নেসলের শিশুখাদ্যে উচ্চমাত্রার চিনি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী সুইস কোম্পানি নেসলের সেরেলাক ও নিডোতে উচ্চমাত্রায় চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ অনুযায়ী, শিশু খাদ্যে চিনি যুক্ত না করার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। এই নীতিমালা ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষেত্রে মানা হলেও ভিন্নচিত্র বাংলাদেশ, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোতে।

এরই মধ্যে বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক হিসেবে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশও। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করার কথা জানিয়েছে সরকারের

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)।

নেসলের শিশুখাদ্যে চিনির উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা করে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা পাবলিক আই ও ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক। তাদের যৌথ গবেষণায় বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিক্রি করা নেসলের এই দুটি শিশুখাদ্যে উচ্চমাত্রায় চিনি যুক্ত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গত বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান প্রতিবেদনটি সামনে আনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেসলে আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে ইউরোপের দেশগুলোতে সেরেলাক এবং নিডো তৈরি ও বাজারজাত করছে। কিন্তু এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোকে আমলে নিচ্ছে না। এসব দেশে একই খাদ্যে অতিরিক্ত চিনি ও মধু মেশানো হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সেরেলাকে প্রতি ১০০ গ্রামে চিনি রয়েছে ৩ দশমিক ৩ গ্রাম, ভারত ও পাকিস্তানে এর পরিমাণ ২ দশমিক ৭ গ্রাম। থাইল্যান্ডে ৩ দশমিক ২ গ্রাম, ইন্দোনেশিয়ায় ৩ দশমিক ৮ গ্রাম। অতিরিক্ত এই চিনি ব্যবহারের কথা পণ্যের গায়ে উল্লেখ করছে না নেসলে। ভিটামিন, মিনারেল ও অন্যান্য উপাদান থাকলেও গোপন করা হয়েছে উচ্চমাত্রার চিনি ব্যবহারের তথ্য।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নেসলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। খবরেও বলা হয়েছে, দেশটির পুঁজিবাজারে নেসলের শেয়ারের দাম ২ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প এসব শিশু খাদ্যের ওপর এক ধরনের আসক্তি চলে এসেছে শিশুদের। এই উচ্চমাত্রার চিনি ব্যবহারের ফলে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগ শিশুদের আরও বাড়িয়ে দেবে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, শিশুদের ছোটবেলা থেকে মিষ্টি খাওয়ায় অভ্যস্ত করে দিলে বড় হলেও এ থেকে সহজে বের হতে পারে না। এজন্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে শিশুখাদ্যে এটি অনেক জোর দেওয়া হয়। দেশগুলোর থেকে মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়া হয়। কোম্পানিগুলো যাতে সেগুলো মেনে শিশুখাদ্য তৈরি ও বাজারজাত করে তা কঠোরভাবে দেখে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব ব্যবস্থা নেই।

তিনি বলেন, ‘দেশে বিএসটিআইসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর শিশুখাদ্যের মান নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত সেটি হয়নি। ফলে কোম্পানিগুলো শিশুদের কাছে লোভনীয় করতে অতিরিক্ত ক্যালরি ব্যবহার করছে। এতে করে ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস ও মুটিয়ে যাওয়াসহ নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগ দেখা দিচ্ছে শিশুদের।’

শিশুর পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে শিশুখাদ্যের অনুমোদন দেয় সরকারের জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন)। তবে নেসলের শিশুখাদ্যে উচ্চমাত্রার চিনি ব্যবহারের বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী।

আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘আমরা অনুমোদন দিলেও গুণগত মান দেখে বিএসটিআই। আমরা মোড়কের বিষয়টি দেখে থাকি। এমন প্রতিবেদনের কথা আমার জানা ছিল না। তারপরও আমরা দেখব। আমাদের পক্ষ থেকে যা করার করব।’

বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক মো. রিয়াজুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোতে এমনটা হয়েছে, আমরা প্রতিবেদনে দেখেছি। এরই মধ্যে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করব। আগামী সপ্তাহে এটি করা হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই প্রতিটি প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যে চিনি থাকে। তবে সেটি উচ্চমাত্রার হলে সমস্যা। আর যেহেতু শিশুদের জন্য, এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, ‘প্রতিবেদনে যা এসেছে সেটির বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আমরা করব। আসলেই যদি সেরকম কিছু থাকে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। বিএসটিআই এসব পণ্যের অনুমোদন দেয়। এখন থেকে আমরা এটি পরীক্ষা করব।’