সোমবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

নির্বাচনী মাঠে আজ সেনাবাহিনী নামছে

Paris
ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮ ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ মাঠে নামছে সেনাবাহিনী। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ভোট গ্রহণের আগে, ভোট গ্রহণের দিন ও পরে (২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত) স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।

রোববার বিকাল থেকে সেনারা অস্থায়ী ক্যাম্পে পৌঁছাতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)।

আইএসপিআর জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩৮৯ উপজেলায় সেনাবাহিনী এবং ১৮ উপজেলায় নৌবাহিনী কাজ করবে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এদিকে এ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সেনাবাহিনী ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন রাজনীতিবিদরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাত থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী এলাকার দিকে রওনা হয়েছেন। সোমবার থেকে সেনানিবাস থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে সশস্ত্র বাহিনী। যে ৬টি নির্বাচনী এলাকার সব ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হবে, সেখানে কর্মকর্তাদের কারিগরি সহায়তা দেবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। তবে তারা কোনো ধরনের গোলাবারুদ ব্যবহার করবেন না।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আদলে এবারও ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন।

১৩ ডিসেম্বর সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ওইদিন তিনি বলেন, ‘ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৮ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য, ২২ ডিসেম্বর থেকে কোস্টগার্ড সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। রোববার এক বিবৃতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য দেশের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করবে না। ‘আশা করছি, সশস্ত্র বাহিনী জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিংবা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করবে না। সশস্ত্র বাহিনীর ওপর দেশ ও দেশের ইমেজ নির্ভর করে।’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে স্বাগত জানাই। আশা করছি, সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের ফলে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে যা এতদিন ছিল না।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনী নিয়োগের ফলে নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এতদিন এটি মোটেও বিদ্যমান ছিল না।’ নির্বাচনে সেনাবাহিনী শুধু টহল দিলেই চলবে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্বাচনে ‘ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী কাজ করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে ইসির কাজে যাবতীয় সহায়তা দেবে সশস্ত্র বাহিনী। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বিবেচনা বা নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এই বাহিনী। উপকূলবতী এলাকায় নৌবাহিনী প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা সদস্য সংরক্ষিত (রিজার্ভ) হিসেবে মোতায়েন থাকবে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ডাকা হলে, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে সশস্ত্র বাহিনী। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা না গেলে ঘটনাস্থলে থাকা সর্বোচ্চ পদের ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারবেন। জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশনড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেফতার করার নির্দেশ দিতে পারবেন। সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত নির্দেশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা লিখিত আকারে দেবেন।’

পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘ঝুঁকির বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে কম-বেশি করা যাবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনাসদস্য সংরক্ষিত হিসেবে মোতায়েন থাকবেন। বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান জননিরাপত্তা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও বাহিনীগুলোর অনুরোধে উড্ডয়নে সহায়তা করবে।’

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে পরিপত্রে বলা হয়, ‘যে ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সেখানে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তবে বাহিনীর পোশাকে থাকবেন কিন্তু কোনো ধরনের অস্ত্র-গোলাবারুদ বহন করবে না। ইভিএম কেন্দ্রে যেসব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকবেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নিকটতম টহল দল ও স্থানীয় ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

পরিপত্রে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি কেন্দ্রীয় কো-অর্ডিনেশন সেল থাকবে। সেলের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অনুরূপ জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন সেল স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রীয় সেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ২৭ ডিসেম্বর স্থাপিতব্য জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন সেলে জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন।’

পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ও তাদের রেশন স্ব স্ব বাহিনীর সদর দফতর নির্ধারণ করবে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আবাসন ব্যবস্থা নির্ধারণ করবে। সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগী/ হতাহতদের জরুরিভাবে চিকিৎসা ও স্থানান্তরের জন্য বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার সুবিধাজনক স্থানে মোতায়েন রাখবে। ভোটদানের জন্য ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেন, সে জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটসমূহ নিবিড়ভাবে টহলের ব্যবস্থা করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকার কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা এবং বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধে সদা সজাগ থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া। ওইসব ভোট কেন্দ্রে প্রয়োজনে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চিকিংয়ের ব্যবস্থা করা।

নাটোরে সেনাবাহিনী মোতায়েন : নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরের চারটি সংসদীয় নির্বাচনী আসনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার দুপুরে বগুড়া সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল নাটোরে এসে পৌঁছেছে।

সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করে নাটোরের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাসদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে।

নাটোরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোস্তফা আরিফ পিএসপি। সোমবার সকাল থেকে সেনাসদস্যরা তাদের কাজ শুরু করবেন। সূত্র: যুগান্তর

সর্বশেষ - জাতীয়