এই ক্লাবটি চালান আজাব-ই। এখান থেকে উঠেছেন পাকিস্তানের বর্তমান অধিনায়ক সরফরাজ আমেদ। নতুন পেস বোলার রুমন রইস এই ক্লাবের। ফখরের সবচেয়ে বড় সুবিধে হয়, সরফরাজ তাঁকে শুরু থেকে চেনায়। ‘‘সরফরাজ অধিনায়ক হওয়ার পরে ফখরকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে। কারণ, আমাদের ক্লাবে খেলার সময়েই ও দেখে নিয়েছিল, ফখরের মধ্যে ম্যাচউইনার হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।’’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁকে ওপেনার হিসেবে নামানোর সিদ্ধান্তও সরফরাজের। পাকিস্তান অধিনায়ক মিকি আর্থারের নয়। গোটা ক্রিকেট বিশ্বে এখন বিস্ময় তৈরি হয়েছে যে, এমন প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান তাঁকে খেলাচ্ছিল না কেন? শেষ পর্যন্ত ফখর শুধু খেললেনই না, শুধু পাকিস্তানকে জেতালেনই না, জীবনযুদ্ধে জেতার উদাহরণও রেখে গেলেন লন্ডনে।

যদিও তাঁর ক্রিকেটীয় গুণাবলীর ময়নাতদন্ত করতে বসে নানা রকম মতামত পাওয়া যাচ্ছে। সরফরাজ এবং পাকিস্তান অবশ্যই তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত যে, তাঁরা নতুন এক তারকা পেলেন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, ব্যাট হাতে বিপজ্জনক ভাবে বেঁচে থাকেন তিনি। এ দিন যেমন একের পর এক পুল-হুক মেরে গেলেন কিন্তু কোনওটাই খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে মারতে দেখা গেল না। এ দিন ভাগ্য সঙ্গে ছিল বলেই হয়তো রক্ষা পেয়ে গেলেন। কোহালি যেমন বলে গেলেন, ‘‘দারুণ ব্যাট করেছে। কিন্তু একটা ভঙ্গিতে খেলেছে এবং আজকের দিনে হয়তো সেটা খেটে গিয়েছে।’’

সূত্র: এবিপি