নাসিরনগরে তাণ্ডব: মামলার চার্জশিটে আসামি হচ্ছেন আ. লীগ-বিএনপি নেতারা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরে তাণ্ডবের ঘটনার এক বছর পর এ বিষয়ে একটি মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা পড়বে আগামী ১০ ডিসেম্বর। এতে আসামি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাসহ ২২৮ জন। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু জাফর শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুলচেরা বিশ্লেষণ ও যাচাই শেষে মামলার অভিযোগপত্র তৈরির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এখন আদালতে দাখিল করা শুধু সময়ের ব্যাপার।’

গত বছরের ৩০ অক্টোবর গৌর মন্দিরে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। এ কারণে গৌর মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চৌধুরী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আড়াই থেকে তিন হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মামলায় একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তারা হলেন— নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক মো. আবুল হাসেম, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি (জেলা থেকে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা) ফারুক মিয়া, চাপরতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি (জেলা থেকে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা) হাজী সুরুজ আলী, নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হান্নান, হরিপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. জামাল মিয়া, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আমিরুল হোসেন চকদার, হরিপুর গ্রামের কাপ্তান মিয়া, বিল্লাল হোসেন, মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকে।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর রোসরাজ দাস নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের জেলে পরিবারের এক তরুণ ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননা করেছে এমন অভিযোগ ওঠে। পরদিন ৩০ অক্টোবর একাধিক ইসলামি সংগঠন উপজেলা সদরে মাইকিংয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করে। পরে মিছিল নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা সদরে পৃথক দুটি প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেয়।

ওই সমাবেশ থেকে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে নাসিরনগর উপজেলা সদরের দাসপাড়া, গাঙ্কুল পাড়া, ঘোষ পাড়া, নমসুদ্র পাড়া ও ঠাকুরপাড়ায় একযুগে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ১০ মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে । পরে কয়েক দফায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় আরও একাধিক বাড়িতে।

এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে আড়াই থেকে তিন হাজার লোককে আসামি করে নাসিরনগর থানায় মোট ৮টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় মোট ১২৪ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। বর্তমানে আসামিদের সবাই জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।

 

বাংলা ট্রিবিউন