সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের বিধান রেখে আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে।
তবে একজন নির্বাচন কমিশনার এর বিরোধীতা করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে কমিশনের বৈঠক বর্জন করেছেন।
বিরোধিতাকারী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএম এর বিরোধীতা করছে, সেটিসহ তিনটি কারণে তিনি এই অবস্থান নিয়েছেন।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংসদে পাস হওয়ার পর তারা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা না করার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তাঁর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার কমিশনের বৈঠকে একজন ছাড়া অন্য কমিশনাররা ইভিএম এর পক্ষে মত দিয়েছেন বলেও মি:হুদা জানিয়েছেন।
এখন নিজেদের মধ্যে থেকে বিরোধিতা আসার পরও নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একজন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে ইভিএম সর্ম্পকিত বৈঠকই বর্জন করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সহ কয়েকটি দল ইভিএম এর পক্ষে রয়েছে।
বিরোধীদল বিএনপিসহ বেশিরভাগ দলই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইভিএম ব্যবহারের বিরোধীতা করে আসছিল।
কমিশনও আগে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার কথা বলেছিল।
কিন্তু শেষপর্যন্ত সে সম্পর্কে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, আরপিও সংসদে পাস হওয়ার পর তারা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা না করার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেবেন।
“আইন যদি পাস করে পার্লামেন্ট, তারপর আমরা আমাদের প্রদর্শনী দেখাবো। সেখানে যদি স্টেকহোল্ডারদের সম্মতি থাকে,তারপর কমিশন বসবে। পরিবেশ পরিস্থিতি যদি অনুকূলে থাকে, তাহলে ইবিএম ব্যবহার হতে পারে। আমরাতো এই জাতীয় নির্বাচনেই ব্যবহার করার কথা এখনই বলছি না।এটা বিষয়টা প্রস্তুতিমূলক।”
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় রয়েছে। এমন সময়ে কমিশন ইভিএম এর বিষয়টি সামনে আনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক দেখা দেয়।
কিন্তু এখন সেই বিতর্ক ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে আসে একজন কমিশনারের বৈঠক বর্জনের বিষয়।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, তিনি ইভিএম নিয়ে আরপিও সংশোধনী চাননি বলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন।
“তিনটি কারণে আমি আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। প্রথম কারণটিই হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন প্রথম থেকেই বলে এসেছে,সব রাজনৈতিক দল না চাইলে জাতয়ি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না।অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলই একাদশ জাতয়ি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে।”
মি: তালুকদার দ্বিতীয় কারণ উল্লেখ করেছেন যে, ইভিএম ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশন যাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে,তাদের প্রশিক্ষণ অপর্যাপ্ত বলে তিনি মনে করেন।
তাঁর তৃতীয় কারণটি হচ্ছে, “ইভিএম ব্যবহারে ভোটারদের মধ্যে অনীহা রয়েছে বলে আমার মনে হয়।এজন্য ব্যাপক প্রচার এবং ভোটারদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল।আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়ের মধ্যে তা সম্ভব নয়।”
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিষয়টিতে দ্বিমত পোষণ করেছেন বা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।কিন্তু তিনি কমিশনের বৈঠক থেকে কেন বেরিয়ে এলেন বা বর্জন করলেন?এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন,যেহেতু তিনি ইভিএম এর বিরোধীতা করছেন, সেজন্য ঐ আলোচনায় তিনি থাকেননি।
“বৈঠকে তারা আইন সংশোধনের ব্যাপারে অক্ষর ধরে ধরে আইনের সংশোধনী তারা করছিলেন।যে বিষয়টা আমি আদৌ চাই না যে, আইনটি সংশোধিত হোক। সেখানে আমি কেন মূর্তির মতো বসে থাকবো।এবং তারা সংশোধন করে যাবেন। আমার এটা যথোপযুক্ত মনে হয়নি।সেজন্য আমি মনে করেছি, তারা তাদের কাজ করুন। আর আমি ফিরে আসি।”
প্রধান নির্বাচন কমিনার এবং চার কমিশনার নিয়ে এই কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, একজন কমিশনার তাঁর ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন।অন্য কমিশনাররা বৈঠকে থেকে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
এখন অল্প সময়ের মধ্যে কমিশনের সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে।
মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের পর তা সংসদে যাবে।