নির্বাচন : ফিনল্যান্ডেও কি ডানপন্থীরা ক্ষমতায় আসবে?

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

জাতীয় নির্বাচনে রবিবার ভোট দিচ্ছেন ফিনল্যান্ডের মানুষ। নির্বাচন ঘিরে উৎসাহ বাড়ছে। ক্ষমতায় আসা নিয়ে তিনটি দলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। দেশে এবং দেশের বাইরে তুমুল জনপ্রিয় সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দলের সানা মারিন দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে লড়ছেন। তাকে সরিয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ডানপন্থী এবং অভিবাসনবিরোধী দলগুলো।

প্রতিবেশী সুইডেনে জাতীয়তাবাদীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি গত বছর ইতালিতে জয়ী হয়েছেন অতি ডানপন্থীরা। ইউরোপের এই জাতীয়তাবাদী তরঙ্গে ফিনল্যান্ডও যোগ দেবে কি-না তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হতে পারে।

ই-২ গবেষণা ইনস্টিটিউটের জুহো রাহকোনেন  বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জরিপগুলোয় দেখা গেছে, ফিনল্যান্ডে ডানপন্থী রাজনৈতিক প্রবণতা আরো শক্তিশালী হচ্ছে।’

এদিকে ন্যাটো প্রতিরক্ষা জোটে ফিনল্যান্ডের আনুষ্ঠানিক যোগদানের মাত্র কয়েকদিন বাকি। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট। এর পরই ফিনল্যান্ডের ন্যাটোয় যোগ দেওয়া নিশ্চিত হয়। এর মাঝে ফিনল্যান্ডের নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে।

নিয়ম অনুসারে, সংসদে আটটি প্রধান দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল সরকার গঠনের প্রথম সুযোগ পায় এবং ১৯৯০ সাল থেকে সেই দলটি সব সময় প্রধানমন্ত্রিত্বের পদের দাবি করে আসছে।

শনিবার হেলসিংকিতে চূড়ান্ত প্রচারণা সভায় মেরিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নির্বাচনে জয়ী হওয়া এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’

বৃহস্পতিবার পাবলিক ব্রডকাস্টার ওয়াইএলই প্রকাশিত সবশেষ জরিপে দেখা যায়, কেন্দ্রীয়-ডান জাতীয় জোট ১৯.৮ শতাংশ এগিয়ে আছে, জাতীয়তাবাদী ইউরোসেপ্টিক ফিন্স পার্টি ১৯.৫ শতাংশ সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সমীক্ষায় মারিনের দল ১৮.৭ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। মারিন নেতৃত্বাধীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি) ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

শনিবার একটি প্রচার সমাবেশে ন্যাশনাল কোয়ালিশন নেতা পেটেরি অর্পো এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের প্রচার দুর্দান্ত ছিল। ফিনল্যান্ডে আমাদের সেরা প্রার্থীরা রয়েছেন। আমরাই সমীক্ষায় এগিয়ে রয়েছি। আমি আশাবাদী।’

মারিন এই শতকে ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্থান পেয়েছেন একটি জরিপে। জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এসডিপির আসন বাড়াতে তীব্র লড়াই করছেন তিনি। রাহকোনেনের মত, ‘মারিন যদিও ব্যতিক্রমীভাবে জনপ্রিয়, তবে তার বিরোধিতাও রয়েছে। তাই রাজনৈতিক বিভাজন আরো জোরদার হয়েছে।’

মারিনকে অনেকেই একজন শক্তিশালী নেত্রী হিসেবে দেখেন। কারণ তিনি করোনা মহামারি এবং ন্যাটো সদস্যপদ প্রক্রিয়া দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। কেউ কেউ তার প্রতি ক্রমবর্ধমান ঘৃণার কথাও বলছেন। লিঙ্গপরিচয়ের দিকটি নিয়েও কথা উঠেছে নানা সময়। মারিনের পার্টি করার ভিডিও ক্লিপগুলোর প্রতিক্রিয়াও অনেক ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতার পরিচয় বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

ভোটদাতারা কী বলছেন?
২৯ বছর বয়সী ভোটার ক্যাসপার কিলমালা তার ভোট দেওয়ার পর  বলেন, ‘আমি মারিনকে পছন্দ করতাম। তবে অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে তার ধারণাগুলো বাস্তবায়িত করা সম্ভব বলে মনে হয় না। সরকার এমন কিছু অর্জন করতে পারবে বলে মনে হয় না।’

ফিনল্যান্ডের ঋণ ও জিডিপি অনুপাত ২০১৯ সালে ৬৪ শতাংশ থেকে ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা অর্পোর ন্যাশনাল কোয়ালিশন ৬০০ কোটি ইউরো খরচ কমিয়ে সমাধান করতে চায়।

মারিন অভিযোগ করেছেন, ন্যাশনাল কোয়ালিশন ‘গরিবদের থেকে নিয়ে ধনীদের দিতে চায়’। ফিনল্যান্ডে উগ্র ডানপন্থী দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে তা হবে প্রথমবার তাদের ক্ষমতায় আসা।

অন্যদিকে ইউরোসেপ্টিক পার্টি অভিবাসন বিষয়ে কঠোর নিয়ম আরোপ করতে চায়। প্রতিবেশী সুইডেনের সঙ্গে ‘গ্যাং ভায়োলেন্সের’ মতো সমস্যার কথা বলে সতর্ক থাকার কথা বলছে তারা।

পুররা শনিবার  বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কিশোর অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে।’ রাহকোনেন বলেন, গত গ্রীষ্ম থেকে পপুলিস্ট পার্টির প্রতি সমর্থন বেড়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সমর্থন আরো বাড়ছে।

দলটি ২০১৫ সালে একটি কেন্দ্র-ডান সরকারে থাকার সময় পরবর্তীতে দুটি উপদলে ভেঙে যায়। একটি হার্ড লাইন এবং অন্যটি মধ্যপন্থি। তবে সংসদে শুধু কট্টরপন্থীরাই আছেন।

ফিনস পার্টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন সঙ্গে ফিনল্যান্ডের বিচ্ছেদ ঘটানোকে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হিসেবে দেখে। ২০৩৫ সালের জন্য ফিনল্যান্ডের কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য স্থগিত করতে চায় তারা।

হেলসিংকির একটি ভোটকেন্দ্রে ৩১ বছর বয়সি ভোটার মার্কাস হলস্টেন এএফপিকে বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী দলটি সম্ভবত জয়ী হতে চলেছে। তাই আমি এটি বন্ধ করার জন্য ভোট দিতে এসেছি।’

মারিন ফিনস পার্টিকে ‘বর্ণবাদী’ দল হিসেবে উল্লেখ করে তাদের সঙ্গে সরকার গঠনের সম্ভাবনা অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে অর্পো জানান, অভিবাসন, ইইউ এবং জলবায়ু নীতি নিয়ে ফিনস পার্টির সঙ্গে বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি বিকল্পগুলো উন্মুক্ত রাখবেন।

ফলে পরবর্তী সরকার গঠনে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা থাকতে পারে তার। কারণ ফিন্স পার্টি এবং এসডিপি উভয়েরই সম্ভবত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য অর্পোর প্রয়োজন হবে। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।সূত্র: কালের কণ্ঠ