নারী ‘সুইমিং জোনের’ শুধু সাইনবোর্ডই আছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: 

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে নারীদের জন্য আলাদা সুইমিং জোন বা সাঁতারের জায়গা উদ্বোধন করা হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বেশ ঘটা করেই এর উদ্বোধন করা হয়েছিল। এখন এই জোনের সৈকতে আছে শুধু সাইনবোর্ড; কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। সাইনবোর্ডে নারীদের সাঁতারের জায়গার শুরু-শেষ দেখানো হয়েছে। কিন্তু একেক দিন একেক জায়গায় ঘোরা ছাড়া সেই সাইনবোর্ডের আর কোনো কার্যকারিতা নেই।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে কয়েকটি যৌন হয়রানির ঘটনার পর সুগন্ধা বিচে নারীদের জন্য আলাদা জোন তৈরি করা হয়েছিল। তবে এ উদ্যোগ শুরু থেকেই বিভিন্ন সমালোচনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়া বেশির ভাগ নারী পর্যটক বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি এবং এখনো নিচ্ছেন না। তাঁদের কথা, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসে কেউ আলাদা করে অন্য জায়গায় সাঁতার বা গোসলের জন্য যাবেন না। আর কোনো নারী পর্যটক যদি একা আসেন বা শুধু নারীরা মিলে ঘুরতে আসেন, সে ক্ষেত্রেও আলাদা নয়, বরং সবাই যেখানে গোসল করে, সেখানেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।

সৈকত ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নারীদের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় কার্যক্রমটি প্রায় বন্ধই রাখতে হচ্ছে। গত ১১ থেকে ১৪ আগস্ট সকাল ও বিকেলে সুগন্ধা বিচে গিয়ে শুধু সাইনবোর্ডের দেখা মেলে। ২ সেপ্টেম্বর সকালেও দেখা যায় একই দৃশ্য। পরিবারের সদস্য বা অন্যদের সঙ্গেই সাগরে নামতে দেখা যায় নারীদের। সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে ডান পাশের হোটেল সিগাল বরাবর তৈরি করা হয়েছিল নারীদের জন্য বিশেষ জোন। জোনের দুপাশে দুটি সাইনবোর্ড লাগানো। তাতে লেখা: ‘মহিলাদের সাঁতারের স্থান শুরু’। অন্য প্রান্তে লেখা: ‘মহিলাদের সাঁতারের স্থান শেষ’। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ডে জেলা প্রশাসনের একটি হেল্পলাইন নম্বরও যুক্ত করে দেওয়া আছে, যাতে কেউ কোনো অভিযোগ থাকলে জানাতে পারেন।

সাইনবোর্ডে নারীদের সাঁতারের জায়গার শুরু-শেষ দেখানো হয়েছে। কিন্তু একেক দিন একেক জায়গায় ঘোরা ছাড়া সেই সাইনবোর্ডের আর কোনো কার্যকারিতা নেই।সাইনবোর্ডে নারীদের সাঁতারের জায়গার শুরু-শেষ দেখানো হয়েছে। কিন্তু একেক দিন একেক জায়গায় ঘোরা ছাড়া সেই সাইনবোর্ডের আর কোনো কার্যকারিতা নেই।

জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে, ছোট সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা নারী, সিঙ্গেল মাদার, দল নিয়ে ঘুরতে আসা নারীরা যাতে স্বস্তিতে সমুদ্রে নামতে পারেন, তার জন্যই এ ব্যবস্থা। সৈকতের নিরাপত্তাকর্মী ও লাইফগার্ডদের দায়িত্ব ছিল নারীদের নিরাপত্তা দেওয়া। প্রায় ১০০ মিটার সংরক্ষিত এ জোন বাদে সৈকতের অন্য সব স্থানও উন্মুক্ত থাকবে নারীদের জন্য।

তবে সৈকতে দায়িত্ব পালন করা একাধিক লাইফগার্ড নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সাইনবোর্ড এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া ছাড়া এই জোনের বাড়তি কোনো কার্যক্রম নেই অনেক দিন। ফলে লাইফগার্ড হিসেবে তাঁদের এখানে বাড়তি কোনো দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে না।

কক্সবাজারে ঘুরতে আসা নোয়াখালীর এক দম্পতির সঙ্গে এই প্রতিবেদকে কথা হয়। তাঁরা বলেন, নারীদের জন্য আবার আলাদা গোসলের জায়গা কেন লাগবে? আর স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এসে নারীরা আলাদা গোসল করতে যাবেন, এটাই-বা কেমন কথা?

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি জেনারেল মীর মোস্তাফিজুর রহমান   বলেন, নারীদের জন্য আলাদা সুইমিং জোন সেভাবে সাড়া ফেলেনি। পরিবার বা যে দলের সঙ্গে নারীরা আসেন, সবাই একসঙ্গে সমুদ্রে নামতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। একেকজন একেক হোটেল ওঠেন। তাঁরা তাঁদের সুবিধামতো জায়গাতে নেমেই গোসল করেন। এ ছাড়া সমুদ্রের ধর্ম অনুযায়ী সব সময় নির্দিষ্ট জায়গায় এ জোন রাখা সম্ভব নয়। জোয়ার-ভাটা, ভাঙনসহ বিভিন্ন কারণেই জায়গার পরিবর্তন ঘটে। সব মিলিয়ে যে উদ্যমে সুইমিং জোনের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তা এখন আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।

সুগন্ধা বিচে দায়িত্ব পালন করা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইসমাইল হোসেন  জানান, নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই এ ব্যবস্থা। কার্যক্রম বন্ধ কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যটকের সংখ্যা কম, তাই কার্যক্রম সেভাবে নেই। কিন্তু বর্তমানে জোনে কেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই—এ প্রসঙ্গে ইসমাইল হোসেন জনবলসংকটসহ অন্যান্য সমস্যার কথা জানালেন।

তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম শেখ বলেছেন, নারীদের সুইমিং জোনের কার্যক্রম সেই অর্থে বন্ধ নেই। সমুদ্র উত্তাল থাকলে বা অন্য কোনো কারণে কার্যক্রম বন্ধ থাকে। নারীদের জন্য আলাদা জোন করায় বিচে নারীদের যৌন হয়রানি কমেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

সৈকতে ঘুরতে এসেছিলেন আ ম নাছির উদ্দিন। আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশনএইডের ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশনের ব্যবস্থাপক তিনি। তাঁর কথায়, নারীদের জন্য আলাদা গোসল বা সাঁতারের জায়গা থাকার কোনো মানে নেই। এ ধরনের ব্যবস্থা করলে তা নারীদের অবমাননা করা ছাড়া আর কিছু হবে না। পুরো সৈকতেই নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করলে এ ধরনের ব্যবস্থার প্রয়োজনও হবে না।