নারায়ণগঞ্জের ঘটনা কেন ঘটল নিশ্চয়ই সেটা বের হবে : প্রধানমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জের মসজিদের ঘটনাটা কেন ঘটল সে বিষয়ে তদন্ত চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিশ্চয়ই সেটা বের হবে।

রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা প্রায় ৫০ জনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তারা। তাদের মধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সর্বশেষ ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‌‘নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনাটা ঘটেছে, মসজিদে যে বিস্ফোরণ ঘটল এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা সেখানে গেছেন। সেখানে নমুনা সংগ্রহ করছেন। এ ঘটনাটা কেন ঘটল, কীভাবে ঘটল সে বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে এবং আমি মনে করি, সেটা অবশ্যই বের হবে।’

তিনি বলেন, ‘যখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে আমার সঙ্গে কিন্তু সবসময় আমাদের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল মেসেজ পাঠিয়েছেন। প্রতি মুহূর্তে সকালে, বিকেলে মেসেজ পাঠাচ্ছেন এবং রোগীদের অবস্থা জানাচ্ছেন। অনেকে মারা গেছেন। বাকি যারা তাদের পোড়ার অবস্থা এত খারাপ তারপরও চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের সব ধরনের চিকিৎসা আমরা দিচ্ছি।‌ এখন আল্লাহ যদি এদের জীবনটা দিয়ে যান।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় এ ধরনের একটা বিস্ফোরণ। ওইটুকু একটা জায়গায় ছয়টা এসি লাগানো আবার গ্যাসের লাইনের ওপর নাকি এই মসজিদটি নির্মাণ! সাধারণত যেখানেই গ্যাসের পাইপলাইন থাকে সেখানে কোনো নির্মাণকাজ হয় না। আমি জানি না, রাজউক এটার পারমিশন দিয়েছে কি-না। এটা পারমিশন তো দিতে পারে না, দেয়া উচিত নয়।’

তিনি বলেন, ‘সবসময় একটা খুব আশঙ্কাজনক থাকে। সেটাই এখন তদন্ত করে দেখা হবে। মসজিদে সবাই দান করে, আজকাল তো সবার পয়সা আছে, এয়ারকন্ডিশন দিয়েছে। সেখানে এই যে বিদ্যুৎ সরবরাহটা, বিদ্যুৎ কতটা নিতে পারবে? সেটার ক্যাপাসিটি ছিল কি-না, সার্কিট ব্রেকার ছিল কি-না-এসব বিষয় কিন্তু দেখতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে তার একটা দুর্ঘটনা অবশ্যই ঘটতে পারে।’

ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে এবং নির্দেশ গেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ এবং গ্যাসসংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি এর কারণটা খুঁজে বের করার। সারাদেশে মসজিদগুলোতে যারা অপরিকল্পিতভাবে, ইচ্ছামতো এয়ারকন্ডিশন লাগাচ্ছেন বা যেখানে সেখানে একটা মসজিদ গড়ে তুলছেন, সে জায়গাটা আদৌ একটা স্থাপনা করার মতো জায়গা কি-না, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া বা সেখানে নকশাগুলো করা হয়েছে কি-না, সে বিষয়গুলো কিন্তু দেখা একান্ত প্রয়োজন। নইলে এ ধরনের ঘটনা দুর্ঘটনা যেকোনো সময় ঘটতে পারে।’

কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশন রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) শুরু হয়েছে। বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। সংসদে সাবেক মন্ত্রী ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিসহ দেশে-বিদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ ও লেবাননে বিস্ফোরণে নিহতদের স্মরণে শোক প্রকাশ করা হয়। এর আগে সংসদে আনা শোকপ্রস্তাবের ওপর সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।

মারা যাওয়া এসব ব্যক্তিকে স্মরণ করে সংসদে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সংসদ সদস্য রুহুল আমীন মাদানী। পরে সংসদের বৈঠক সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

চলতি সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে সংসদে আনা শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী ওই দিনের বৈঠক মুলতবি করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু, শাজাহান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা ও বিএনপির হারুনুর রশীদ।

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজ, লে. ক. (অব.) এইচ এম এ গাফ্ফার, আবুল কাশেম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, টি এম গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সাবেক হুইপ মো. আশরাফ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য আজিজুর রহমান, আ ন ম নজরুল ইসলাম, শেখ মো. নুরুল হক, এ টি এম আলমগীর, সুলতান উদ্দিন ভূঁইয়া, ড. শাহজাহান আলী তালুকদার, গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) সাইফুল আযম, কমরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিস ও ইঞ্জিনিয়ার শামছউদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে সংসদ।

এছাড়া সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত, সেক্টর কমান্ডার অবু ওসমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, প্রতিরক্ষ সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী, আইন সচিব নরেন দাস, সাবেক আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর, সাংবাদিক কামাল লোহানী, রাহাত খান, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরামুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু, সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখরের মা ও মাগুরা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেগম মনোয়ারা জামান, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল, ভাষা সংগ্রামী ডা. সাঈদ হায়দার, একুশে পদকপ্রাপ্ত আলাকচিত্রী সাইদা খানম, সংগীত ব্যক্তিত্ব সুরকার আলাউদ্দিন আলী, কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর, ভাস্কর মৃনাল হক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব বরকতউল্লাহ, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একান্ত সচিব ও ছোট ভাই আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে শোক জানানো হয়।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ