নাটোরে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে হবে পশু কোরবানী

মাহবুব হোসেন, নাটোর:
আর কয়েক দিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে কোরবানী তাই। তবে চলনবিলের বানভাসি মানুষদের এবারের কোরবানী ঈদ হবে একটু অন্য রকম। বণ্যায় বাড়ি-ঘর এমনকি ফসল জমি হারিয়ে নি:স্ব চলনবিলের বানভাসি মানুষরা। ইতোমধ্যে ২৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪হাজারের বেশি মানুষকে ঈদ উদযাপন করতে হবে আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে। তাই ঈদের আনন্দ অনেক মলিন চলনবিলের বানভাসি মানুষদের মনে।

এদিকে, চলনবিলের সিংড়া উপজেলার শতাধিক ঈদগাহ মাঠ এখনও পানির নিচে থাকায় ঈদুল আযহার নামাজ পড়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বানভাসি মানুষের মাঝে। এবার ভয়াবহ বন্যার কারণে এখনও এসব মাঠ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। সিংড়া পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়নের ৩৫১টি ঈদগাহ মাঠের মধ্যে এখনও ১১৬টি ঈদগাহ পানিতে তলিয়ে আছে। তবে পানি নামতে শুরু করায় এসংখ্যা কমে আসার সম্ভাবনা থাকলেও গত দু’দিনে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় আবার সে সম্ভাবনা ক্ষীন হতে চলছে। আর যে সব এলাকার মাঠ পানির নিচে রয়েছে সেসব এলাকার মসজিদ সমূহে নামাজ আদায়ের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৯৮৮সালের পর এবারের বন্যায় জেলার সিংড়া, নলডাঙ্গা এবং গুরুদাসপুর এই ৩ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একটি পৌরসভা সহ ১৭টি ইউনিয়নের ১৬৩টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গ্রামগুলোতে ১৪হাজার ১৮০টি পরিবারের ৬১হাজার ২৬০জন মানুষ ক্ষতির শিক্ষার হয়েছে। এছাড়া ১০হাজার ৯০২টি বাড়ি এবং ১৭হাজার ১৪হেক্টর ফসলি জমির ধান এবং প্রায় দুই হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। যার কারনে এবারের বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চলনবিলের সিংড়া উপজেলায়। অনেক মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। ফলে অনেকের কোরবানী বা পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ করার সমর্থ থাকলেও বন্যায় সেসব গুড়ে বালি হয়েছে।


সূত্র জানায়, কোরবানীর মাংস এবং ঈদ আনন্দ থেকে যাতে বানভাসি মানুষরা বঞ্চিত না হয় সে জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ইতোমধ্যে পৌরসভার ১২টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া বানভাসি মানুষদের জন্য ৪টি গরু এবং ৪টি খাসি ক্রয় করা হয়েছে। বাঁকি আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার আরো ৪ থেকে ৫টি গরু এবং ৪টি খাসি ক্রয় করে ঈদের দিন ওইসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পশু কোরবানী করা হবে। যাতে করে সমাজের অন্যাণ্যে মানুষদের মতো তারাও ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।

এদিকে, এবার বণ্যার কারনে ব্যাতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। উপজেলার ৩১৭টি ঈদগাহ মাঠের ইমামদের পোশাক দেয়া হচ্ছে। ৩১৭টি ঈদগাহ মাঠের ইমামদের পাঞ্জাবি এবং পায়জামা আগামী ৩১আগস্ট তাদের হাতে তুলে দিবনে, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

সিংড়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, সিংড়া উপজেলার ৪৫৬ টি গ্রামের মধ্যে ৩৫১ টি ঈদগাহ মাঠ রয়েছে। তবে এবারের বণ্যায় ১৬০টি ঈদগাহ মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। বর্তমানে এখনও ১১৬টি ঈদগাহ মাঠ পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। তবে বন্যার পানি কমতে থাকার কারনে জেড়ে উঠতে শুরু করেছে ঈদগাহ মাঠগুলো।

এবিষয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি সিল্কসিটি নিউজকে জানান, পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে উপজেলার যে সব ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করা সম্ভব হবে না, সেসব এলাকার মসজিদ সমুহে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া যে সব মাঠের পানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই মাঠগুলোতে বালি ফেলে নামাজ আদায় করার মত পরিবেশ তৈরির ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আর যে সব পরিবার বাড়ি ফিরতে পারবেন না তারা যেন ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন সেদিকে খেয়াল রেখে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

স/অ