নাটোরে সাংসদ-ছাত্রলীগ মুখোমুখি: সাংসদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক,নাটের:
নাটোরের লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম এবং জেলা ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। এদিকে ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্র অবমাননা এবং ছাত্রলীগকে নিয়ে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম কটুক্তি করার প্রতিবাদে সাংসদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে ছাত্রলীগ। শনিবার দুপুরে নাটোর এনএস সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের আয়োজনে এই কর্মসূচী পালন করা হয়।

 
সূত্র জানায়, গত ১১ মে লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিলর অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অতিথি হিসেবে থাকার কথা থাকলেও পরে তারা আর আসেননি। পরে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ প্রধান অতিথি হিসেবে কাউন্সিলে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান জেমস, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

 
ওই দিনই প্রথম অধিবেশনের পর জেলা ছাত্রলীগ রাকিবুল হাসান জেমস এবং সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম স্বাক্ষরিত ইউসুফ আলীকে সভাপতি এবং ফরহাদ হোসেন নান্নুকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য লালপুর উপজেলা শাখা ছাত্রলীগ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু এই কমিটি প্রত্যাখান করে পাল্টা কমিটি ঘোষনা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। পরে সারোয়ার জাহান মানিককে সভাপতি এবং সজিব রানাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা করা হয়।


তবে সংসদ সদস্যের দেওয়া সেই কমিটি নিয়ে ঘোর আপত্তি জানায় নাটোর জেলা ছাত্রলীগ। অভিযোগ করা হয়, স্থানীয় সংসদ সদস্যে ছাত্রলীগের কোন গঠনতন্ত্র অনুসরন না করেই পকেট কমিটি ঘোষনা করেছেন। এছাড়া গত ১১ মে ছাত্রলীগের কাউন্সিলে সংসদ সদস্য ছাত্রলীগকে নিয়ে কটুক্তি করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এরই প্রতিবাদে শনিবার সকালে ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্র অবমাননা এবং ছাত্রলীগকে নিয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম কটুক্তি করার প্রতিবাদে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে নাটোর এনএস সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ।

 
ঘন্টা ব্যাপী  মানববন্ধনে কলেজ এবং পৌর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অংশ গ্রহন করে। এসময় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, এনএস সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাহাদত হোসেন রাজীব, সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়ার হোসেন রিয়ন, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শেখ রাসেল হৃদয়, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহিল কাফি শুভ।

 
মানববন্ধনে ছাত্রলীগের নেতারা বলেন, গত ১১ মে লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে গঠনতন্ত্র অবমাননা করে পকেট কমিটি ঘোষনা করেন। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ কে নিয়ে কটুক্তি করেন। অবিলম্বে পকেট কমিটি বাতিল করে সংসদ সদস্যকে দু:খ প্রকাশ করার জন্য আহবান জানানো হয়।


এদিকে, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্যে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান জেমস এবং সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুমের বিরুদ্ধে মোটা অংঙ্কের টাকা নিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের অভিযোগ করেছেন। এছাড়া স্বেচ্ছাচারিতা, অনৈক সুবিধা নিয়ে কমিটি গঠন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 
এবিষয়ে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোন কাউন্সিল না করেই আগে থেকে কমিটি গঠন করে রেখেছে। এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির জন্য ৫লাখ টাকা দাবী করে। তাদের দাবীকৃত টাকা না দেওয়ার কারনে তারা অছাত্রদের কমিটিতে স্থান দিয়ে অনুমোদন দিয়েছে।

 
সংসদ সদস্য আরো বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মেনেই সারোয়ার জাহান মানিককে সভাপতি এবং সজিব রানাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। তাছাড়া ছাত্রলীগের কমিটি করতে কোন অর্থের প্রয়োজন হয়না। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের নেতারা অর্থ নিয়ে তারা পকেট কমিটি করছে।

 
এবিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে না পাওয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নূরুজ্জামান খান নাদিম বলেন, সংসদ সদস্যের ছেলেকে সভাপতি করার জন্য জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেন। জেলা ছাত্রলীগ যে কমিটি ঘোষনা করেছে তা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মেনেই করা হয়েছে।

 
তিনি আরো বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করার এখতিয়ার শুধু জেলা ছাত্রলীগের। কিন্তু সংসদ সদস্য তার নিজের ক্ষমতা ও বল প্রয়োগ করে ইচ্ছামত পকেট কমিটি করেছে।
স/শ