নিজের জীবন বিপন্ন করে বহু প্রাণ বাঁচালেন পুলিশ কর্মকর্তা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

শুক্রবার ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সুপার মার্কেটে সন্ত্রাসী হামলার পর সেই বন্দুকধারীর চেয়েও বেশি আলোচনায় এখন একজন সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা। যিনি এক জিম্মিকে সরিয়ে নিজেকে সেই জায়গায় নিজে জিম্মি হয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে ফ্রান্সের থ্রেব শহরের সুপার ইউ শপ নামের একটি সুপারশপে ঢুকে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে এক বন্দুকধারী। মার্কেটে ঢোকার আগে একটি গাড়ি ছিনতাই করে জগিং করতে থাকা পুলিশের দিকে গুলিও ছোড়ে সে। ওই সময় এক পুলিশ সদস্য আহত হন।

পরে একটি ঝোপের আড়াল থেকে ছিনতাই করা গাড়ির এক আরোহীর মরদেহ এবং চালককে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়।

মার্কেটে থাকা লোকজনকে জিম্মি করে রেদওয়ান লাকদিম নামের ওই বন্দুকধারী প্যারিস হামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবিত সন্দেহভাজন সালাহ আবদেসলামের মুক্তি দাবি করতে থাকে। ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর হওয়া ওই হামলায় ১৩০ জন নিহত হয়েছিল।

মার্কেটে ঢুকে কয়েকবার গুলি চালিয়ে প্রথমে একজন ক্রেতা ও মার্কেটের এক কর্মীকে হত্যা করে। গুলিতে আহত হয় আরও অনেকে। তারপর সেখানে থাকা লোকজনদের জিম্মি করে রেদওয়ান ঘোষণা দেয়, সে জঙ্গি সংগঠন কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর একজন যোদ্ধা।

ওই সময় পেছনে কোল্ড রুমে লুকিয়ে থাকা বেশ কয়েকজন পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে সফল হলেও আরও অনেকে মার্কেটের ভেতর জিম্মি অবস্থায় ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বরাতে বিবিসি জানায়, হামলা শুরুর পর থেকে ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় পুলিশ আরও কয়েকজনকে বের করে নিতে সফল হলেও এক নারীকে রেদওয়ান জিম্মি করে ঢাল হিসেবে সামনে ধরে রেখেছিল। তাই তার কাছে যেতে পারছিল না পুলিশ। বাইরে থেকেই নিরস্ত্র করার চেষ্টা চালাচ্ছিল।

ওই সময় ভেতরে ঢুকতে সফল হওয়া ৪৫ বছর বয়সী পুলিশ অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরনড বেলট্রাম ওই জিম্মির জায়গায় নিজে হামলাকারীর ঢাল হওয়ার অনুরোধ জানালে রেদওয়ান ওই নারীকে ছেড়ে আরনডকে তার ঢাল বানিয়ে নেয়।

সেই সুযোগে আরনড নিজের মোবাইল ফোনের লাইন চালু করে পাশের টেবিলে রেখে দেন, যেন বাইরে থাকা পুলিশ বাহিনী ভেতরের অবস্থা বুঝতে পারে।

হঠাৎ করে আরনড রেদওয়ানের ওপর আক্রমণ করে তাকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা শুরু করার সময় পুলিশ মোবাইল ফোনে গুলির আওয়াজ শুনতে পায়। সাথে সাথে ভেতরে ঢুকে পুলিশের ট্যাকটিকাল টিম গুলি চালালে বন্দুকধারী মারা যায়। কিন্তু তার সাথে গুরুতর আহত হন আরনডও। তিনি এখন মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরার্ড কলম্ব সাংবাদিকদের কাছে লে. কর্নেল আরনডের বীরত্ব ও সাহসিকতার প্রশংসা করেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, আরনড নিজের জীবন বাজি রেখে সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন। গর্বিত করেছেন তার সহকর্মীসহ পুরো দেশকে।

ওই হামলায় মোট ৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৬ জন। এর মধ্যে দু জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

হামলায় রেদওয়ানের সহযোগী সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফরাসি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ২৫ বছর বয়সী হামলাকারী মরোক্কো বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক। ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় তার নাম ছিল।

 

কালের কণ্ঠ