নাটোরের ছায়াবানী ও গ্যারিসন সিনেমা হলে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়

মাহবুব হোসেন, নাটোর:
বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের রংবাজ ছবি দেখতে ঢল নেমেছে নাটোরের ঐতিহ্যবাহী ছায়াবানি সিনেমা হলে। সিনেমাটি বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চল বাসভবন নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির উত্তরা গণভবনে চিত্রায়িত হয়েছে। সিনেমার বেশ কিছু অংশে উত্তরা গণভনে শ্যুটিং হওয়ায় আগ্রহ ভরে সিনেমা হলে ছুটছে দর্শকরা। সুস্থ বিনোদন ধারা চলচ্চিত্র দেখতে পেয়ে সিমেনা হল মুখি হচ্ছে দর্শকরা। অনেকে ‘রংবাজ’ সিনেমাটি দেখে প্রসাংশাও করেছেন।

এদিকে জনপ্রিয় অভিনেতা সাকিব খান এবং অভিনেত্রী বুবলি অভিনিত ‘অহংকার’ ছবি চলছে জেলার দয়ারামপুর গ্যারিসন সিনেমা হলে। ফলে সব মিলে এবারের ঈদের ছুটিতে নাটোরের দর্শকরা প্রাণ ভরে সিনেমা দেখছেন। সিনেমা হল দুটি ফিরে পেয়েছে তার ঐতিহ্য। প্রতিদিন তিন শোতে অন্তত ৫শতাধিক দর্শক ছবি দেখছে।

জেলার বড়াইগ্রামের লক্ষীপুর থেকে আসা ছায়াবানী সিনেমা হলের সামনে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ইসলাম হোসেনের সাথে। এসময় তিনি বলেন, দীর্ঘ ১০বছর পর সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসলাম। আগের মতো সিনেমা তৈরী এবং পরিবেশ না থাকায় সিনেমা দেখা তার দীর্ঘ বিরতি ছিল। তাছাড়া সহজেই ইউটিউব সহ অন্যান্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমা গুলো পাওয়ায় সহজেই ঘরে বসে দেখা যেত, যার কারনে সিনেমা হলে আসা তার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু শাকিব খানের রংবাজ ছবিটি নাটোরে চিত্রায়িত হওয়ার কথা শুনে বন্ধুদের সাথে হলে সিনেমা দেখতে এসেছি।

সিংড়া উপজেলার জামতলী এলাকার সুমন হোসেন বলেন, আগে সিংড়া উপজেলায় তিনটি সিনেমা হল ছিল। কিন্তু বর্তমানে যার একটিও চালু নেই। যার কারনে নাটোরের ছায়াবানী সিনেমা হলে ছবি দেখতে এসেছি।

তিনি আরো বলেন, জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খানের রংবাজ ছবিটি নাটোরে শুটিং হয়েছে, এমন কথা শুনে ৮/১০জন বন্ধু মিলে ঈদের ছুটিতে ছবি দেখতে আসা। আশা করছি ছবিটি দেখে ভাল লাগবে।

তবে দু:সংবাদ হচ্ছে, দীর্ঘ দিন ধরে দর্শক শূণ্যতার কারণে মোট ১৩টি সিনেমা হলের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ১১টি। মাত্র দুটি সিনেমা হল চালু রয়েছে। তারপরও মাঝে মাঝে দর্শক শূণ্যতার কারনে ধ্বংসে নামে সিনেমা হল দুটিতে। কোন রকম বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রখেছে সিনেমা হল মালিকরা।

১৯৪৮ সালে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ট্রাফিক মোড়ে ছায়াবানী সিনেমা হলটি নির্মান করেন শহরের কানাইখালি এলাকার জয়নাল আবেদিন জুলু মিয়া। সে সময় চলচ্চিত্রের স্বর্ণ যুগ থাকায় কখনও দর্শক শূণ্য হয়নি সিনেমা হলটি। কিন্তু ডিজিটাল যুগে এসে সিনেমা হলটি পরিচালনায় বেগ পেতে হচ্ছে হলটির বর্তমান মালিক শফিকুর রহমান শফিকের। এরই মধ্যে দর্শক শূণ্যতার কারনে বেশ কয়েকবার বন্ধও করে দেয়া হয় হলটির। কিন্তু দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে আবারো নতুন রুপে গত পহেলা বৈশাখে ডিজিটাল হলে রুপান্তিত হয় ছায়াবানী সিনেমা হলটি। ৫শতাধিক দর্শক ধারণ ক্ষমতার এই সিনেমা হলটি এখনও ধুকে ধুকে পরিচালিত হচ্ছে। সারা দেশে যতটি সিনেমা হলে একযোগে ছবি মুক্তি পায় তার মধ্যে ছায়াবানী সিনেমা হলটিও একটি।

সূত্র জানায়, নাটোর সদর উপজেলার গীতি সিনেমা হল, স্টেশন বাজারের রোজি সিনেমা হল, হাসিনা সিনেমা হল এবং ট্রাফিক মোড়ের ছায়াবানী সিনেমা হল। এই চারটির মধ্যে ৩টি সিনেমা হলেই এখন বন্ধ। শুধু মাত্র চালু রয়েছে ছায়াবানী সিনেমা হল। এছাড়া সিংড়া উপজেলার বনলতা, বিচিত্রা সহ মোট ৩টি সিনেমা হল ছিল। যার সবগুলোই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সিনেমাহল গুলো ভেঙ্গে তৈরী হয়েছে বড় বড় সব মার্কেট। জেলার সব চেয়ে বাণিঝ্যিক এলাকা গুরুদাসপুরে কিরন এবং বিউটি নামে দুটি সিনেমা এখন বন্ধ। বাড়াইগ্রামের বনপাড়ায় মমতাজ সিনেমা হল এবং হিরামন সিনেমা হল দুটির এখন আর অস্থিত নেই। এছাড়া বাগাতিপাড়ার দয়ারামপুরে গ্যারিসন এবং স্বর্ণলতা সিনেমা হল দুটির মধ্যে এখনও টিকে রয়েছে গ্যারিসন সিনেমা হল দুটিতে। বর্তমানে সেখানে শাকিব খান এবং বুবলি অভিনিত অহংকার সিনেমা চলছে।

বর্তমানে ছায়াবানী সিনেমা হলটি পরিচালনায় কথা শুনালেন শফিকুর রহমান শফিক। তিনি বলেন, ঈদের আগের দিনও দর্শক শূণ্য ছিল সিনেমা হলটিতে। ঈদের ছুটিতে দর্শকরা সিনেমা হল মুখি হওয়ার কারনে এবারে ব্যবসা ভাল হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, আগামী দিনে সিনেমা হলগুলোতে দর্শক নিয়ে আসা মতো প্রযোজক এবং পরিচালকরা সিনেমা তৈরী করলে বাকি সিনেমা হলগুলোও আবার চালু হবে।

স/অ