নোকিয়ার পরিণতি হবে ‘একঘেয়েমি’ আইফোনের?

২০০৭ সালে বাজারে প্রথমবারের মতো আসে আইফোন। স্টিভ জবসের হাত ধরে বাজারে আসা অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের এই স্মার্টফোন তাক লাগিয়ে দেয় পুরো বিশ্বকে। ধারণা পালটে দেয় মোবাইল ফোনের। তবে আইফোন গ্রাহকদের কাছে হয়ে উঠছে ‘একঘেয়েমি’র কারণ। পরিণতি হতে পারে ফিনল্যান্ডের নোকিয়ার মতো।

প্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং সাধারণ স্মার্টফোন গ্রাহকদের একটি বড় অংশ মনে করেন যে, অ্যাপলের আইফোনগুলোতে আর কোনো নতুনত্ব নেই। ব্র্যান্ড ভ্যালু, গোপনীয়তা বিষয়ক সফটওয়্যার অথবা রিসেলিং ভ্যালু বেশি থাকার মতো কারণে এখনও বিশ্বজুড়ে ‘আইফোন হাব’ থাকলেও গ্রাহকেরা মনে করছেন সাম্প্রতিককালের ডিভাইসগুলোর মধ্যে একে অপরের সাথে খুব একটা পার্থক্য নেই।

উদাহরণ দিয়ে বললে, আইফোন ৮ এবং আইফোন এক্স এর মধ্যে প্রযুক্তিগত খুব একটা পার্থক্য নেই। আবার আইফোন এক্স এর চেয়ে ক্যামেরার দিক থেকে আইফোন ১১ এগিয়ে থাকলেও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেটিতে রাখা হয়নি ফাইভ-জি প্রযুক্তি। অন্যদিকে আইফোন ১২-তে ফাইভ-জি থাকলেও এর বাইরে আর খুব একটা পার্থক্য নেই ১১ থেকে।

 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্মার্টফোনের বাজার দখলের আগে নোকিয়া যেমন অনেকটা ‘গা ছাড়া’ ভাবে ছিল তেমন অবস্থা হয়েছে আইফোনের। নিজেদের ডিভাইসে প্রযুক্তিগত ইনোভেশনের দিক থেকে অ্যান্ড্রয়েডের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে অ্যাপল। অন্যদিকে গুগল মালিকানাধীন অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় নিজেদের আপডেটগুলো দেরিতে দেওয়ায় আইফোনের ইন্টারফেস অনেকটাই অ্যান্ড্রয়েড থেকে ‘কপি’ করা বলে মনে করেন অ্যাপল সমালোচকেরা।

এমন নানাবিধ কারণে আইফোনের নতুন নতুন মডেল বাজারে আসার সাথে ব্র্যান্ডটির প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ আগের তুলনায় কমতে দেখা গেছে। ২০০৭ থেকে প্রতিবছর নতুন আইফোন বাজারে আসার সাথে সাথে সেগুলো নিয়ে গ্রাহকদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিতো। গুগল সার্চ ফলাফল বিশ্লেষণ থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়। তবে ২০১৪ সালে আইফোন ৬ বাজারে আসার পর থেকে অর্থ্যাৎ আইফোন ৭ বাজারে আসার সময় থেকে গুগলে ‘আইফোন’ লিখে সার্চ করার অনুপাত কমে গিয়েছে।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশি টেক ব্লগিং ইউটিউব চ্যানেল টেকসি গাই এর মতে, বিশ্বজুড়ে আইফোন ডিভাইস বিক্রির হারও বর্তমানে কমতির দিকে। নিজেদের নতুন সব মডেল আগের মডেলের থেকে অনেক বেশি দামি হওয়ায় অ্যাপলের আয় কমছে না। বাড়তি আয় থেকে বাড়তি ডিভাইস বিক্রি না হওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে আইফোন। ২০১৯ সালে চীনে আইফোন কম বিক্রির হার ছিল ২৯ শতাংশ।

এর বাইরে অ্যাপলের অন্যতম ‘পাওয়ার হাউজ’ শেয়ার মার্কেটেও বেশ কয়েকবার আঘাত এসেছে। বিশ্বজুড়ে নানান সমালোচনায় নোকিয়ার মতো অ্যাপলের শেয়ার বাজারের দর পড়তে থাকে। অ্যাপলের অফিসে ভাঙচুর, অ্যাপল ক্লাউডের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা সামনে চলে আসা, পরবর্তীতে ক্লাউডে থাকা নামিদামি ব্যক্তিদের তথ্য ও ছবি হ্যাকারদের দখলে যাওয়া, নতুন মডেলের বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিক্রি করা আইফোন ৬ এবং আইফোন ৭ মডেলের ব্যাটারি কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা অ্যাপলের ব্র্যান্ড ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যার প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারে।

নোকিয়ার পতনের মতোই বেশ মিল থাকা এমন প্রেক্ষাপট অব্যাহত থাকলে সময় বেশি প্রয়োজন হলেও পতন দেখতে হতে পারে অ্যাপলকে। অবশ্য সে বিষয় হয়তো বুঝতে পেরেছে অ্যাপল কর্তৃপক্ষও। আর তাই শুধু আইফোনের বদলে প্রতিষ্ঠানটি নজর দিয়েছে অন্যান্য পণ্য ও সেবার দিকে।

নতুন মডেলগুলোতে হেডফোনের জ্যাক না থাকায় ইয়ার পড কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। সম্প্রতি আইফোন ১২ এর বক্সের সাথে চার্জারও দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে গ্রাহকদের আলাদা করে কিনতে হচ্ছে চার্জারও। এছাড়াও অ্যাপল ওয়াচের মতো ডিভাইসসহ বেশকিছু এক্সেসরিজ গ্রাহকদের আলাদা করে কিনতে একরকম বাধ্য করা হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ। এর বাইরে অ্যাপল টিভি এবং ইলেকট্রিক গাড়ির বাজারেও বিনিয়োগ করেছে অ্যাপল। তবে সমালোচকেরা বলছেন, যেহেতু এই সবকিছুই আইফোনকে কেন্দ্র করে হচ্ছে তাই অ্যাপলকে টিকে থাকতে হলে টিকে থাকতে হবে আইফোনকে। আইফোনের বিরুদ্ধে একটি আঘাত ব্র্যান্ডটিকে দেখাতে পারে নোকিয়ার মতো পরিণতি।

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন