নাটোরে জঙ্গি সন্দেহে পৌর কাউন্সিলর’র স্ত্রীসহ আটক তিন

নাটোর প্রতিনিধি:

জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা সন্দেহে নাটোর পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখের স্ত্রী, ভাই, বোনসহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতরাত ২টা থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত শহরের কানাইখালি এবং বড়হরিশপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্বে দেয়া পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আটককৃতরা হচ্ছে, নাটোর পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখের স্ত্রী শিউলি আক্তার (৩৮), ছোট ভাই জহুরুল ইসলাম (৩০) ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগম (২৭)। তবে অভিযানে মোট ৬জনকে আটক করা হলেও নান্নু শেখের বোন চামেলি বেগম (৪৫), চামেলি বেগমের স্বামী আব্দুল কুদ্দুস (৪৮) এবং তাদের ছেলে টুটুল হোসেন (২৩)কে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখের ভাগ্নি জামাই নাটোর সরকারী এনএস কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র এবং গুরুদাসপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ হাসানের জঙ্গী সংশ্লিস্টতায় জড়িত থাকার প্রমান পেয়েছে পুলিশ। এরই সূত্র ধরে জঙ্গী মাসুদ হাসান বড়হরিশপুর এলাকায় নান্নু শেখের বাড়িতে অবস্থান করছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানে নামে জেলা পুলিশ।

গতরাত ২টার থেকে ভোর পর্যন্ত নাটোর শহরের কানাইখালি এবং বড়হরিশপুর এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু অভিযানের খবর আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পালিয়ে যায় জঙ্গীরা। এসময় জঙ্গী সংশ্লিষ্টাতা সন্দেহে এবং আশ্রয়-প্রশয় দাতা হিসেবে তাদের কে আটক করা হয়। অভিযানের সময় কাউন্সিলর নান্নু শেখ বাড়িতে ছিলেন না।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশ কিছু ধরেই পুলিশের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গী দমন অভিযান চলছে। এরই অংশ হিসেবে নাটোরে কোন একটি হোটেলে জঙ্গী অবস্থান করছে এমন সংবাদে হোটেলগুলোতে ব্লক রেইট অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু সে অভিযান নিষ্পলে পরিনত হয়। আবারো শুক্রবার গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত একই অভিযান পরিচালনা করে জেলা পুলিশ। তবে এবারের অভিযান চলে  জঙ্গী মাসুদ হাসানকে ঘিরে। তার সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু অভিযানের খবর ফাঁস হওয়ার কারনে এবারও অভিযান বিফলে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের তালিকা ভুক্ত শীর্ষ জঙ্গী মাসুদ হাসান কে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এরআগেও এই জঙ্গী মাসুদ হাসানকে গ্রেফতারের জন্য গত ১১মে শহরের বড়হরিশপুর এলাকার দুটি বাড়ি ঘিরে রাখে বগুড়া এবং নাটোর জেলা পুলিশ। সে সময় অভিযানের খবরও আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারনে বিফলে যায় সে অভিযান।

এবিষয়ে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুখ খুলতে নারাজ। এসময় এই প্রতিবেদককে বলেন পুলিশ সুপারের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করতে।

তবে কাউন্সিলর নান্নু শেখ জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার ভাগ্নি জামাই যদি জঙ্গী সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সে অপরাধ করেছে। কিন্তু আমার স্ত্রী, ভাই, বোন সহ অন্যান্যেরা তো কোন অপরাধ করেনি। গ্রেফতার করা হলে মাসুদ হাসানকে গ্রেফতার করবে পুলিশ।

তিনি আরো বলেন, আমি আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান। আমিও চাইবো না কোন জঙ্গী সংগঠনের সাথে আমাদের পরিবারের কেউ জড়িত থাকুক। এখন পুলিশ সঠিক তদন্ত করে যেটা পাই সেবিষয়ে মেনে নিতে হবে। তবে তার স্ত্রী, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী জঙ্গীর সাথে জড়িত নয় বলে দাবী করেন তিনি।

আটক হওয়ার কথা শুনে বেলা এগারোটার দিকে সদর থানায় আত্মীয়দের দেখতে আসেন সুলতানা খাতুন নামের এক আত্মীয়। এসময় থানায় তার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, মাসুদ তো কোন জঙ্গী গোষ্ঠির সাথে জড়িত থাকতে পারে না। আমরা তো জানি সে ভাল ছেলে।

অভিযানের বিষয়ে নাটোর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ আবুল হাসনাত অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারের তালিকা ভুক্ত জঙ্গী মাসুদ হাসানকে গ্রেফতারে জিজ্ঞাসাবাদের তিনজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এবিষয়ে যাচাই-বাছাই করে পরে বিস্তারিত বলা যাবে।

 

স/আ