নেতৃত্ব দিয়ে ইমরুল জেতালেন চট্টগ্রামকে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ইমরুল কায়েসের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় যে অভিযোগ, তাঁর ব্যাটে ধারাবাহিকতার অভাব। এক ম্যাচে রান করলে পরের বেশ কিছু ইনিংসে হাসে না তাঁর ব্যাট। তাই একাধিকবার বাদ পড়েছেন জাতীয় দল থেকে, আবার ফিরেও এসেছেন। কিন্তু বিপিএলে যেন দেখা যাচ্ছে অন্য এক ইমরুলকে। ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক, কাল মাহমুদ উল্লাহর চোটজনিত অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে জিতিয়েছেন দলকে। ঢাকা প্লাটুনের ১২৪ রানের চ্যালেঞ্জ ৮ বল হাতে রেখে পেরিয়ে যায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ৫৩ বলে হার না মানা ৫৪ রানে ম্যাচসেরাও ইমরুল। দারুণ ছন্দে থাকা এই ইমরুলকে দেখে মুগ্ধ প্রতিপক্ষ ঢাকা প্লাটুন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও।

বিপিএলের অন্য ম্যাচে রংপুর রেঞ্জার্সকে ৫২ রানে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্স। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ১৮২ রান করেছিল খুলনা। মুশফিকুর রহিম ৫৯, নাজিবুল্লাহ জাদরান ৪১ ও নাজমুল হোসেন শান্ত করেছিলেন ৩০ রান। মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ২৮ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। জবাবে রংপুর করে ১৩০। অস্ট্রেলিয়া থেকে উড়ে আসা শেন ওয়াটসন দায়িত্ব পান রংপুরের নেতৃত্বের। কিন্তু ১০ বলে ৫ রানেই আউট ওয়াটসন। মোহাম্মদ নাইম ২০ ও ক্যামেরন ডেলপোর্ট ফেরেন ৯ রানে। লুইস গ্রেগরি শুরুটা ভালো করেও আউট ৩৪ রানে।

রাতভর বৃষ্টি, কুয়াশা আর মেঘলা আবহাওয়ার সমীকরণে ঢাকার উইকেটে ব্যাট করা হয়ে উঠেছিল কঠিন। মুদ্রাভাগ্যটা তাই হয়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ণ, যেটাতে জিতেছেন ইমরুল। শুধু টসেই ভাগ্য তাঁকে সহায়তা করেনি, ম্যাচেও পেয়েছেন প্রতিপক্ষের বদান্যতা। বল ডিফেন্ড করে সামনে এসে শ্যাডো করছিলেন আর উইকেট ঠুকছিলেন, তখন মমিনুলের থ্রো ভেঙে দিয়েছিল স্টামপ। আপিল করলে আউটই হয়ে যেতেন ইমরুল; কিন্তু মাশরাফি ক্রিকেটীয় ভদ্রতায় আপিল করেননি। তবে শুধু সৌভাগ্যে কাজ হয় না, প্রচেষ্টাও লাগে। ইমরুলের ব্যাটে ছিল সেই দৃঢ়তা, ‘চট্টগ্রামে আমাদের আগের ম্যাচটিতে ১৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করেও আমরা খুব কষ্টে জিতেছিলাম। তাই আজকে (কাল) ব্যাট করতে আসার সময় পরিকল্পনা ছিল বল, স্ট্রাইক রেট কিছুর দিকে তাকাব না। একজন সেট ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত থাকলে ১২০-১২৫ রানের টার্গেট তাড়া করে জিতে যাওয়া সম্ভব।’ হয়েছেও তাই, ইমরুলের ৫৩ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে ভর করে ঢাকা প্লাটুনের ৯ উইকেটে করা ১২৪ রান ৮ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে টপকে গেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কাল হাফসেঞ্চুরি করে এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের তালিকায় দুইয়ে উঠে এসেছেন ইমরুল। ৮ ম্যাচে তাঁর রান ২৮৯, গড় ৫০০ ছুঁই ছুঁই আর স্ট্রাইক রেট ১৩০-র ওপরে। চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গের সঙ্গে কালকের ঢাকার উইকেটের আকাশ-পাতাল ফারাক, দুই জায়গাতেই রান করেছেন ইমরুল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে জানালেন, ‘আমি পারফরম করার চেষ্টা করব, কখনো সফল আবার কখনো বিফল হব। একজন খেলোয়াড় সব সময় সফল হতে পারে না। আমি সেভাবে টার্গেট করতে চাই না যে এখানে ভালো খেললে জাতীয় দলে ডাক পাব।’

বরাবরই পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে থাকা ইমরুল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের দেশি-বিদেশি এক ঝাঁক তারার মধ্যেও হয়ে উঠেছেন ভরসার নাম। ব্যাট হাতে ধারাবাহিক, নেতৃত্বেও চৌকস। তাই মাশরাফিও তাঁর প্রশংসা করে বললেন, ‘ইমরুলকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এভাবে খেললে সে যেখানে যাওয়ার সেখানে যেতে পারবে।’