নিষেধাজ্ঞা কাটলেও এ বছর আলু যাচ্ছে না রাশিয়ায়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ 

সাত বছর আগে বাংলাদেশের ওপর আলু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল রাশিয়া। সেই নিষেধজ্ঞা তুলেও নিয়েছে দেশটি। কিন্তু এমন সময় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে যখন বাস্তবে এর কোনো সুফল মিলবে না। কাগুজে সিদ্ধান্ত হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। বিশেষ করে এ বছর রাশিয়াতে আর আলু রপ্তানির কোনো সম্ভাবনা নেই।

গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের ওপর থেকে আলু রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে তাদের সঙ্গে কোনো দেশই স্বাভাবিক আর্থিক লেনদেন করতে পারছে না। ফলে নিষেধাজ্ঞা উঠলেও রাশিয়াতে কবে আলু রপ্তানি করা সম্ভব হবে সেটা এখনও অজানা।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি শিগরির সমাধান হলেও দেশে আলুর মৌসুম শেষ হয়ে যাবে। এখন দেশে আলুর ভরা মৌসুম চলছে। ফলে নিষেধাজ্ঞার সুফল পেতে ন্যূনতম আরও এক বছর সময় লাগবে।

poteto-4.jpg

এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ও ফেরদৌস বায়োটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে। শুরু থেকে তিনি রাশিয়াতে আলু রপ্তানি করে আসছেন।

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুবিধা আগামী বছর পাওয়া যাবে। সাত বছরের অপেক্ষা আরও এক বছর বাড়বে। কারণ এখন আমাদের রপ্তানি মৌসুম। কিন্তু সে দেশে যুদ্ধ চলছে। এ বছর আর কিছু হবে না।

রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইতিবাচক ফল আসতে পারে। তবে সেজন্য অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই।

poteto-4.jpg

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে শেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৪ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে রাশিয়ায়। এর আগের ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ আরও বেশি ছিল। সে বছর ২০ হাজার টন আলু রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করে ৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার।

এখন সাত বছরের হারানো এ বাজার ধরতে বাংলাদেশের আরও দীর্ঘসময় লাগবে জানিয়ে ফেরদৌসী বেগম বলেন, সাত বছর কোনো বায়ারের (ক্রেতা) সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। তারা কিন্তু বাংলাদেশের থেকে আলু নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে বসে নেই। তাদেরও নতুন করে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু সেটা কঠিন প্রতিযোগিতা হবে। কারণ আমাদের জায়গাটা ভারত ও চীন ধরে ফেলেছে। এখন সেসব বায়ারকে আগের মতো আলু দেওয়া অনেক সময়সাপেক্ষ।

ফেরদৌসী বেগম বলেন, বায়ার আমরা তৈরি করি। এক্ষেত্রে সরকার কোনো সহায়তা দেয় না। এখন বাজার ধরতে হলে সরকারের বড় সহায়তা প্রয়োজন। মেলা, প্রদর্শনী রোডশো করে রাশিয়াকে বাংলাদেশের সেই হারানো বাজার সম্পর্কে জানাতে হবে। নতুবা এতদিন পর বায়াররা আগ্রহী হবেন না।

poteto-4.jpg

রপ্তানিকারকরা বলছেন, রাশিয়া আলুর জন্য একটি বড় বাজার। কারণ সেখানে অন্যতম প্রধান খাদ্য আলু। রাশিয়ার মাধ্যমে ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের মতো দেশগুলোর বাজারেও প্রবেশ করা যায়। সবমিলে রাশিয়াতে আলু রপ্তানি হতে পারে অন্তত পাঁচ লাখ টন।

ব্রাউন ড্রাউট নামক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়ার কথা বলে ২০১৫ সালের ৬ মে বাংলাদেশি আলু আমদানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়ার ফেডারেল সার্ভিস ফর ভেটেরিনারি অ্যান্ড ফাইটোস্যানিটারি সার্ভিল্যান্স। এরপর গত ৭ মার্চ ঢাকায় নিযুক্ত রুশ দূতাবাস বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের তথ্য জানায়। তার আগে থেকেই বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আলু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতকে কয়েকবার অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন।

এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর একসঙ্গে বাংলাদেশের আলু, চীনের বাদাম, বসনিয়ার নাশপাতি, সার্বিয়ার বোন অ্যান্ড সিড ফ্রুটস এবং আজারবাইজানের আপেল আমদানির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। যা একটি কূটনৈতিক কৌশলও বলে মনে করছেন অনেকে।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ