নাটোরে হত্যাকাণ্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ৩০ বছর পর গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বহুল আলোচিত শাহাদত হত্যাকাণ্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিকে ৩০ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫। শনিবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে র‌্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার (২৩ জুলােই) র‌্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোরের কোম্পানী কমান্ডের কার্যালয় থেকে পাঠানে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামির নাম শাহজাহান আলী ওরফে সোহরাব হোসেন স্বপন (৫৪)। তিনি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার  পশ্চিম সোনাপাতিল এলাকার মৃত হোসেন আলীর ছেলে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- ১৯৯২ সালের ১৭ মে আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাটোরের নলডাঙ্গা থানাধীন বারনই নদীতে আসামি শাহজাহান আলী ওরফে সোহরাব হোসেন স্বপন প্রকাশ্য দিবালোকে শাহাদত আলী (৩২) নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। নিহত শাহাদত স্থানীয় নলডাঙ্গা বাজারে মাইক ও ব্যাটারী সার্ভিসিং এর দোকান এবং পাশাপাশি মাছের ব্যবসাও করত। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই দিনই নিহতের ভাই মো. সেকেন্দার আলী বাদী হয়ে নাটোর জেলার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একমাত্র আসামি শাহজাহানকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৯৯৫ সালের ২৯ মে নাটোর জেলার বিজ্ঞ জেলা সেশন আদালত অভিযুক্ত শাহজাহান আলীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। আদালতের এই আদেশের পর আসামি শাহজাহান আত্মগোপনে চলে যায়। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি শাহজাহান আলীকে গ্রেফতারে তৎপর হয় র‌্যাব।  এরই ধারাবাহিকতায়  কোম্পানী অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন এবং কোম্পানী উপ-অধিনায়ক মো. রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাকে ওিই এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়- গ্রেফতারকৃত আসামি স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। তারপর ১৯৯২ সালে শাহজাহান পার্শ্ববর্তী গ্রামের ফিরোজা বেগমকে বিয়ে করে। উক্ত বিয়েকে কেন্দ্র করে শাহজাহান এবং নিহত শাহাদত এর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিবাদমান বিরোধকে কেন্দ্র করে ১৯৯২ সালের ১৭ মে বারনই নদীতে নিহত শাহাদত গোসলের উদ্দেশ্যে নামলে পূর্ব বিরোধের জেরে আসামি শাহজাহানের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আসামি শাহজাহান তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে মৃত শাহাদত এর বুকে উপর্যপুরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় শাহাদতকে নাটোর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়- আসামি শাহজাহান আলী দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী পৌরসভায় নিজ পরিচয় গোপন করে সোহরাব হোসেন স্বপন নামে পরিচয় দিত। এছাড়া দিনাজপুরে সে তার আদি নিবাস ‘রংপুর’ বলে সবাইকে জানাত। প্রাথমিক পর্যায়ে সে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী এলাকায় বিভিন্ন কাজকর্ম করলেও গত ১০ বছর ধরে গাজীপুরে গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করছে। দিনাজপুর ফুলবাড়ীতে অবস্থানকালে সে তার নিজ নাম শাহজাহান এর পরিবর্তে সোহরাব হোসেন স্বপন নামে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে। সে দিনাজপুর ও ঢাকায় অবস্থান করলেও গোপনে নিজ এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। সাজাপ্রাপ্ত এই আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, শাহজাহান জনৈক ফিরোজা বেগমকে বিয়ে করার কারণে শাহাদতের সাথে তার বিরোধের সৃষ্টি হয় এবং ঘটনার দিন এই বিরোধের জেরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছুরি দিয়ে শাহাদদের  বুকে উপর্যপুরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এএইচ/এস