নাটকীয়তায় মোড়ানো ম্যাচে রোমাঞ্চকর জয় পাকিস্তানের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পাকিস্তানের ইনিংসে ১৫ ওভার পর্যন্ত খেলা ছিল নিউজিল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে। ৩৬ বলে প্রয়োজন ছিল ৬৭ রানের।  কিন্তু ১৬তম ওভারে ঘটল নাটক। মোহাম্মদ নওয়াজ ও হায়দার আলি কিউই স্পিনার ইশ শোধিকে এমনই তুলোধোনা করলেন যে, ম্যাচের সমীকরণই পাল্টে দিলেন তারা।

শোধির সেই ওভারে ২৫ রান সংগ্রহ করেন দুই পাকিস্তানি ব্যাটার। ফলে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৩০ বলে ৪২ রানের।

যা তিন বল বাকি থাকতেই পার করে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে পাকিস্তান। ফলে ৫ উইকেটে নিউজিল্যান্ড হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জয় করেছে বাবর আজমের দল।

ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় পাকিস্তান।

কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ৩৮ বলে ৫৯ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান তুলতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড।

১৬৪ রানের তাড়ায় পাওয়ার প্লে থেকে ১ উইকেটে ৩৩ রান তুলতে পারে পাকিস্তান। ৫ম ওভারে অধিনায়ক বাবর আজমকে ফিরিয়ে দিয়ে ২৯ রানের জুটি ভাঙেন মাইকেল ব্রাসওয়েল।

ব্রাসওয়েলের করা দ্বিতীয় ডেলিভারিটি স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন বাবর। ক্যাচ লুফে নেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ফাইনালে বাবরের ব্যাট ছুঁয়ে এসেছে ১৪ বলে ১৫ রান।

বাবরের পর ওয়ানডাউনে নেমে ধরে খেলতে থাকেন শান মাসুদ। যে কারণে ১০ ওভার পর্যন্ত আর কোনো বিপদ না ঘটলেও রানের গতি পায়নি তেমন।

১১তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে শান মাসুদকে আউট করে দেন ব্রাসওয়েল।  তার ব্যাট থেকে এসেছে ২১ বলে ১৯ রান। পরের ওভারেই কিপার-ব্যাটার রিজওয়ানকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান টিম সাউদি। চার বাউন্ডারিতে ২৯ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেছেন এ ওপেনার।

১৬তম ওভারের ৫ম বলে আউট হয়ে যান হায়দার আলি। টিম সাউদির ডেলিভারিতে ব্যাট চালান হায়দার আলি। টাইমিং হয়নি তার। স্কয়ার লেগে ক্যাম্পবেলের হাতে ধরা পড়েন তিনি।  সাজঘরে ফেরার আগে ১৫ বলে ৩১ রান করেন হায়দার।  তার এই ঝড়ো ইনিংসে ৩টি বাউন্ডারি ও ২ ছক্কার মার রয়েছে।

পরের ওভারের প্রথম বলেই আসিফ আলীকে বোল্টের ক্যাচে পরিণত করেন টিকনার। মাত্র ২ বল টিকে এক রান করেন আসিফ। ওই ওভারে শেষ বলে ছক্কা হাঁকান নওয়াজ।

এতে ১৮ বলে প্রয়োজন পড়ে ২৩ রানের। বোল্টের করা ১৮তম ওভার থেকে ১২ রান জমা হয় পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে।

জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১২ বলে ১১ রান।  হাতে ৫ উইকেট।

পেসার সাউদির করা ১৯তম ওভারে ৭ রান নিতে পারে নওয়াজ-ইফতেখার জুটি। অর্থাৎ শিরোপা জিততে শেষ ওভারে লাগে ৬ বলে ৪ রানের।

টিকনারের করা শেষ ওভারে প্রথম দুই বলে দুই রান নেন ব্যাটাররা। পরের বলে ছক্কা উড়িয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন ইফতেখার।

২২ বলে দুই বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ নওয়াজ। একটি করে বাউন্ডারি ও ছক্কায় ১৪ বলে ২৫ রানের ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলেছেন ইফতেখার।

কিউই বোলাদের পক্ষে দুর্দান্ত বল করেছেন স্পিনার মাইকেল ব্রাসওয়েল। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেছেন। আরেক স্পিনার ইশ শোধি একটি উইকেট পেলেও ছিলেন বেশ খরুচে।  ৪ ওভারে ৫৮ রান দিয়েছেন তিনি। একটি করে উইকেট পেয়েছেন টিম সাউদি ও ব্লায়ার টিকনার।

প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে দলীয় ১২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। নাসিম শাহের ডেলিভারিতে ফিন অ্যালেনকে তালুবন্দি করেন মোহাম্মদ নওয়াজ।  তিন বাউন্ডারিতে ১২ রান করেন অ্যালেন।

এর পর ব্যাট হাতে নেমে পাঁচ ওভার পর্যন্ত কোনো বিপদ ঘটতে দেননি অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে ওপেনার ডেভন কনওয়েকে ফেরালেন হারিস রউফ। ১৭ বলে ১৪ রান করেন তিনি।

৪৭ রানে ২ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এর পর গ্লেন ফিলিপকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন কেন উইলিয়ামসন।

১২তম ওভারের তৃতীয় বলে ফিলিপকেও হারান কেইন। মোহাম্মদ নওয়াজের বলে লং অনে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফিলিপ। তার ব্যাট ছুঁয়ে আসে রান ২২ বলে ২৯ রান।

১৩তম ওভারের শেষ বলে রানআউট মিস করেন নাসিম শাহ। জীবন পান মার্ক ক্যাম্পবেল। ১৫তম ওভারে গিয়ে হার মানেন উইলিয়ামসনও।

শাদাবের ওভারের ৫ম ডেলিভারিটি শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কিউই অধিনায়ক। উইলিয়ামসনের আউটের পর বাকিটা সময় তেমন রান জমা করতে পারেনি কিউই ব্যাটাররা।

১৯তম ওভারে ২ উইকেট হারায় কিউইরা। ২৫ রানে ব্যাট করতে থাকা ক্যাম্পবেলকে ফেরান নাসিম শাহ। জিমি নিশাম রান আউট করেন কিপার রিজওয়ান। ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন নিশান।

শেষ ওভার থেকে নিউজিল্যান্ড জমা করে মাত্র ৪ রান। ইশ শোধিকে ২ রানে ফেরান হারিস রউফ।

পাকিস্তানের পক্ষে ৩৮ ও ২২ রান দিয়ে সমান দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন যথাক্রমে নাসিম শাহ ও হারিস রউফ। একটি করে উইকেট পেয়েছেন শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজ। সূত্র: যুগান্তর