নাব্য সংকটে আটকে আছে পণ্যবাহী ৩০ কার্গো জাহাজ

পদ্মা-যমুনা নদীতে নাব্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে আটকে আছে উত্তরাঞ্চলগামী ৩০টির বেশি জরুরি পণ্যবোঝাই কার্গো জাহাজ।

সরেজমিন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ি। এ রুট দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্যবাহী শত শত কার্গো জাহাজ চলাচল করে থাকে। কিন্তু চলতি শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি অস্বাভাবিক কমে গিয়ে নৌপথের বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে।

আটকে থাকা কার্গো জাহাজগুলো হতে ট্রলার ও বলগেটের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য নামিয়ে গন্তব্যে নেয়া হচ্ছে। এভাবে কয়েক দিন পণ্য খালাসের পর জাহাজ হালকা হলে সেটি পুনরায় ছেড়ে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। পণ্যসামগ্রীও যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছে।

পাশাপাশি চ্যানেলে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। একেকটি জাহাজকে গন্তব্যে পৌঁছতে ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ছেড়ে আসা উত্তরাঞ্চলের নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী বন্দরগামী বিভিন্ন সার, গম, কয়লা ও ক্লিংকারবোঝাই ৩০টির অধিক কোস্টার জাহাজ গত কয়েক দিন ধরে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ১ কিলোমিটার ভাটিতে পদ্মা নদীতে আটকে আছে।

শনিবার দুপুরনাগাদ দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীতে নোঙর করে আছে- এমভি প্রিন্স অব আরহাম, এমভি তাজবীদ দীবা, এমভি রাসেল-৭, এমভি শাহনেওয়াজ, এমভি মিজাব-২, এমভি সুমাইয়া ছোঁয়া, এমভি হাসিবুর, এমভি সাবিত-৫, এমভি দেশভ্রমণ, এমভি ঝর্ণাসহ ৩০টির অধিক কোস্টার জাহাজ। শত শত শ্রমিক ওই জাহাজগুলো থেকে মালামাল নামানোর কাজ করছেন।

এ সময় আটকেপড়া কয়েকজন কার্গো মাস্টার বলেন, নৌ-চ্যানেলের মোল্লারচর, ব্যাটারিরচর, কানাইদিয়া, লতিফপুর, নাকালিয়া ও পেঁচাখোলা এলাকায় নাব্য সংকট সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনীয় পানির গভীরতা না থাকায় সেখানে ১০ থেকে ১৩ ফুট ড্রাফটের মালবোঝাই কোনো জাহাজ চলাচল করতে পারছে না।

এ কারণে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ছেড়ে আসা পাবনার নগরবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী বন্দরগামী বিভিন্ন মালামালবোঝাই কোস্টার জাহাজগুলো গত কয়েক দিন যাবত দৌলতদিয়ায় আটকা পড়ে আছে।

আটকেপড়া জাহাজ এমভি দেশভ্রমণের মাস্টার মো. ইমরুল শেখ জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরিয়া সারবোঝাই ১০ ফুট ড্রাফটের জাহাজ নিয়ে এসে তিনি এখানে এসে গত ৬ দিন ধরে আটকা পড়ে আছেন। এ অবস্থায় নৌ-চ্যানেলে দ্রুত খনন জরুরি।

পণ্যের আমদানি প্রতিনিধি সুমন দাস বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে জাহাজ থেকে মালগুলো আনলোড করতে না পারলে বয়ে আনা মালামালের মালিকপক্ষকে প্রতিদিন জাহাজপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। এক্ষেত্রে ২২ দিন পার হলে জাহাজ ভাড়া দ্বিগুণ পরিশোধ করতে হবে। তাই জাহাজ থেকে মালগুলো দ্রুত নামিয়ে সেগুলো বলগেটে করে নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অঞ্চল মানিকগঞ্জ ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ খান জানান, বর্তমানে পদ্মায় পানির গভীরতা রয়েছে ৭-৮ ফুট। এসব পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য প্রয়োজন ১২ থেকে ১৭ ফুট পানির গভীরতা। আমরা নৌ-বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেটি প্রচার করেছি। এরপরও অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই করে জাহাজ এসে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় আটকে পড়ছে।

 

সুত্রঃ যুগান্তর